তাপপ্রবাহে বাড়ছে রোগবালাই, হিট স্ট্রোকে ঘটছে মৃত্যু

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৪৭; আপডেট: ৬ মে ২০২৪ ১০:০৭

- ছবি - ইন্টারনেট

দেশের একটি বড় অংশজুড়ে বিরাজ করছে তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে অস্থির হয়ে উঠেছে জনজীবন। টানা কয়েক দিন ধরে চলা এই অবস্থা থেকে আপাতত মুক্তি মিলছে না বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। চলতি মাস পুরোটাজুড়েই গরমের এই দাপট থাকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।

গরমের এই তীব্রতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোগ-বালাই। প্রচণ্ড গরমে ডায়ারিয়া, পেটের পীড়া, ঠান্ডা, জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতা হচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এতে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। শনিবার (২০ এপ্রিল) এক দিনেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় হিট স্ট্রোকে অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

শনিবার রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি মৌসুমে রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। অন্যদিকে যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এটিও চলতি বছর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড।

আজ তাপমাত্রায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চুয়াডাঙ্গা। এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া মোংলায় ৪১ দশমিক ৭, ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৬, খুলনায় ৪১ দশমিক ২, আরিচা, ফরিদপুর ও গোপালগঞ্জে ৪০ দশমিক ৮, সাতক্ষীরায় ৪০ দশমিক ৩ ও টাঙ্গাইলে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা আগের রেকর্ড ভাঙছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা অতীতের সব রেকর্ড ভাঙতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া এমন থাকতে পারে আগামী ১০ দিন পর্যন্ত। এমনকি তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি ছাড়াতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা পরবর্তী ১০ দিন পর্যন্ত আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারি। তাতে তাপমাত্রা কমার কোনো লক্ষণ নেই। আজকে একসঙ্গে নয়টি অঞ্চলে তাপমাত্রা যে ৪০ ডিগ্রির উপরে উঠেছে, এর আগে কবে এমন উঠেছিল কি না তা এখনই বলা সম্ভব না।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু তাপপ্রবাহ, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকে আবহাওয়া অধিদফতর। সে হিসেবে দেশের বড় একটি অংশজুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে।

তাপপ্রবাহের কারণে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগামীকাল শেষ হওয়া এই সতর্কতার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর খবর আসছে। শনিবার চট্টগ্রামে দুইজন, পাবনা ও চুয়াডাঙ্গায় একজন করে মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

হিট স্ট্রোক থেকে বাঁচতে সবাইকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, গরমের সময়ের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিট স্ট্রোক। চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে ঘাম বন্ধ হয়ে যায় এবং আক্রান্ত ব্যক্তি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, তাকে হিট স্ট্রোক বলে।

শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে ভোগেন যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার বা হার্টের রোগী, স্ট্রোক বা ক্যানসারজনিত রোগে যারা ভোগেন, এমনকি যে কোনো কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেন, গরমের দিনে কিছু সতর্কতা মেনে চললে হিট স্ট্রোকের বিপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়। প্রচুর পানি ও অন্যান্য তরল পান করতে হবে। গরমে ঘামের সঙ্গে পানি ও লবণ দুইই বের হয়ে যায়। তাই পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণযুক্ত পানীয় যেমন-খাবার স্যালাইন, ফলের রস, লাচ্ছি ইত্যাদিও পান করতে হবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top