শিক্ষার্থীদের পক্ষে রাজপথে বিক্ষুব্ধ পেশাজীবীরা

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৫১; আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৫ ১৩:৩০

ছবি: সংগৃহীত

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা-হত্যা এবং নির্যাতনের প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছেন বিক্ষুব্ধ পেশাজীবীরা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে নানা ব্যানারে পেশাজীবীরা এসব ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, গবেষক, স্থপতি। এ ছাড়া বিভিন্ন সংগঠন এবং শিল্পী সমাজও ছিল মাঠে।

গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন চিকিৎসকরা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে ‘সর্বস্তরের চিকিৎসক ও মেডিকেল-ডেন্টাল শিক্ষার্থীবৃন্দ’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এ সময় চিকিৎসকরা শিক্ষার্থীদের ঢালাও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ করেন এবং অনতিবিলম্বে তাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর প্রতিবাদ জানান তারা।

‘আমার ভাই মরল কেন? জবাব চাই জবাব চাই’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘দালালি না রাজপথ?, রাজপথ রাজপথ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। বক্তব্যে বিক্ষোভকারী চিকিৎসকরা ডা. সজীবকে হত্যা, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্রছাত্রীদের ওপর পুলিশ-ছাত্রলীগের আক্রমণ এবং গুলি চালানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি সব শ্রেণিপেশার মানুষের অধিকার আদায়, নিহতের ঘটনায় বিচারের দাবি এবং অবৈধভাবে গ্রেপ্তারকৃতদের জামিনের দাবি জানান চিকিৎসকরা।

রাজধানীর বাংলামটর এলাকায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সামনে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে কোটা আন্দোলন ঘিরে গ্রেপ্তার ও নিপীড়নের প্রতিবাদ জানায় বিক্ষুব্ধ কবি-লেখক সমাজ। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন গীতিকার শহীদুল্লাহ ফরায়েজী, অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, কবি টোকন ঠাকুর, কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন, কিংকর আহসান, কবি ইমরান মাহফুজ, রাব্বি আহমেদ, রাসেল আহমেদ, সালমান হাবিবসহ অনেকে।

শহীদুল্লাহ ফরায়েজী বলেন, মায়ের বুক খালি করে সত্যকে বিসর্জন দিয়ে মিথ্যা দাপটের জন্য মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে সাম্যের জন্য, মানবিক মর্যাদা রক্ষার জন্য, প্রতিটি মানুষের ন্যায়বিচার রক্ষার জন্য।

জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত, সঠিক বিচারের দাবি করেছে ‘গণহত্যা ও নিপীড়নবিরোধী শিল্পী সমাজ’।

গতকাল ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে আবাহনী মাঠের সামনে প্রতিরোধী শিল্পীদের সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে দৃশ্যশিল্পী, আলোকচিত্রশিল্পী, পারফরম্যান্স শিল্পী, সংগীতশিল্পী, কবি, লেখক, গবেষক, স্থপতি, শিল্প সংগঠকসহ অনেক সাধারণ নাগরিক অংশ নেন। শিল্পীরা হত্যাকাণ্ডের দৃশ্য নিয়ে দীর্ঘ ক্যানভাসে লাল রঙের প্রতিবাদী চিত্র অঙ্কন করেন। এ সময় ‘আস্থা-অনাস্থা’ নামে একটি বেদনাবিধুর আবেগময় পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেন তারা।

এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ জানিয়েছে সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠী উদীচী। গান, কবিতা আর বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রতিবাদ জানান তারা। এ সময় বক্তারা বলেন, কোটা সংস্কারের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে অনাকাঙ্ক্ষিত বল প্রয়োগের ঘটনা কখনোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য কাম্য নয়। ছাত্র হত্যার দায় সরকারকে নিতে হবে।

প্রাণহানির ঘটনার প্রতীক হিসেবে সমাবেশের সামনে রাখা ছিল কফিন। সমাবেশে অংশ নেওয়া চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, খেলাঘরের প্রতিনিধিরাও বক্তব্য দেন।

শিক্ষার্থীদের মুক্তি ও কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া সংঘাতে হতাহতের ঘটনার বিচার দাবিতে বাংলামটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স ভবনের সামনে পরিকল্পনাবিদরাও মানববন্ধন করেন। তারা বলেছেন, রাষ্ট্রের সুবুদ্ধির উদয় হোক। রাষ্ট্র জনগণকে রক্ষা করুক।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও পরিকল্পনাবিদ আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, তার বিভাগের শিক্ষার্থী সাব্বিরকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গেছে। আন্দোলনে যেভাবে গুলি করা হয়েছে, তা স্বাধীন দেশে হয়েছে এবং অসংখ্য ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রের অস্বীকার করার উপায় নেই।

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক মুসলেহ উদ্দিন হাসান বলেন, চলাচল, বসবাসসহ সমাজের সব বৈষম্যের অবসান হতে হবে। শিক্ষার্থীদের প্রাণ বৃথা যাবে না।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top