আবরার হত্যার ২ বছর : সকল আসামির ফাঁসির দাবি স্বজনদের

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২১ ১৪:১২; আপডেট: ৬ মে ২০২৪ ০১:২৭

আবরার হত্যার ২ বছর : সকল আসামির ফাঁসির দাবি স্বজনদের - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যার দু’বছর পূর্ণ হলো। এখনো হত্যাকারীদের শাস্তি নিশ্চিত হয়নি। তবে আবরারের স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, হত্যকারী সকলের ফাঁসি। বৃহস্পতিবার শোক র‌্যালি, মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান আবরারের মা, বাবা, ভাই, দাদা, প্রতিবেশী ও সহপাঠীসহ স্থানীয়রা।


হত্যার দু’বছর পূর্ণের দিন সকাল ৮টার দিকে গ্রামের বাড়ি থেকে কবর স্থান পর্যন্ত এই শোক র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালি শেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের কবর জিয়ারত করেন র‌্যালিতে আংশগ্রহণকারীরা।

এ সময় অন্যদের সাথে আবরারের দাদা আব্দুল গফুর বিশ্বাস, ফুপাতো ভাই শাহিনুর আলমসহ প্রতিবেশী, স্বজন ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
এরপর বিকেলে কবর জিয়ারত করতে আসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় তারা আবরারের পরিবারের সাথেও দেখা করেন। তখন বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আবরারের কবর জিয়ারত করা হয়েছে। আর সন্ধায় ছেলের কবর জিয়ারত করেন আবরারের বাবাসহ পরিবারের স্বজনরা।

সবার দাবি ছিল একটিই, নিরাপরাধ ও বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরারের হত্যাকারী প্রত্যেকের ফাঁসি।

দু’বছরেও আলোচিত এ হত্যার বিচার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আবরারের গ্রামবাসী বলেছেন, আবরার হত্যার দুই বছর অতিবাহিত হয়ে গেলো। শুরুতে ব্যাপক আন্দোলনের মুখে আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচারের কথা বলা হলেও বিচারে তেমন অগ্রগতি হয়নি। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা ও সাম্প্রতিক ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। হত্যার সাথে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তারা।

আদালত ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে আবরার হত্যার বিচারকাজ বন্ধ ছিল। বর্তমানে মামলা চলমান রয়েছে। আগামী ২০ অক্টোবর মামলার যুক্তিতর্ক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

আবরারের দাদা আব্দুল গফুর বিশ্বাস বলেন, আমার বয়স ৯০ বছর। মৃত্যুর আগে আমি আমার নাতি আবরারের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শান্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর দেখে যেতে চাই। প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতিসহ সবাই বলেছেন যে আবরার হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শান্তি হবে। কিন্তু দুই বছর হয়ে গেলো। এখনো বিচারকাজ শেষ হয়নি। মরার আগে অন্তত নাতি হত্যার বিচার দেখে যেতে চাই।

অপর দিকে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, ছেলে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত আসামি রাব্বি তানিম, মুজতবা রাফিদ ও জিসান এখনো গ্রেফতার হয়নি। এ সময় তিনি তাদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানান। একইসাথে সকল আসামির মৃত্যুদণ্ড দাবি করেন।

এ ছাড়াও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে আবরার ফাহাদের নামফলকসহ (হলের নাম বা স্তম্ভ) একটি স্মৃতি রাখার দাবি তুলেছেন আবরারের বাবা। তিনি জানান, যেন ২০ বছর পরও ওই নামফলকের মাধ্যমে সবাই আবরারকে মনে রাখে।

আবরারের মা রোকেয়া খাতুন ছেলে হারানোর শোকে এখনো নির্বাক। আবরারের প্রসঙ্গ তুলতেই কান্না জড়িত কণ্ঠে স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘আমার আবরার কোনো দিন জোরে কথাও বলতো না। আমাকেও কখনো উচ্চস্বরে ডাকেনি। যদি আমার ছেলে উশৃঙ্খল হতো তাহলে না হয় মনকে বুঝ দিতে পারতাম। কিন্তু ওরা আমার সোনার মতো ছেলেকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। এই ব্যথা আমি মা হয়ে কী করে সহ্য করবো! আমার আবরার তো ওদের কোনো ক্ষতি করেনি। তাহলে কেন ওরা আমার আবরারকে পিটিয়ে এভাবে হত্যা করলো? আমাকে সন্তানহারা করলো!

এরপর কান্নায় ভেঙে পড়েন মা। তখন উপস্থিত সবার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরতে থাকে। সবাই নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন মায়ের দিকে। তাকে সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেন কেউ কেউ।

অপর দিকে আবরার ফাহাদ হত্যার দ্বিতীয়বার্ষিকী উপলক্ষে ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ সামাজিক মাধ্যমে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যা এরই মধ্যে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কয়েজন শিক্ষার্থী আবরারের কবর জিয়ারত শেষে নাম প্রকাশ না করে জানান, আবরার খুব নম্র ও ভদ্র ছিলেন। একইসাথে তুখোড় মেধাবীও ছিলেন। আবরারের এমন হত্যা আমাদেরকে হতবাক করে দিয়েছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। আবরারের পরিবারের সদস্যদের সাথে আমাদের দাবি, এই হত্যার সাথে যারা জড়িত দ্রুত তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে দ্রুত ফাঁসি এবং তা কার্যকর করা। যাতে দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা আর না হয়।

ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ
এ দিকে আবরার ফাহাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দুপুরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া শহরের কোর্ট স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ছিন্নমূল মানুষের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ-ভারতের চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে আবরারকে তার কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। তারা ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

আবরার ১৯৯৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গায়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে আবরের বাবা, মা ও ছোট ভাই ফায়াজ কুষ্টিয়া শহরে বসবাস করেন।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top