বঞ্চিত ত্যাগী নেতাদের ক্ষোভ-হতাশা

বগুড়া জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:০০; আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:৩১

সভাপতি রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার

বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ১নং ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে ২নং নির্বাহী সদস্য করে বগুড়া জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে রেজাউল করিম বাদশাকে সভাপতি ও আলী আজগর তালুকদার হেনাকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

রবিবার রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল করিম রিজভীর সই করা কমিটি থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

তবে কমিটিতে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও তার অনুসারীসহ অসংখ্য ত্যাগী নেতাকে বঞ্চিত করায় ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। বঞ্চিত ও তাদের অনুসারীরা বলছেন, এ কমিটি তারেক রহমান দেননি; বাদশা ও হেনা বগুড়ায় বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করতেই এমনটা করেছেন। জামায়াত-শিবিরের লোকজন সুযোগ পেলেও ত্যাগীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা অবিলম্বে এ ‘পকেট কমিটি’ সংশোধন করে ত্যাগী বঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করতে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় আগামীতে সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা জানান, বগুড়ার রাজনীতিতে জিয়া পরিবার ছাড়া কেউ অপরিহার্য নয়। দলের ত্যাগী, পরিশ্রমী ও সম্মানিতদের রাখা হয়েছে। এটা দেশের প্রথম একটি স্বচ্ছ কমিটি। প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে কাউকে বাদ দেওয়া হয়নি। উপজেলা কমিটির সভাপতি, সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সন্মানিতদের রাখা হয়েছে। এছাড়া কমিটির উপদেষ্টারা সহ-সভাপতির পদমর্যাদা পান, তাই সেখানে সাবেক সভাপতিসহ অনেককে রাখা হয়েছে।

কয়েকজন কাউন্সিলরকে বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা কেউ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনে নেই। সে কারণে রাখা হয়নি।

জানা গেছে, প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত বছরের ২ নভেম্বর বগুড়া শহীদ টিটু মিলনায়তনে জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গোপন ব্যালটে রেজাউল করিম বাদশা সভাপতি ও আলী আজগর তালুকদার হেনা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন সহিদ-উন-নবী সালাম, কেএম খায়রুল বাশার ও জাহিদুল ইসলাম হেলাল। প্রায় ১০ মাস পর রবিবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম ১২ বছর দায়িত্ব পালনকালে অসংখ্য ত্যাগী নেতাকর্মী সৃষ্টি করেছেন। অথচ ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে তার ঠাঁই হয়নি। সুযোগ পাননি সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন। জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজও বঞ্চিত হয়েছেন।

বগুড়ায় বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের সিপাহসালার খ্যাত কয়েকজন কাউন্সিলরকে কমিটিতে রাখা হয়নি। বগুড়া পৌরসভার তিনবারের প্যানেল চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক পরিমল চন্দ্র দাস, পৌর কাউন্সিলর জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার, কাউন্সিলর সাবেক জাসাস নেতা দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরু, কাউন্সিলর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি শাহ্ মেহেদী হাসান হিমু, কাউন্সিলর সাবেক তাঁতীদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম বিটু, সাবেক কাউন্সিলর, সাবেক শহর যুবদল সভাপতি সরকারবিরোধী ১১৯ মামলার আসামি ও দুটিতে সাজাপ্রাপ্ত মাসুদ রানা, জেলা যুবদলের সাবেক নেতা ফারুকুল ইসলাম ফারুক, শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল মতিন, শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবুল বাশার, নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি একে আজাদ, সাবেক সভাপতি আহসান বিপ্লব রহিম, ফজলে রাব্বী তোহা, ধুনটের সাবেক মেয়র আকতার আলম সেলিম, দুপচাঁচিয়ার সাবেক সভাপতি আবদুল হামিদ, কাহালুর মেয়র আবদুল মান্নান, জেলা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদ মিটুলসহ অনেক ত্যাগী নেতা নতুন কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন।

বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন চাঁন, শহর বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান বকুলকে উপদেষ্টা কমিটিতে রাখা হয়েছে। অথচ সাবেক জামায়াত নেতা ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক একাধিক মামলার আসামি এবিএম মাজেদুর রহমান কমিটির সদস্য হয়েছে। তার বিরুদ্ধে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মারপিটের অভিযোগ রয়েছে।

নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির সাবেক অনেক নেতার অভিযোগ, সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, অ্যাডভোকেট একেএম মাহবুবর রহমান, সাবেক কয়েকজন সংসদ সদস্য ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ করেননি। এ কমিটিতে মূলত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আস্থাভাজনরা স্থান পেয়েছেন। এটা তাদের ‘পকেট কমিটি’।

বগুড়া জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক, বগুড়া পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকবারের কাউন্সিলর, প্যানেল মেয়র-১ পরিমল চন্দ্র দাস বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে বিএনপির রাজনীতি করছি। আমরা কয়েকজন পৌর কাউন্সিলর সিপার, হিমু, হিরু, বিটু, মাসুদ রানাসহ অনেকে সকল আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে আছি। বগুড়া পৌরসভার ১নং, ৬নং, ৭নং, ১১নংসহ বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপি অধ্যুষিত এলাকা। বিশেষ করে ৬ ও ৭ ওয়ার্ড থেকে কাউকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

তিনি বলেন, এটা তারেক রহমান বা কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের দেওয়া কমিটি নয়। এটা মূলত বগুড়ায় বিএনপিকে কুক্ষিগত করে রাখার নীল নকশার কমিটি। আমরা বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে অসংখ্য মামলার আসামি। তাহলে এখন হাই কমান্ড আমাদের এসব মামলা থেকে অব্যাহতির ব্যবস্থা করুক।

পরিমল চন্দ্র দাস আরও বলেন, রাজনীতি করতে গিয়ে অনেকের মতো আমাদেরও ভুলত্রুটি হয়েছে। ২০১৯ সালে আমাদের অব্যাহতি দেওয়া হলেও ২০২১ সালে পৌর নির্বাচনের আগে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনে জয়লাভ করার পর আবার সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও আমরা কেউ দল ছেড়ে চলে যাইনি। পরিকল্পিতভাবে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ত্যাগী পরিশ্রমী নেতা সাইফুল ইসলামের অনুসারীদের সরিয়ে দেওয়া হলো। তিনি এ কমিটি সংশোধন করে ত্যাগী ও বঞ্চিতদের অন্তর্ভুক্ত করতে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অন্যথায় সরকারবিরোধী আগামী লড়াই সংগ্রামে কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top