দেশের জ্বালানি সংকটে সহযোগিতা করবে ব্রুনাই

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ২৩:১৫; আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ০০:৪৯

ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহর

দেশের জ্বালানি সংকটে সহযোগিতা করবে ব্রুনাই। গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি পণ্য সরবরাহে সহযোগিতা বাড়াতে আলোচনা করবে ব্রুনাই। খবর টিবিএসের।

একই সঙ্গে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে সরাসরি উড়োজাহাজ যোগাযোগ চালু, জনশক্তি রফতানি, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহে সহযোগিতা বাড়াতে একটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারকে সই করেছে বাংলাদেশ। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহর উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকে সই করেন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতি বলা হয়েছে, বাংলাদেশে জ্বালানি চাহিদা বাড়ছে। এ অঞ্চলে ব্রুনাই একটি স্থিতিশীল জ্বালানি জোগানদার। জ্বালানি খাতে বিশেষ করে এলএনজি ও অন্যান্য পেট্রোলিয়াম পণ্য বাংলাদেশে জোগানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতার ভিত্তিতে নতুন মেকানিজম খুঁজে বের করার জন্যও উভয় নেতা সম্মত হয়েছেন। এছাড়া ব্রুনাইয়ে হালাল বাণিজ্য অনেক বেশি জনপ্রিয়, সেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ হালাল বাণিজ্যে দুই দেশের সহযোগিতা আরো দৃঢ় করতে সম্মত হয়েছেন।

দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাত। দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য উভয় পক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ সম্ভাবনার থেকে অনেক কম জানিয়ে বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ব্রুনাইয়ের অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির আলোচনাকে উভয় পক্ষ স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্যও ব্রুনাইকে আহ্বান জানানো হয়েছে। এশিয়ার ধনী এ দেশ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। একই সঙ্গে ব্রুনাইয়ে খাদ্য, কৃষিসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশীদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।

ব্রুনাইয়ের উন্নয়নে বাংলাদেশীদের অবদানের কথা স্বীকার করে বলা হয়, স্বচ্ছ, নিয়মতান্ত্রিক ও সঠিকভাবে অভিবাসন প্রক্রিয়ার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি লোক নেয়ার বিষয়েও উভয় পক্ষ আলোচনা করবে বলে সম্মত হয়েছে। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে, ব্রুনাইতেও স্বাস্থ্যকর্মী প্রয়োজন। সেটি বিবেচনায় নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মী পাঠানোর বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করার প্রয়োজনীয়তা উভয় পক্ষ স্বীকার করেছে। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রুনাই তার রাজনৈতিক সমর্থন দেবে, যাতে মিয়ানমারের ওই অভিবাসীরা রাখাইনে নিরাপদে ফেরত যেতে পারে।

এদিন পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে বাংলাদেশের পক্ষে ‘এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট’ চুক্তিতে সই করেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী ও ব্রুনাইয়ের পক্ষে দেশটির অর্থমন্ত্রী দাতো সেরি সেটিয়া ড. আওয়াং হাজি মোহাম্মদ আমিন লিউ আবদুল্লাহ। ‘বাংলাদেশী জনশক্তি নিয়োগ’ বিষয়ে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও ব্রুনাইয়ের পক্ষে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদিন বিন হাজি আবদুল রহমান সই করেন। ‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম পণ্য’ সরবরাহ বিষয়েও একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই দেশ। এতে সই করেন ব্রুনাইয়ের অর্থমন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। আর তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি হলো নাবিকদের প্রশিক্ষণ, সনদ ও ওয়াচ কিপিংয়ের স্ট্যান্ডার্ডস সংক্রান্ত ১৯৭৮ সালের আন্তর্জাতিক কনভেনশনের অধীনে ইস্যুকৃত সনদের স্বীকৃতিবিষয়ক দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা। এতে সই করেন বাংলাদেশের নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও ব্রুনাইয়ের অর্থমন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ। এছাড়া বাংলাদেশে হালাল ফুড ইকোসিস্টেম প্রতিষ্ঠা ও ‘ব্রুনাই হালাল ফুড’ ব্র্যান্ডের পণ্য উৎপাদন ও প্যাকিংয়ে সহযোগিতার বিষয়ে ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ঘানিম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন এবং বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের জেইএস ট্রেডিং কোম্পানির মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়।

এর আগে বিকালে ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এরপর দুই নেতা একান্ত বৈঠকে অংশ নেন। সেই বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ব্রুনাইয়ের সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়াতে ব্রুনাইকে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন এবং এ লক্ষ্যে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সমন্বিতভাবে কাজ করবেন। আর জ্বালানির বিষয়ে আলোচনাকালে সুলতান বলকিয়াহ বলেছেন, চাহিদা অনুযায়ী তারা বাংলাদেশকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন। বাংলাদেশ থেকে আরো জনশক্তি নেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষি ও মৎস্য, সেবা প্রদান খাত, আইসিটি, মেরিনসহ বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশে অনেক মেধাবী পেশাদার কর্মী রয়েছেন। ব্রুনাই চাইলে তাদের নিতে পারে এবং নিজেদের জনশক্তির চাহিদা মেটাতে পারে।

ব্রুনাইয়ের সুলতান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসার আগে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি সেখানে রাখা দর্শনার্থী বইয়েও স্বাক্ষর করেন। গত শনিবার দুপুরে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় পৌঁছেন সুলতান বলকিয়াহ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। দেয়া হয় লালগালিচা সংবর্ধনা। পরে বিমানবন্দর থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান সুলতান। ওইদিন রাতে তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেয়া নৈশভোজে অংশ নেন। সফর শেষে আজ ঢাকা ত্যাগ করবেন ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সকাল সাড়ে ৯টায় তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এমপি।

নিউজের লিঙ্ক

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top