শহরের খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছাড়াল পল্লী এলাকাকে

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২২ ২২:১৮; আপডেট: ১৯ মে ২০২৪ ১৪:৫১

ছবি: সংগৃহিত

খাদ্যপণ্য বেশী গ্রামাঞ্চলে উৎপাদন হলেও খাদ্যে মূল্যস্ফীতি বেশী গ্রামাঞ্চলেই। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে গত মাসে শহরাঞ্চলের খাদ্যে মূল্যস্ফীতি গ্রামাঞ্চলের খাদ্যে মূল্যস্ফীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। খবর টিবিএসের।

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারোবাড়ি বাজারের আড়তদার নতুন আসা বিআর-৪৯ জাতের ধান কিনছেন ১১০০ থেকে ১১৫০ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে। আর বৈশাখ মাসে ফলন হওয়া ধান খুব একটা পাওয়া না গেলেও দাম হাঁকা হচ্ছে মণপ্রতি ১৪৬০ থেকে ১৪৭০ টাকা।

আমন ধান কাটার মওসুম শুরু হতে না হতেই ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ বেশ কিছু জেলায় ধানের দাম কমেছে প্রায় ২৩ শতাংশ।

যদিও বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে। ধানের দাম বৃদ্ধির সুবাদে মোটা ও মাঝারি মানের চালের দামও কমছে।

গ্রামীণ পরিবারগুলোর মোট ব্যয়ের এক-চতুর্থাংশের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে চাল কেনায়। আর আগাম ধানের সুবাদে চালের দাম কমে আসার প্রভাবে কমেছে গ্রামীণ পর্যায়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতিও।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, অক্টোবর মাসে পল্লী অঞ্চলে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ৮.৩৮ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ব্যাপক হারে বেড়ে ৯.৯৮ শতাংশে উঠেছিল। দুই মাসের ব্যবধানে পল্লীতে খাবারের মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে ১.৬ শতাংশীয় পয়েন্ট।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ধান, চাল থেকে শুরু করে সবজি, মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবার গ্রামে উৎপাদন হলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি শহরেই তুলনামূলক কম থাকে।

২০২১ সালের জুলাইয়ের পর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত পল্লী এলাকায় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির হার উল্লেখযোগ্যহারে বেশি ছিল। কোন কোন মাসে পল্লী ও শহরে মূল্যবৃদ্ধির হারের ব্যবধান দুই শতাংশও ছাড়িয়ে গেছে। দুই বছরের বেশি ব্যবধানে এই প্রথম শহরের খাদ্য মূল্যস্ফীতি পল্লী এলাকাকে ছাড়িয়ে গেছে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন বলছে, গত মাসে পল্লী এলাকায় খাদ্যপণ্যে ৮.৩৮% মূল্যস্ফীতির বিপরীতে শহরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮.৭৫%। এ হিসাবে শহরে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ০.৩৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি ছিল।

বাজারে নতুন চাল আসা শুরু হওয়ার পাশাপাশি শীতের সবজির উৎপাদন পল্লী এলাকায় মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাছাড়া দরিদ্রদের জন্য ১৫ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির পাশাপাশি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রেয়াতী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির কর্মসূচী পল্লী এলাকায় সম্প্রসারণ করায় গ্রামীণ মানুষকে বেশি দামে বাজার থেকে খুব বেশি খাবার কিনতে হচ্ছে না বলেও তারা মনে করেন।

অবশ্য খাদ্যপণ্যে বিদ্যমান আট শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ কঠিন করে দিচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

আগামীতে পণ্যের দাম আরও না কমা পর্যন্ত রেয়াতী মূল্যে খাবার সরবরাহ অব্যাহত রাখারও পরামর্শ তাদের।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান টিবিএসকে বলেন, প্রায় ১০ শতাংশ থেকে গ্রামে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি দুই মাসে বেশ কিছুটা কমেছে, এটা আশাব্যঞ্জক। তবে সমস্যার কথা হলো একই সময়ে গ্রামে খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৯৮ শতাংশে উঠেছে।
নতুন ফসল আসায় পল্লীর অনেকেরই হয়ত চাল বা সবজি কিনতে বাজারে যেতে হচ্ছে না। চাহিদা কমে আসার সুবাদে হয়ত দামও কমেছে। এ অবস্থায় অন্যান্য পণ্যের দাম বেড়ে গেলে মানুষের স্বস্তির জায়গা থাকে না।

তিনি আরও বলেন, হার সামান্য কমলেও আট শতাংশের বেশি মূল্যস্ফীতির মানে দাঁড়াচ্ছে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আট শতাংশ বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। মূল্যস্ফীতি পাঁচ শতাংশের ঘরে না আসলে মানষের স্বস্তি আসবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেনের কাছে জানতে চাইলে টিবিএসকে বলেন, গ্রামে উৎপাদন হলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি সেখানেই বেশি হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, একই গ্রামে সব ধরনের খাদ্য উৎপাদন না হওয়ায় কিছু খাদ্য অন্যান্য এলাকা থেকে বাজারে আসে। আবার অধিকাংশ সময়ে বিভিন্ন গ্রামের বাজারে চাল আসে শহর বা দূরের কোন মিল থেকে। পল্লীতে রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণেও খাবারের দাম বেড়ে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বগুড়ার সবচেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হয় নন্দীগ্রাম উপজেলায়। উপজেলার থালতা মাঝগ্রামের বাসিন্দা বরকত হোসেন জানান, এখন আমন ধান ৭৫০ টাকা থেকে ৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর এ সময় রোপা আমন ধানের মূল্য ছিল ৬৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা মণ। গত বছরের তুলনায় এবার ধানের দাম কিছুটা বেশি। তবে বোরো ধানের তুলনায় নতুন ধানের দাম অনেক কম।

জেলার বিহার বনগ্রামের খুচরা ব্যবসায়ী ফজলু মিয়া জানান, শীতের সবজির দাম কখনও বাড়ে আবার কখনও কমে যায়। প্রতি কেজি বেগুন ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ ও শসা ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

অবশ্য রাজধানীর কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে অধিকাংশ সবজিই কেজিতে দাম রাখা হচ্ছে ৮০ টাকার কাছাকাছি।

টিবিএসের প্রতিবেদনটির লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top