একদিনে আরও ১২২ নেতাকর্মীর দণ্ড, দীর্ঘ হচ্ছে সাজার তালিকা

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:১৫; আপডেট: ৩ মে ২০২৪ ১৩:৪৩

ছবি: সংগৃহীত

বাড়ছে বিরোধী দল বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সাজাপ্রাপ্তদের সংখ্যা। সম্প্র্রতি প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো মামলায় সাজা হচ্ছে। এসব মামলা ২০১৩ সাল বা তার পরের সময়ের দায়ের করা। এসব মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের শীর্ষ অনেক নেতার সাজা হয়েছে। গত তিন মাসে ১ হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীর সাজার তথ্য দিয়েছে বিএনপি। খবর দৈনিক মানবজমিন।

গতকাল বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নাশকতার ছয় মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ১২২ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া সবাই পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তারা গ্রেপ্তার হওয়ার পর এই রায় কার্যকর হবে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, আসামিদের মধ্যে ইতিপূর্বে কেউ মৃত্যুবরণ করে থাকলে তার বিরুদ্ধে এই রায় কার্যকর হবে না। উত্তরখানের এক মামলায় ৩৬ জন, বনানী থানার মামলায় ১০ জন, গুলশান থানার মামলায় ১৫ জন, ধানমণ্ডি থানার মামলায় ২২ জন, কাফরুল থানার মামলায় ৮ জন।

বিএনপি’র মামলা পরিচালনা করেন এমন আইনজীবীদের দাবি, গত তিন মাসে ৬৭ মামলায় বিএনপি’র ১০৩৪ জন নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। এসব মামলার অধিকাংশই বেআইনি সমাবেশ, পুলিশের কাজে বাধা, গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমা নিক্ষেপসহ নাশকতার অভিযোগে।

দ্রুত মামলা শেষ করতে গিয়ে হাইকোর্টে স্থগিত থাকা একটি মামলায় বিচারিক আদালত রায় দিয়েছেন বলে আইনজীবী অভিযোগ করেছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর দাবি, আসামিপক্ষের এসব অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। সাজা দেয়া বেশির ভাগ মামলা ৭/৮ বছর আগের। মামলাজট কমাতেই রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সব পুরোনো মামলা নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিএনপি কোনো লক্ষ্যবস্তু নয়।

এ বিষয়ে বিএনপি’র আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক মামলাগুলো তড়িঘড়ি করে একের পর এক রায় দেয়া হচ্ছে। এর মূল কারণ ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারবিরোধী নেতাকর্মী তথা যারা বিএনপি’র এমপি ছিলেন বা ভবিষ্যৎ এমপি ইলেকশন করবেন তারা যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন। দ্রুত রায় দিলেও বেশির ভাগ রায়ের সার্টিফাইড কপি আমাদের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে প্রদান করা হচ্ছে না। যে কারণে আমরা আপিল করতে পরছি না। তিনি বলেন, সাগর-রুনির মামলার চার্জশিট এই পর্যন্ত শতাধিক বার পিছিয়েছে। শুধু তাই নয়, অনেক চাঞ্চল্যকর মামলাগুলোর কোনো বিচার হচ্ছে না। মামলার কার্যক্রমে লিগ্যাল প্রসিডিউর ফলো করা হচ্ছে না। যেনতেনভাবে রায় ঘোষণা করা হচ্ছে। মূলত বিচারের নামে অবিচার করছে। দেশকে বিরোধী দলশূন্য করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত এই সরকার।

বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, অধিকাংশ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ পুলিশ সাক্ষীদের আদালতে হাজির করছে। আর আদালত পুলিশ সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিয়ে বেশির ভাগ মামলায় বিএনপি’র নেতাকর্মীদের সাজা দিচ্ছেন। নিরপেক্ষ কোনো সাক্ষী আসছে না। পুলিশ সাক্ষীরাও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরতে পারছেন না। তারপরও সাজা দিচ্ছেন আদালত। তবে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবুর দাবি, শুধু পুলিশ সাক্ষী নয়, পাবলিক সাক্ষীও নেয়া হয়। আদালত যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই রায় দিচ্ছে। এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম ঢাকা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ওমর ফারুক ফারুকী মানবজমিনকে বলেন, আদালত বিএনপি’র মামলাগুলোর রায় দিতে অবশ্বিাস্য দ্রুতগতিতে মামলার তারিখ দিচ্ছেন। অথচ সংশ্লিষ্ট কোর্টে একযুগ আগের মামলাও পড়ে আছে। শুনানি হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা সাক্ষী দিতে এসেও ফিরে যাচ্ছেন।

আদালত সূত্র জানায়, বিএনপি’র নেতাকর্মীদের এখন যেসব মামলায় সাজা হচ্ছে, তা হলো দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের এবং ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগের। এর বাইরে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের মামলাও রয়েছে। গত ৪ঠা ডিসেম্বর হাইকোর্টে স্থগিত থানার একটি মামলায় ১৫ বিএনপি নেতাকর্মীকে সাজা দিয়েছে বলে বিএনপি-সমর্থক আইনজীবী এডভোকেট মাসুদ রানা সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, রাজধানীর সবুজবাগ থানায় ২০১২ সালের করা এক মামলায় বিএনপি’র ১৫ নেতাকর্মীর সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের রায়ের নকলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। নকল পাওয়ার পর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। তবে ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মানবজমিনকে বলেন, যে মামলাটির কথা বলা হচ্ছে সেটি মূলত আমাদের কাছে অন্য একটি আদালত থেকে বদলি হয়ে আসছে। আর এই মামলা যে স্থগিত সংশ্লিষ্ট আইনজীবী আদালতকে জানাননি।

সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-মোহাম্মদ হাবিবুর রশিদ হাবিব, মোরসালিন, মনির হোসেন, কাজী বাবু, সোহরাওয়ার্দী চেয়ারম্যান, আলমাস হোসেন চেয়ারম্যান, আতাউর রহমান, মোহাম্মদ মাকসুদ, ভিডিও বাবু, আলামত, সালামত, ওমর ফারুক, শাজাহান, এ কে এম রাশিদুল হাসান নোমান, মোহাম্মদ গোলাম হোসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ সালে দেশের উচ্চ আদালতে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত থাকার পরও বিচারিক আদালত গত ৪ঠা ডিসেম্বর এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন জানাবো। তিনি বলেন, ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে নাশকতার অভিযোগে এ মামলা করা হয়। এর পরে ২০১৩ সালের ২রা ডিসেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। ২০১৮ সালের ৩রা জানুয়ারি বিচারিক আদালতের মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মিফতা উদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরে) ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ মামলার স্থগিতের কার্যক্রম বাতিল করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আইনজীবী জানান, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ কোনো আবেদন করেননি। তাই মামলাটি এখনো স্থগিত রয়েছে।

গত ১০ই ডিসেম্বর রাজধানীর কলাবাগান, বংশাল ও কোতোয়ালি থানার মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়নসহ ৭৩ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত কলাবাগান থানার মামলায় রবিউল ইসলাম নয়নসহ ৪০ জনকে পৃথক তিন ধারায় দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি দুই হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৭ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। মামলার তিন ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন বিচারক। ফলে তাদের একবছর কারাভোগ করতে হবে। এ ছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া এ মামলা থেকে ২৬ জনকে খালাস দেয়া হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন।

গত ২৩শে নভেম্বর ঢাকার পৃথক তিনটি আদালত একদিনে নাশকতার তিনটি মামলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের ১৩৭ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন। দণ্ডিত আসামিদের মধ্যে রয়েছেন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন, আনোয়ার, হায়দার আলী, বাবলা, ইমরান, সেন্টু ও নাসুম। কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৮ই মার্চ কোতোয়ালি থানার বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে হরতাল সফল করতে ককটেল বিস্ফোরণ করেন আসামিরা। এতে রিকশাচালক কামাল হোসেন গুরুতর আহত হন। যার মাধ্যমে তারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় উপ-পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বাদী হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখসহ মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নাজিম উদ্দীন ২০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বিচার চলাকালীন আদালত আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

 




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top