জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস

ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে ৪৩ শতাংশ

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৯ জানুয়ারী ২০২৩ ০০:১০; আপডেট: ৯ জানুয়ারী ২০২৩ ০০:১২

ছবি : শেয়ার বিজ

চলতি অর্থবছরের ২৫ জুলাই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে শুরু করা হয় লোডশেডিং। যদিও এর আগে থেকেই লোডশেডিং শুরু হয়েছিল। মূলত বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সবররাহ কমিয়ে দেয়া এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে জ্বালানি তেল আমদানি কমানোর প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ খাতে। বন্ধ করে দেয়া হয় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। এর প্রভাবে গত ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে প্রায় ৪৩ শতাংশ। এতে অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে লোডশেডিং। খবর দৈনিক শেয়ার বিজের। 

যদিও সংকট মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়। রাষ্ট্রায়ত্ত সব প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের কর্মঘণ্টা কমিয়ে আনা হয়। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নামার প্রভাব ঠেকানো যায়নি। জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে লোডশেডিংয়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছর প্রতি মাসেই কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। গত অর্থবছর জুলাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৭২৩ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা, আগস্টে ৭৯০, সেপ্টেম্বরে ৭৮৯, অক্টোবরে ৭৬৫, নভেম্বরে ৫৫৩ ও ডিসেম্বরে ৫৩১ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ ওই অর্থবছর প্রথম ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল চার হাজার ১৫১ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা।

এদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৪০ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা, আগস্টে ৪৯৭, সেপ্টেম্বরে ৪২৬, অক্টোবরে ৪৫৮, নভেম্বরে ৩০৮ ও ডিসেম্বরে ২৫০ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর প্রথম ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ কমে দাঁড়ায় দুই হাজার ৩৭৯ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ হিসাবে গত ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমেছে এক হাজার ৭৭২ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ৪২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।

যদিও চলতি অর্থবছরের শুরুতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে বলেই প্রক্ষেপণ করেছিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ সময় জুলাইয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছিল ৮০৩ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা, আগস্টে ৮৫৫, সেপ্টেম্বরে ৮৫৮, অক্টোবরে ৮২১, নভেম্বরে ৫৯৪ ও ডিসেম্বরে ৫৭১ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। অর্থাৎ চলতি অর্থবছর প্রথম ছয় মাসে বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল চার হাজার ৪৯২ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা। এ হিসাবে গত ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয়েছে দুই হাজার ১১৩ কোটি কিলোওয়াট ঘণ্টা বা ৪৭ দশমিক ০৩ শতাংশ।

সূত্রমতে, বর্তমানে দেশের সব গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে চালাতে দৈনিক গ্যাস প্রয়োজন দুই হাজার ২৫২ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ)। তবে বিদ্যুৎ খাতে গত অর্থবছর গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করা হতো। যদিও চলতি অর্থবছর তা কমিয়ে গড়ে ৮৫০ থেকে ৯৫০ এমএমসিএফ সরবরাহ করা হয়েছে। এতে গ্যাসচালিত বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ রাখতে হয়েছে। বেসরকারি খাতের অন্যতম বৃহৎ সামিট মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি টানা চার মাসের বেশি বন্ধ ছিল। সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য কেন্দ্রেরও একই ধরনের অবস্থা।

এদিকে বাংলাদেশ তেল-গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, সারাদেশে বর্তমানে দিনে গ্যাসের চাহিদা ৩৭০ কোটি ঘনফুট। গত অর্থবছর সাধারণত গড়ে ৩০০ কোটি ঘনফুটের মতো সরবরাহ করা হয়। তবে এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) না কেনায় তা চলতি অর্থবছর কমে ২৫০ কোটি ঘনফুটে নেমে আসে। এলএনজির দাম স্পট মার্কেটে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় সেটির আমদানি কমিয়ে দেয়া হয়। তবে পরে দাম কমলেও ডলার সংকটে এলএনজি আমদানি বাড়ানো যায়নি।

গত জুলাইয়ে হঠাৎ দেশব্যাপী লোডশেডিং শুরু হলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, ‘গ্যাস স্বল্পতার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন পুনরায় স্বাভাবিক হবে।’ কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্য ও সরবরাহ বিঘœ অন্যান্য সব দেশের মতো আমাদেরও সমস্যায় ফেলেছে। এ পরিস্থিতিতে আপনাদের সাময়িক অসুবিধার জন্য আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।’

যদিও বলা হয়েছিল সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে, তবে তেমনটি হয়নি। জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, মূলত গ্যাস ও জ্বালানি তেল সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ রাখতে হয়েছে। এতে পিডিবির কিছু করার ছিল না।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা সাড়ে ২২ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। অথচ ১৪ হাজার মেগাওয়াটও উৎপাদন হয় না। চাহিদা না থাকায় বসিয়ে রাখতে হয় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবে জ্বালানি সংকটে চলতি অর্থবছর বিদ্যুৎকেন্দ্রের বসে থাকার হার অনেকটাই বেড়েছে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top