দুই এমপির মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাবের আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী

এ সংসদের ২৮ এমপি মারা গেছেন ২৬ জনই আওয়ামী লীগের

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:০০; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৩:২৭

- ছবি - ইন্টারনেট

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটা খুবই দুঃখজনক যে সংসদের অধিবেশন শুরুই করতে হয় শোক প্রস্তাবের মধ্য দিয়ে। আশা করা হয়েছিল এবার ব্যতিক্রম হবে, কিন্তু সেটা হয়নি। বর্তমান একাদশ সংসদের ২৮ জন সদস্য মারা গেছেন, যেখানে ২৬ জনই আওয়ামী লীগের। আর দুই জন জাতীয় পার্টির (জাপা)। এর মধ্যে কয়েক জন মহিলা সদস্যও রয়েছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় দুই সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস (নাটোর-৪) ও রেবেকা মমিনের (নেত্রকোনা-৪) মৃত্যুতে গতকাল রবিবার সংসদে আনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

এর আগে বিকাল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের ২৪তম অধিবেশন শুরু হয়। বৈঠকের শুরুতে চলতি অধিবেশনের জন্য সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন দেন স্পিকার। এরপর শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরে রেওয়াজ অনুযায়ী চলতি সংসদের সদ্য প্রয়াত দুই সদস্যের মৃত্যুতে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হয়।

আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুসকে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আব্দুল কুদ্দুস অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। নাটোর ছিল সন্ত্রাসের জায়গা। তিনি সেখানে বারবার নির্বাচিত হয়েছেন। যদিও তাকে জবরদস্তি করে হারানো হয়েছিল। তিনি জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন।

তিনি বলেন, ‘রেবেকা মমিনের সঙ্গে আমার ছাত্রজীবন থেকে পরিচয় ছিল। তিনি ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মতিউর রহমান (সাবেক ধর্মমন্ত্রী) ময়মনসিংহ থেকে নির্বাচন করতেন। কিন্তু আমরা যখন জোট করি, তিনি তার আসনটি রওশন এরশাদকে ছেড়ে দেন। তিনি অনেক বড় নেতা ছিলেন। যেই আমি তাকে বললাম জোট করব, এই সিট ছাড়তে হবে। তিনি এক মুহূর্তের জন্যও আপত্তি করেননি।’

বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীকে হারিয়েছেন উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, ‘তারা যে সংগ্রাম করে গেছেন, জেল-জুলুম-অত্যাচার সহ্য করেছেন। জাতির পিতার পাশে ছিলেন। জাতির পিতাকে হত্যার পর তারা নানা অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আমি তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের রাজনীতি জনগণের কল্যাণে। রেবেকা মমিন বা আব্দুল কুদ্দুস সব সময় জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। আমাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পে রেবেকা মমিন জমি দান করে গেছেন। এ ধরনের মানসিকতা তাদের ছিল। তাদের হারিয়েছি। এটা সত্যি কষ্টের, বারবার আমাদের শোকপ্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সরকার গঠনের পর থেকে দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমাদের উন্নয়নের ধারাটা একেবারে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছেছে। এটা সম্ভব হয়েছে অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সংসদ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন এ কারণে। আজকে যাদের হারিয়েছি এবং সেখানে নতুন যারা নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাদের কাছে আবেদন থাকবে, যে আদর্শ ও লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই স্বাধীনতার সুফল ঘরে-ঘরে পৌঁছে দেওয়াটাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

শোক প্রস্তাবের ওপর অন্যদের মধ্যে সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওয়সিকা আয়শা খান, জুনাইদ আহমেদ পলক, সাজ্জাদুর রহমান, শফিকুল ইসলাম শিমুল, আশরাফ আলী খান খসরু, আব্দুল আজিজ, মসিউর রহমান রাঙ্গা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। আলোচনা শেষে শোক প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এরপর সংসদে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মোনাজাত করা হয়।

পরে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুস ও রেবেকা মমিনের প্রতি সম্মান জানিয়ে সংসদের বৈঠক আজ সোমবার বিকাল পৌঁনে ৫টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

আরও যাদের জন্য শোক: সরকারি দলের দুই এমপি ছাড়াও সাবেক ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, সাবেক এমপি পান্না কায়সার ও মোহাম্মদ উল্লার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে সংসদ। এছাড়া সংসদ শোক জানায় বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক সিরাজুল আলম খান, কবি মোহাম্মদ রফিক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরুর স্ত্রী কামরুন্নেছা আশরাফ দীনা, আজকের কাগজ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদ, সংরক্ষিত আসনের এমপি কানিজ ফাতেমা আহমেদের পিতা কামাল উদ্দিন আহমেদ খান, কৃষিবিজ্ঞানী কাজী পেয়ারার উদ্ভাবক কাজী এম বদরুদ্দোজার মৃত্যুতে।

যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের মাউইতে ভয়াবহ দাবানল, ভারতের ওড়িশা রাজ্যে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা এবং দেশ-বিদেশে বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণ করেও সংসদ শোক জানিয়েছে।

অধিবেশন চলবে ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত :শুরু হওয়া ২৪তম অধিবেশন চলবে আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। গতকাল অধিবেশন শুরুর আগে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদের কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। তবে স্পিকার চাইলে অধিবেশনের এই মেয়াদ বাড়াতে-কমাতে পারবেন।

কার্যোপদেষ্টা কমিটির সভাপতি ও সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেন। এছাড়া বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য বেগম রওশন এরশাদ, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওবায়দুল কাদের, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, শামসুল হক টুকু, আনিসুল হক, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও নূর-ই-আলম চৌধুরী।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, শুক্র ও শনিবার ছাড়া প্রতিদিন বিকাল ৪টা ৪৫ মিনিটে অধিবেশন বসবে। বৈঠকে জানানো হয়, চলতি অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তরের জন্য ২৫টি ও অন্যান্য মন্ত্রীর জন্য ৭৩৫টিসহ মোট ৭৬০টি প্রশ্ন পাওয়া গেছে। বিধি-৭১-এ মনোযোগ আকর্ষণের নোটিশ পাওয়া গেছে ২১টি এবং প্রস্তাব (সাধারণ) বিধি-১৪৭-এ নোটিশ পাওয়া গেছে একটি। পূর্বে অনিষ্পন্ন বেসরকারি বিল রয়েছে ৮টি। ২৫টি সরকারি বিলের মধ্যে কমিটিতে পরীক্ষাধীন ১১টি, পাশের অপেক্ষায় ছয়টি এবং অধিবেশনে উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে আটটি বিল।

সভাপতিমণ্ডলীতে যারা: গতকাল সংসদের বৈঠকের শুরুতে স্পিকার চলতি অধিবেশনের জন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মনোনয়ন দেন। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা হলেন দীপঙ্কর তালুকদার, ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম, মোরশেদ আলম, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আদিবা আনজুম মিতা।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top