কওমি মাদ্রাসা খুললে সরকার বিরোধী আন্দোলনের আশঙ্কা

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২১ ১৩:৪৩; আপডেট: ২৯ মে ২০২১ ১৩:৫২

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আগামী ১৩ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সে অনুযায়ী প্রস্তুতি শুরু করেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কওমি মাদ্রাসা খোলা হলে সরকারবিরোধী বড় ধরনের অন্দোলন করতে পারে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।

হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং গ্রেফতার নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিকল্পনা তৈরি করছে মাদ্রাসাছাত্ররা। 

সরকারের একটি বিশেষ গোয়েন্দার সংস্থার প্রতিবেদনে এসব আশঙ্কা করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে শিশু বক্তা হিসাবে পরিচিত মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী (২৬) প্রথমবারের মতো নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সংশ্লিষ্ট সূত্র মাওলানা মাদানীর স্বীকারোক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

র‌্যাব সূত্র জানায়, গত ৫ এপ্রিল গাজীপুরের গাছা থানায় দায়ের করা একটি মামলায় মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানীকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়ার জন্য র‌্যাবের পক্ষ থেকে আদালতে আবেদন জানানো হয়। গত ২৩ মে আদালত এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সে অনুযায়ী র‌্যাব-১ এর সদস্যরা বৃহস্পতিবার তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদিন তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিতে র‌্যাবের কাছে রাজি হন।

পরে শুক্রবার তিনি গাজীপুর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ নাজমুননাহারের আদালতে স্বীকারোক্তি দেন।

স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন, ‘আমি গত ১০ ফেব্রুয়ারি গাছা থানাধীন কলমেশ্বর এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে বক্তব্য দিই। সেখানে বলি, আমি মানি না রাষ্ট্রপতি, কচুর প্রধানমন্ত্রী আমি মানি না, কিসের প্রশাসনের অর্ডার, আমি কোনো অর্ডার মানি না, আমার সংবিধানে প্রধানমন্ত্রী নাই, রাষ্ট্রপতি নাই, এমপি নাই, আমি মানি না স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমার এ ধরনের বক্তব্যের কারণে বায়তুল মোকাররম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ উসকে দিয়েছে। আমি এ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে র‌্যাব সূত্র জানায়, রফিকুল ইসলাম মাদানী মোবাইল দিয়ে তার বিশেষ একটি অঙ্গের ছবি তুলে তার মোবাইলে সংরক্ষণ করেছেন। তিনি নিয়মিত পর্নোগ্রাফি সাইটে অশ্লীল ভিডিও দেখে তা উপভোগ করতেন। কোনো রাজনৈতিক সংগঠন বা রাজনৈতিক নেতার ইন্ধনে তিনি এমন বক্তব্য দেননি বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন।

র‌্যাব আরও জানায়, রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি সারা দেশে সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় তাকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিলেও তিনি শুক্রবারের আগে কোনো স্বীকারোক্তি দেননি। 

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসাবে নিজেদের পরিচয় দিলেও বর্তমানে তারা অনেকটা রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হয়েছে। গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ তারা যে নাশকতা চালিয়েছে তা বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসকে মনে করিয়ে দিয়েছে। ওই তিন দিনের নাশকতার ঘটনায় হেফাজতে ইসলামের তিন হাজার ২৮ জন এজাহারনামীয় এবং অনেককে অজ্ঞাত আসামি করে সারা দেশে ১৬৩টি মমলা হয়েছে।

এ ছাড়া ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে নাশকতার ঘটনায় তিন সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করে ৬৮টি মামলা হয়। এসব মামলায় সাম্প্রতিক সময়ে হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির নায়েবে আমির ড. আহমেদ আব্দুল কাদের, সহসভাপতি মাওলানা জুবায়ের আহমেদ, যুগ্ম মহাচিব জুনায়েদ আল হাবিব, মাওলানা মামুনুল হক, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, মুফতি শাখাওয়াত হোসাইন রাজী, মাওলানা খুরশিদ আলম কাসেমী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীসহ পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হওয়ায় অন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টি লক্ষ করা যাচ্ছে। এ অবস্থায় দেশে সব কওমি মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হলে আবাসিক ছাত্রদের মাদ্রাসায় উপস্থিতিসহ অনাবাসিক ছাত্ররা নিয়মিত মাদ্রাসায় যাতায়াত করবে। মাদ্রাসাগুলো নতুন ছাত্রভর্তি কার্যক্রম শুরু করবে। তখন হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার এবং নেতাদের মুক্তির দাবিতে সরকারবিরেধী বড় ধরনের আন্দোলন হতে পারে।

প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, বর্তমানে মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকলেও চট্টগ্রামের হাটহাজারীর দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম মাদ্রাসাসহ বড় বড় মাদ্রাসায় অনেক আবাসিক ছাত্র অবস্থান করছে। মাদ্রাসাছাত্ররা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাসহ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনা করছে। হাটহাজারী মাদ্রাসার ভেতর ও বাইরে প্রায় ৩০০ ছাত্র পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছে। তাদের কাছে দেশীয় অস্ত্রও রয়েছে। মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হলে তারা হাটহাজারী থানায় হামলা, ভাঙচুরসহ আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটাতে পারে। 

গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণ : গত ২৬ মার্চের সহিংসতায় বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রী মীর নাসিরের ছেলে মীর হেলাল ও জামায়াত নেতা নাসির উদ্দিন কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। হেফাজতে ইসলাম ফের কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলে তারা আবারো হেফাজতকে উসকানি দিয়ে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সহিংস হয়ে উঠতে পারে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, হেফাজতের নেতাদের মধ্যে মাওলানা মামুনুলের প্রভাব ও ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। মামুনুলের নারীঘটিত বিষয়টি সরকারি কারসাজি বলে মাদ্রাসা ছাত্র-শিক্ষকরা মনে করে। হাটহাজারী মাদ্রাসার আশপাশের জনসাধারণ ও মুসল্লিদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই মাদ্রাসা খুললে মামুনুলের নারীঘটিত বিষয়টি নিয়ে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকরা অন্দোলন করতে পারে।

গোয়েন্দারা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কওমি মাদ্রাসাগুলো বিত্তবানদের দান, জাকাতের অর্থ ও কোরবানির পশুর চামড়ার বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে পরিচালিত হয়। এবার মাদ্রাসা বন্ধ থাকায় কওমি মাদ্রাসাগুলো কাঙ্ক্ষিত জাকাতের টাকা তুলতে না পারায় আর্থিক সংকটে রয়েছে। এ কারণেও ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। গোয়েন্দাদের সুপারিশ, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কওমি মাদ্রাসাগুলো পুরোপুরি খুলে না দিয়ে নতুন ছাত্রভর্তির জন্য সীমিত পরিসরে দাপ্তরিক কার্যক্রমের জন্য খোলা যেতে পারে। (যুগান্তর)

 

এসএইচ 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top