খাদ্যপণ্যের দুর্বল মানদণ্ড বাড়াচ্ছে রপ্তানি ঝুঁকি

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২২ ২০:৪৫; আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ০৯:৩৪

ফাইল ছবি

মান সম্মত ও স্বাস্থ্যকর শাকসবজি ও ফল রপ্তানি করা এবং রপ্তানিকৃত পণ্যে ক্ষতিকর উপাদান শনাক্ত হওয়ায় ইইউ নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকিতে দেশের খাদ্য ও কৃষিপণ্য রপ্তানি। খবর টিবিএসের।

সর্বশেষ বিধিনিষেধ এসেছে সুইডেন থেকে মুড়ি ও সুগন্ধি চিনিগুড়া চালের ওপর। বাংলাদেশের নামী দুই ব্রান্ডের চিনিগুড়া চাল রপ্তানির পর সুইডেনের ল্যাবে টেস্ট করে মাত্রাতিরিক্ত কার্বেনডাজিম ও ট্রাইসাইক্লাজল পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উৎপাদন পর্যায়ে উত্তম কৃষি চর্চার পদ্ধতি অনুসরণ না করা এবং উৎপাদন ও প্যাকেজিংসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমদানিকারক দেশ-নির্ধারিত মান যাচাই করার মতো উপযুক্ত ল্যাবরেটরি না থাকার কারণে বাংলাদেশ থেকে মানহীন পণ্য রপ্তানি হচ্ছে।

বিভিন্ন সময়ে ইইউ কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় রয়েছে হলুদের গুঁড়া, চিংড়িসহ আরও কয়েকটি খাদ্য ও কৃষিজাত পণ্য।

এবি গ্লোবাল এন্টারপ্রাইজের প্রধান আমিরুল হুদা সুইডেনে বাংলাদেশ দূতাবাসকে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা চালে কার্বেনডাজিম ও ট্রাইসাইক্লাজলের উপস্থিতির কথা জানান।

তিনি দূতাবাসকে জানান, 'বিষয়টি গোপন না করে, সমাধান নিয়ে আলোচনা করাই ভালো। অন্যথায় ইইউতে বাংলাদেশের কৃষি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে। ভারত ও পাকিস্তান একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল, কিন্তু তারা তা কাটিয়ে উঠেছে'।

এই পরিপ্রেক্ষিতে, সুইডেনে বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর এবং চ্যান্সারি প্রধান আমরীন জাহান বাংলাদেশ থেকে মুড়ি এবং চিনিগুড়া চাল আমদানি বন্ধের বিষয়টি জানিয়ে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেন।

গত বছরের জুলাইয়ে চীন বাংলাদেশ থেকে জ্যান্ত কাঁকড়া ও কুচা আমদানির পুনরায় শুরু করে। এর আগে, চালানে ক্ষতিকারক পদার্থের অতিরিক্ত উপস্থিতির কথা উল্লেখ করে দেশটি এ জাতীয় আমদানি স্থগিত করেছিল। তবে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা মান নিয়ন্ত্রণ ও সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশনের শর্ত পূরণ করতে না পারায়- বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিটি এখনও বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য এবং হিমায়িত খাবার আমদানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়নি।

গতবছর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া চানাচুরে ক্ষতিকর আলফাটক্সিন পায় জাপান। চাষ করা মাছ রপ্তানি নিষিদ্ধ করে রেখেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবও।

রপ্তানিকারকরা আশঙ্কা করছেন, ক্ষতিকর পদার্থের উপস্থিতি অব্যাহত থাকলে ইইউ বাংলাদেশের সব খাদ্য ও কৃষি পণ্যের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে।

কৃষি মন্ত্রণালয় কৃষি পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে ২০২০ সালে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের শর্তের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উত্তম কৃষি চর্চা নীতি প্রণয়ন করেছে। তবে এটি এখনও মাঠ পর্যায়ে কার্যকর হয়নি।

এছাড়া বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের কোনো খাদ্য পরীক্ষাগার না থাকায়- শাকসবজিসহ অনেক রপ্তানি পণ্য রপ্তানি গন্তব্যে পরীক্ষার পর নিম্নমানের পাওয়া যায়।

ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রেতাদের কৃষি ও খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে উৎপাদন থেকে পরিবহন পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে সার্টিফিকেশনের প্রয়োজন হয়, যা বাংলাদেশে নেই। ফলে বাংলাদেশ খাদ্য ও কৃষিপণ্য রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারছে না।

বাংলাদেশের বহুজাতিক ভোগ্যপণ্য কোম্পানি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বিদেশে যখন বাংলাদেশি হলুদের মধ্যে লেড (সীসা) পাওয়া গেল, তখন আমরা জানতামই না যে হলুদে লেড থাকতে পারে। 'তখন থেকে আমরা এটা নিয়ে কাজ করেছি, এটা ঠিক করেছি। কিন্তু, বাংলাদেশে এখনও লেড টেস্ট করার সুযোগ নেই।'

হলুদে সীসার মতো মুড়ি ও চিনিগুড়া চালে পাওয়া ক্ষতিকর রাসায়নিকের বিষয়েও রপ্তানিকারকরা জানতেন না বলে ধারণা করছেন কামরুজ্জামান কামাল। আর এজন্য উত্তম কৃষি চর্চা নিশ্চিত করার কোনো উদ্যোগ না থাকাটাই প্রধান কারণ বলে মনে করেন তিনি।

'দেশে সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের সিঙ্গাপুরের মতো তৃতীয় দেশ থেকে পরীক্ষা করাতে হয়। আমাদের শাকসবজি পার্শ্ববর্তী দেশের পরিচয়েও রপ্তানি করতে হচ্ছে'- যোগ করেন তিনি।

স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা পারভেজ সাইফুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, চিনিগুড়া চাল ও মুড়িতে পাওয়া রেসিডিউগুলো মাটি থেকে পণ্যের মধ্যে আসতে পারে। এখানে সরাসরি এগুলো ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, 'মাঝেমধ্যে দু-একটি চালানের ক্ষেত্রে– আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট এবং ইউরোপের পরীক্ষার রেজাল্টের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য হয়। সেটা ইমপোর্টিং কান্ট্রিং জানে। যে কারণে কোন সমস্যা নেই। কারণ এগুলোতে আমাদের কোন হাত থাকে না। যে কারণে ঐদেশে রপ্তানিতে কোন বাধা নেই'।

বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক মো. আবদুল আলিম জানান, কার্বেনডাজিম ও ট্রাইসাইক্লাজল হচ্ছে কীটনাশক।

'এগুলো খাদ্যে থাকার সুযোগ কম। তারপরও এমনটা ঘটে থাকলে আমাদের পরীক্ষানিরীক্ষা করে দেখতে হবে। এসব কীটনাশকের উৎস জানতে হবে। তার আগে এটা কেন ঘটলো তা বলা যাচ্ছে না' টিবিএসকে বলেন তিনি।

২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি থেকে ১০০ কোটি ডলারের বেশি আয় হয়েছে।

বিদেশের বাজারে পাঠানো কৃষিপণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকার শ্যামপুরে একটি কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউস রয়েছে। এই স্থাপনায় একটি আধুনিক ল্যাব থাকলেও, জনবল সংকটে ল্যাবের মান নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হচ্ছে।

নিউজের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top