রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেবে বিএনপি

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৫ আগস্ট ২০২১ ১৪:৩৫; আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৯:২৩

ছবি: সংগৃহিত

নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনকে কেন্দ্র করে রাজপথে পুরোপুরি সক্রিয় হতে চায় বিএনপি। এ ইস্যুতে সরকারবিরোধী দলগুলো সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে চলার চিন্তা করছেন নেতারা। এর অংশ হিসাবে ইসি পুনর্গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে।

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে হবে আলোচনা। পাশাপাশি নেয়া হবে নাগরিক সমাজের মতও। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন না হলে এর প্রতিবাদে রাজপথে আন্দোলনে নামবে বিএনপি। সেখানেও রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের পাশে চায় তারা। দলের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক নেতার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা করেছে হাইকমান্ড। শিগগিরই দলীয় ফোরামে আলোচনার পর এ ব্যাপারে কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হবে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে চলমান দূরত্ব ঘোচানোরও উদ্যোগ নিচ্ছে হাইকমান্ড। বিশেষ করে জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপির) সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে চায় তারা।

ইতোমধ্যে দলের নীতিনির্ধারক ও নাগরিক সমাজের একাধিক প্রতিনিধি এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। যার বহির্প্রকাশও দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর একই মঞ্চে দেখা গেছে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতাকে। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলেও শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। জোট থেকে জামায়াতকে ছাড়ার যে আলোচনা ছিল তা থেকে দলটি পিছু হটছে বলে মনে করছেন অনেকে।

২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৫ বছর মেয়াদি কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন শপথ নেয়। সে হিসাবে তাদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ফেব্রুয়ারিতে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পাঁচজনকে নিয়ে এ ইসি গঠন করেন।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে দলের করণীয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা চাই একটি নিরপেক্ষ কমিশন। শুধু আমরা নই, দেশবাসীর চাওয়াও একই। এ দাবি আমরা আগে থেকেই জানিয়ে আসছি। তিনি বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠ নির্বাচনের পূর্ব শর্ত হলো নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন। দলীয় কমিশন হলে নির্বাচন কতটা নিরপেক্ষ হয় তা আমরা কয়েক বছর ধরে দেখছি। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও একই সুরে বলেন, সময় আছে। এখনো এ নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপির কয়েকজন নীতিনির্ধারক জানান, কোন প্রক্রিয়ায় এবার ইসি পুনর্গঠন হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে বর্তমান কমিশন যেভাবে গঠিত হয়েছিল এবারও সেই প্রক্রিয়াই অনুসরণ করা হতে পারে। নিবন্ধিত দলের সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপ, সার্চ কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশনার হিসাবে যোগ্য ব্যক্তিদের নাম আহ্বান-এসব এবারও করা হতে পারে। এমনটা ধরে নিয়েই তারা কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করছে। এজন্য প্রথমে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বৃহত্তর ঐক্যের দিকে।

এ ইস্যুতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কিভাবে মতৈক্যে পৌঁছা যায় সে চিন্তা চলছে। ইসি পুনর্গঠনের আগে নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হবে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে তাদের মত নেয়া হবে।

কমিশনারের জন্য প্রত্যেক দলের কাছে সম্ভাব্য নামের তালিকাও চাওয়া হতে পারে। যদি সার্চ কমিটি নাম চায় তাহলে সব দল আলাদাভাবে নির্বাচন কমিশনারের তালিকা জমা দেবে। তবে কয়েক ব্যক্তির নাম সব দলের তালিকায় যাতে থাকে সে ভাবনাও রয়েছে। আপাতত অনিবন্ধিত দলগুলোকে চিঠি দেয়ার কথা ভাবছে না হাইকমান্ড। তবে তাদের কাছ থেকেও নেয়া হবে মত।

জামায়াতসহ শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব ঘোচানোর উদ্যোগ : নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সক্রিয় করার চিন্তা চলছে। জোটের শরিকদের মধ্যে চলমান দূরত্ব ঘোচাতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে ২০ দলীয় জোটকে ঐক্যবদ্ধ করার ওপর জোর দিচ্ছেন তারা। এ জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী ও এলডিপির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে নানা কারণে সৃষ্টি হয়েছে দূরত্ব।

বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়ার দাবি ওঠে। বিষয়টি নিয়ে স্থায়ী কমিটিতেও আলোচনা হয়। কমিটির বেশিরভাগ সদস্য জামায়াত ছাড়ার পক্ষে মত দেন। কিন্তু দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখনও এ ব্যাপারে কোনো মত দেননি। জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারে চটজলদি সিদ্ধান্ত নেয়ার পক্ষে নন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আগে বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার অবকাশ রয়েছে বলে নীতিনির্ধারকদের জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। চেয়ারপারসনের অনীহা এবং দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা হিসাব করে আপাতত জামায়াত ছাড়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিএনপি। উলটো তাদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দলের একটি অংশ ও নাগরিক সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধি এ ব্যাপারে কাজ করছেন। তারা ইতোমধ্যে জামায়াত ও বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। এতে দুপক্ষই ইতিবাচক। সম্প্রতি বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ দুই নেতা একান্তে বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে।

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বহির্প্রকাশও দেখা যাচ্ছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতারা একে অপরকে এড়িয়ে চলছেন। জোটের বৈঠকেও অংশ নিচ্ছেন না জামায়াতের প্রতিনিধি।

কিন্তু রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারকে একই মঞ্চে দেখা যায়। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা আলোচনা। বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব ঘোচানোর ইঙ্গিত বলে মনে করছেন অনেকে।

এ বিষয়ে বিএনপির একাধিক নেতা যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি অনেকের কাছে কাকতালীয় মনে হলেও এর পেছনে নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে। অনুষ্ঠানে কারা অতিথি থাকবেন তা পূর্বনির্ধারিত ছিল। তা জানার পরও দুদলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি নিঃসন্দেহে গুরুত্ব বহন করে। তাছাড়া অনুষ্ঠানে দুই নেতার বক্তব্যও র্ছিল গুরুত্বপূর্ণ। দুজনই সরকারের সমালোচনার পাশাপাশি ঐক্যের ওপর জোর দিয়েছেন।

জানতে চাইলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড খুবই সীমিত। আমাদের জোট কেন সরকারদলীয় জোটেরও কোনো তৎপরতা নেই। তাই জোটের শরিকদের সঙ্গে আমাদের দূরত্ব আছে এমনটা সত্যি নয়।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হলে আমরা ফের শরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করব। কারও কোনো ক্ষোভ থাকলে তা মিটিয়ে জোটকে ঐক্যবদ্ধ করা হবে।
সূত্র: যুগান্তর



বিষয়: বিএনপি


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top