প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসবে পর্যবেক্ষক মিশন

নির্বাচনের আগে ইইউ পাঠাচ্ছে অনুসন্ধানী দল

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৯ মে ২০২৩ ১৪:৩২; আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ০৭:১১

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) একটি অনুসন্ধানী দল পাঠাচ্ছে। পর্যবেক্ষক পাঠানোর জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। আগামী জুলাইতে অনুসন্ধানী দলটি বাংলাদেশে আসতে পারে।

ইইউর অনুসন্ধানী দলটি সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ, এনজিও এবং বিদেশী কূটনীতিকদের সাথে আলোচনা করবে। এই আলোচনার পর দলটি ইইউর হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বরলিকে প্রতিবেদন দেবে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বরলি সিদ্ধান্ত নেবেন চলতি বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউর পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন বাংলাদেশে পাঠানো হবে কি না।

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ইইউ সবচেয়ে বড় নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল পাঠিয়ে থাকে। সর্বশেষ ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে ইইউ পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠিয়েছিল। নির্বাচনটি সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে টানা তিন মেয়াদ পূর্তি করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও ইইউ পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল।

কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট নির্বাচন বয়কট করলে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর সিদ্ধান্ত থেকে ইইউ সরে আসে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট একতরফাভাবে জিতে যায়। এরপর বাজেট স্বল্পতার কারণ দেখিয়ে ২০১৮ সালের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানো থেকে বিরত থাকে ইইউ। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলে। সর্বশেষ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।

সম্প্রতি সরকার ও বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইলি আগামী জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। তবে তিনি এ জন্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তার মতে, একতরফা নির্বাচন হলে পর্যবেক্ষক পাঠানোর কোনো মানে হয় না।

এ দিকে ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ পশ্চিমা দেশগুলো সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বললেও নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করছে না। আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। তবে বিএনপি এখনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে অটল রয়েছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে আলাপকালে আগামী জাতীয় নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। গত রোববার ব্রিটেনে কমনওয়েলথের সেক্রেটারি জেনারেল পেট্রেসিয়া স্কটল্যান্ডের সাথে আলাপকালে একই আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনও বিদেশী পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানিয়েছে।

নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানোর লিখিত নিশ্চয়তা চেয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ইইউ দূতাবাস পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠায়। সম্প্রতি এ ব্যাপারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের সাথে ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইলির ইতিবাচক আলোচনা হয়। এর পরই ইইউ পর্যবেক্ষক মিশনকে স্বাগত জানিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে চিঠি দেয়া হয়।
ইইউ তিন ধাপে পর্যবেক্ষক মিশন পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। নির্বাচনের ছয় মাস আগে পাঠানো হয় অনুসন্ধানী দল। নির্বাচনের দুই মাস আগে পাঠানো হয় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষক দল।

আর নির্বাচনকালীন পাঠানো হয় মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষক দল, যারা স্থানীয়দের সহায়তায় মূল কাজটি করেন। নির্বাচনের পর পর্যবেক্ষক মিশনের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। পরবর্তী সময়ে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের দেয়া হয় চূড়ান্ত প্রতিবেদন। ইইউ পর্যবেক্ষক মিশনের পর্যবেক্ষণ ও প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ে গুরুত্বের সাথে নেয়া হয়।

২০০৮ সালের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বাংলাদেশকে বেছে নেয়ার কারণ সম্পর্কে তৎকালীন ইইউ পর্যবেক্ষক মিশনের প্রধান আলেক্সজান্ডার গ্রাফ লামসডোফ বলেছিলেন- প্রথমত জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ একটি বড় দেশ।

দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ ইইউর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের একটি বড় বাজার রয়েছে ইইউভুক্ত দেশগুলোতে। তৃতীয়ত, ইইউর বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। সর্বোপরি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসাবে বাংলাদেশ ইইউর কাছে গুরুত্বপূর্ণ।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top