জলাভূমি রক্ষায় মন্ত্রণালয় গঠনের নির্দেশ দিয়ে রায় প্রকাশ

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৯ জুলাই ২০২১ ১৫:৩৪; আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪৩

ফাইল ছবি

দেশের জলাভূমিকে জাতীয় সম্পদ ঘোষণা করে সব ধরনের জলাভূমি রক্ষা, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে পৃথক আইন এবং পৃথক মন্ত্রণালয় (জলাভূমি মন্ত্রণালয়) প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দ্রুত জলাভূমি সুরক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার ছয়টি মৌজার (পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবান্ধা এবং রতনপুর) কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে ‘সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি’ এবং ‘সোনারগাঁও ইকোনমিক জোন’ নির্মাণ কার্যক্রমকে অবৈধ ঘোষণা করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চের পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব নির্দেশনা দেওয়া হয়।

রায়ে জলাভূমিকে পাবলিক ট্রাস্ট প্রোপার্টি তথা জনগণের ন্যায় সম্পত্তি তথা জাতীয় সম্পত্তি ঘোষণা করা হয়েছে। জলাভূমি সুরক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় আইন প্রণয়ন করতে বলেছেন আদালত। একইসঙ্গে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জলাভূমি রক্ষার জন্য প্রতি দুই মাস অন্তর এক ঘণ্টার ক্লাস নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা এক রিট মামলায় সোনারগাঁও’এ ইউনিক প্রোপার্টিজের অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ অবৈধ ঘোষণা করে ছয় মাসের মধ্যে মাটি সরিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়ে রোববার (১৮ জুলাই) রাতে ১৩২ পৃষ্ঠার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

রায়ে দেশের প্লাস্টিকের ব্যাগ নিষিদ্ধ করারও নির্দেশের সঙ্গে সঙ্গে দেশের সব সড়ক-মহাসড়কে পৃথক সাইকেল লেন তৈরির করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশকে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করার মহাপরিকল্পনা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। রায়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি আইন প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি কমিশন গঠনে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি বলেও উল্লেখ করা হয়েছে ওই রায়ে।

আদালতে এই রিট মামলায় বেলার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন ফিদা এম কামাল, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মিনহাজুল হক চৌধুরী, আলী মুস্তফা খান ও সাঈদ আহমেদ কবীর। অপরপক্ষে ছিলেন মুরাদ রেজা, আহসানুল করিম, আবু তালেব প্রমুখ।

রায়ে জলাভূমি রক্ষায় ১১ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেগুলো হলো:

১. যেহেতু বাংলাদেশ রামসার কনভেনশন বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করে আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন করেছে সেহেতু উক্ত অঙ্গীকার এবং চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দ্রুত জাতীয় নীতিমালা গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আইনগত দায়িত্ব ও কর্তব্য।

২. ‘তুরাগ নদ’ রায় মোতাবেক সব জলাভূমি পাবলিক ট্রাস্ট প্রোপার্টি তথা জনগণের ন্যায় সম্পত্তি তথা জাতীয় সম্পত্তি।
৩. সব জলাভূমির সুরক্ষা, উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনার নিমিত্তে অনতিবিলম্বে পৃথক জলাভূমি মন্ত্রণালয় সৃষ্টি করা।
৪. জলাভূমি রক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনায় দ্রুত আইন প্রণয়ন।
৫. নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর, জৈনপুর, চরহিস্যা, চরভবনাথপুর, ভাটিয়াবান্দা এবং রতনপুর মৌজার কৃষি জমি, নিচু জমি এবং জলাভূমি কী পরিমাণ দখল এবং বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে তার পরিমাণ এবং ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করার জন্য পরিবেশ অধিফতর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।

৬. এই রায়ের কপি প্রাপ্তির ছয় মাসের মধ্যে উল্লিখিত ছয়টি মৌজার জায়গা পূর্বাস্থায় ফিরিয়ে আনতে পরিবেশ অধিদফতর এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে।

৭. এ ছয়টি মৌজায় মাটি ভরাটের বিষয়টি তদন্ত করে ছয় মাসের মধ্যে ক্ষতিপূরণ আদায় করে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।

৮. অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন ২০১০ এর অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার আবেদন করতে হলে আবেদন পত্রের সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র সংযুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৯. ডিজিটাল ডাটাবেজ প্রণয়নের ক্ষেত্রে এসপিএ, আরআর এসও স্যাটেলাইটের সাহায্যে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশেল সব জলাভূমির ভৌগলিক অবস্থান নির্ণয় এবং জীববৈচিত্র বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করে সব ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলার ম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে।

১০. দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতি মাসে অন্তত একদিন এক ঘণ্টার জন্য জলাভূমির প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা ও রক্ষাসহ সব বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করবে।

১১. দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যায়ে তিন মাস অন্তর অন্তর জলাভূমির ওপরে আলোচনা, সেমিনার করার ব্যবস্থা করবে।

এ ছাড়া রায়ে পরিবেশবান্ধব উন্নত দেশ গড়তে ১৪টি বিষয়ের ওপর মতামত দিয়েছে হাইকোর্ট। এ মামলাটি একটি চলমান আদেশ (Continuing Mandamus) হিসেবে অব্যাহত থাকবে বলে রায়ে বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর দফতর, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ, আইন কমিশন, জুডিশিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েকটি দফতরে এ রায়ের অনুলিপি দ্রুত পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ইউনিক প্রপার্টিজ ডেভলপমেন্ট লি. নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের পিরোজপুর, জৈনপুর, ছয়হিস্যা, চরভবনাথপুর, বাটিবান্ধা এবং রতনপুর মৌজার কৃষিজমি, জলাভূমি, মেঘনা নদীর অংশ ভরাট করে সোনারগাঁও রিসোর্ট সিটি প্রকল্প নির্মাণ করছিল। এই নির্মাণ কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণার জন্য বেলা ২০১৪ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়।

এ আবেদনের পর ২০১৪ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট প্রকল্প এলাকার মাটি বা বালি ভরাটের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। একইসঙ্গে ইতোমধ্যে ভরাটকৃত ভূমি থেকে মাটি/বালি অপসারণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর রায় দেন। ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি রোববার (১৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top