অ্যান্টিবডি টেস্টের সুপারিশ নেয়নি সরকার

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২০ ১৭:০৯; আপডেট: ২৬ আগস্ট ২০২০ ২২:৫১

ফাইল ছবি

বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর আক্রান্ত সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালু করা হয় দ্রুত শনাক্তকরন পদ্ধতি। বাংলাদেশ ও এ পদ্ধতির ব্যাপারে ভাবছিল বেশ কিছুদিন থেকেই।

এ বিষয়ে বিবেচনার জন্য সরকার দুটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কমিটিও গঠন করে দেয়। কমিটি সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ের মধ্যে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেনের র‌্যাপিড পরীক্ষা চালুর করলে ও তা আমলে নেয় নি সরকার।

বর্তমান সময়ে করোনা পরীক্ষার মাধ্যমে ফল পেতে সময় লাগে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা। আর র‌্যাপিড টেস্টে সময় লাগবে মাত্র ২০ থেকে ৩০ মিনিট। দেশে ৯১টি ল্যাবে আরটি–পিসিআরের মাধ্যমে করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলছে। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষার ফল পেতে সময় লাগে দ্রুত ও সহজে পরীক্ষার ফল জানতে পাশের দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে র‌্যাপিড টেস্ট করা হচ্ছে। করোনা থেকে যাঁরা সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে কি না, তা অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়। বিশেষজ্ঞরা অনেক দিন ধরে র‌্যাপিড টেস্ট চালুর বিষয়ে বলে আসছেন।

র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট শুরু করার ব্যাপারে এ মুহূর্তে কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে তিনি বলেন অ্যান্টিজেন টেস্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

র‌্যাপিড টেস্টের বিষয়ে করণীয় বিষয় ঠিক করতে এই বিষয়ে একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে গত ৯ জুলাই মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালার ওপর মতামত দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি করে। ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক লিয়াকত আলীকে সভাপতি করে গঠিত এই বিশেষজ্ঞ কমিটি ৪ আগস্ট তাদের মতামতসহ নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের দপ্তরে পাঠায়।

গত ১৮ আগস্ট নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নমুনা সম্প্রসারণ বিষয়ক একটি বৈঠক করে। বৈঠকে অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি র‌্যাপিড টেস্টের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কমিটিকে ২৩ আগস্টের মধ্যে আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে বলা হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি ২৩ আগস্ট তাদের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছে। নমুনা পরীক্ষা সম্প্রসারণ নীতিমালা কমিটির প্রধান অধ্যাপক লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জোরালোভাবে অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর সুপারিশ করেছেন। অ্যান্টিবডি পরীক্ষা এখন শুরু না করা হলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, মন্ত্রী যে কথা বলেছেন, সেটি কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে নেওয়া সিদ্ধান্ত কি না জানা নেই।

অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর পক্ষে মতামত দিয়ে প্রায় তিন মাস আগে করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড টেস্ট চালুর সুপারিশ করে। গত ৩ জুন কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনা শনাক্তে এত দিন ধরে চলা আরটি–পিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা চালুর পক্ষে মত দেয়।

সরকার কেন অ্যান্টিবডি টেস্ট করার অনুমোদন দিচ্ছে না সে বিষয়টটি বোধগম্য নয় বলে জানান, জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পরামর্শক কমিটি অ্যান্টিজেন ও অ্যান্টিবডি—দুটি পরীক্ষাই চালুর সুপারিশ করেছে। কিন্তু সরকার তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব আবদুল মান্নানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের কোন মন্তব্য পাওয়া যায় নি।

রাজধানীর ৯ শতাংশ মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিসিডিআরবি) একটি যৌথ জরিপে।

মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সঠিক তথ্য পেতে অ্যান্ডিবডি পরীক্ষা চালুর কোন বিকল্প নাই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নমুনা পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন আক্রান্তের যে সংখ্যা দেয়, প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। উপসর্গহীন অনেক রোগী আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে সুস্থও হয়ে গেছেন।

  • খবর-প্রথম আলো
    এসএইচ


বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top