সংস্কারকাজে ধীরগতি, মহাসড়কে বাড়ছে যানজট

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১২ নভেম্বর ২০২২ ২০:৫০; আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২২ ২০:৫১

ছবি: সংগৃহিত

ধীরে চলো গতিতে চলছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংস্কার কাজ। ফলে মহাসড়কে দীর্ঘায়িত হচ্ছে যানজট। তবে কর্তৃপক্ষ আশা করছে, আগামী জুন নাগাদ সংস্কার কাজ সমাপ্ত হবে। খবর বণিক বার্তার।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে সম্প্রসারণ কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। উদ্বোধনের পর পরই গুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়কটি অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে নাজুক হয়ে পড়ে। বাধ্য হয়ে সড়কটি স্থায়ী মেরামতকাজের জন্য একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শুরু হয় সংস্কার প্রকল্পের কাজ। কিন্তু সংস্কারকাজে ধীরগতির কারণে সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে। প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট হচ্ছে এ মহাসড়কে।

১৯২ কিলোমিটার মহাসড়কটির দ্বিগুণ পরিমাণ অর্থাৎ ৩৮৪ কিলোমিটার চার লেন সংস্কার করতে কার্যাদেশ দেয়া হয় দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। কার্যাদেশ পাওয়ার পর প্রথম বছর মূল সংস্কার কাজ এবং বাকি তিন বছর সড়কটি দেখভাল করবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তবে কাজ শুরুর ১১ মাসে সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশেরও কম। এজন্য আগামী জুনের মধ্যে বাকি ৫০ শতাংশ সংস্কারকাজ সম্পন্ন করতে চায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি, যা সম্ভব নয় বলে মনে করছে খোদ সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। যানজটও দীর্ঘায়িত হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের উদ্যোগ হিসেবে সওজ অধিদপ্তর চার বছরের জন্য পারফরম্যান্স বেজড অপারেশন ও দৃঢ়করণ নামের প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। এ প্রকল্পের অধীনে দেশে সর্বপ্রথম পলিমার মডিফায়েড বিটুমিন (পিএমবি) ব্যবহার করা হচ্ছে। সাধারণ বিটুমিন অতিরিক্ত ভার বহনে সক্ষম না হওয়ায় ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষায়িত বিটুমিন। সাধারণ বিটুমিনের চেয়েও অধিক স্থিতিস্থাপক হওয়ায় ভারী যানবাহনের চাপে ডেবে গেলেও পুনরায় আগের অবস্থানে ফিরে আসে সড়ক। এছাড়া নতুন প্রযুক্তির এ বিটুমিনে ব্যস্ত সড়কের রাটিংও কম হয়। পিএমবি বিটুমিনের কারণে মেরামতকাজ শেষের পর অন্তত ৪ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ রাখায় প্রকল্প বাস্তবায়নকালে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। প্রতিদিন এ সড়কের কোনো না কোনো অংশে দীর্ঘ যানজট লেগেই আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (কুমিল্লা) বণিক বার্তাকে বলেন, প্রকল্পের কাজের ধীরগতির বিষয়টি সঠিক নয়। শর্ত অনুযায়ী কাজ শেষ করতে হলে ব্যস্ত সড়কটিতে সময়ক্ষেপণ হয়। তাছাড়া বর্ষা মৌসুমে কাজের কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। চলতি শুষ্ক মৌসুমে কাজের অগ্রগতি আগের তুলনায় বাড়বে। আশা করি আগামী জুন মাসের মধ্যে কুমিল্লা জোনের অধীনে থাকা বাকি অর্ধেক কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গিয়েছে, চট্টগ্রামের সিটি গেট থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে ৩৮৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। বর্তমানে এ প্রকল্পের ফেনীর ধুমঘাট ব্রিজ থেকে কাঁচপুর ব্রিজ পর্যন্ত উভয় পাশে ২৫০ কিলোমিটার মেরামত করছে মেসার্স স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড। ৫০৩ কোটি টাকার চুক্তিতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করলেও সর্বশেষ অক্টোবর পর্যন্ত কাজ করেছে মাত্র ৪৮ শতাংশ। এছাড়া চট্টগ্রাম অংশের উভয় পাশে ১৩২ কিলোমিটার সড়ক (আট কিলোমিটার ঢালাই সড়ক) মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে মেসার্স তাহের ব্রাদার্স পাচ্ছে ২৯০ কোটি টাকা। জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মেরামতকাজের ৪৫ শতাংশ শেষ করতে পেরেছে এ প্রতিষ্ঠানটি। নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে প্রকল্পের ৫০ শতাংশ কাজও শেষ করতে না পারায় আগামী জুনের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে সওজ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।

সওজ বিভাগের দেয়া তথ্যানুসারে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সবচেয়ে বেশি খানাখন্দ রয়েছে চট্টগ্রাম অংশে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তমুখী ভারী যানবাহনের কারণে ওই অংশের সড়কের পেভমেন্ট উঠে যাওয়া, উঁচু-নিচু হয়ে যাওয়ার কারণে যানবাহনের গতি কমে যাওয়া ছাড়াও দুর্ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রামের সিটি গেট থেকে মিরসরাই পর্যন্ত প্রতিটি বাজারের উভয় পাশে মহাসড়কটির বিভিন্ন অংশে রয়েছে খানাখন্দ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাজুক ভাটিয়ারী, সীতাকুণ্ডু, মাদামবিবির হাট, কুমিরা, বাড়বকুণ্ডু এলাকা। মিরসরাই উপজেলার বড় দারোগার হাট থেকে ধুমঘাট ব্রিজ পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের উভয় পাশে ভাঙাচোরা গর্ত তৈরি ছাড়াও পেভমেন্ট ডেবে যাওয়ার পরিমাণ বেশি। সংস্কার বিলম্বিত হওয়ায় বেড়েছে যানজটও। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ওজন স্কেলের কারণে ভারী যানবাহন সীমিত থাকলেও সড়কটির বিভিন্ন অংশ নাজুক হয়ে পড়েছে।

অপরদিকে কুমিল্লা অংশের সবচেয়ে বেশি খানাখন্দ রয়েছে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন অংশ, ফেনীর মহিপাল, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। এসব এলাকায় সড়কের পেভমেন্ট ডেবে যাওয়ার পাশাপাশি গর্তের কারণে বর্ষা মৌসুমে সড়কে পানি জমে। এতে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী ভারী যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়েছে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে সংস্কারকাজ শুরু হলেও বর্ষা মৌসুমের কারণে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

সওজ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, ২০১৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্প শেষ হওয়ার পর অল্পদিনের মধ্যে সড়কটির বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি, ডেবে যাওয়া ও পেভমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। প্রাক্কলনের চেয়েও বেশি যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কটি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন সওজ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এজন্য সড়কটি মেরামতে মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শুরুর পর অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে মেরামতকাজও বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই নির্ধারিত পরিকল্পনামতো কাজ করতে না পারায় সাড়ে ১০ মাসে অগ্রগতি ৫০ শতাংশ পার হয়নি বলে মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সওজ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী পিন্টু চাকমা বণিক বার্তাকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের হার দেশের যেকোনো মহাসড়কের তুলনায় বেশি। যার কারণে স্থায়ী মেরামতকাজ চলার সময় যানজট বেশি হয়। এতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কিছুই করার থাকে না। বর্ষা মৌসুমের কারণে কাজ শুরুর প্রথমদিকে অগ্রগতি হয়েছে কম। বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ায় বাকি কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। আগামী জুনে পুরো কাজ শেষের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বণিক বার্তার প্রতিবেদনটির লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top