ধুলায় ধূসর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩ ১১:৪০; আপডেট: ১৮ মে ২০২৪ ২০:২৫

ছবি: সংগৃহীত

টানা ৫৮দিন ধরে তালাবদ্ধ বিএনপি’র নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। গত ২৮শে অক্টোবরের মহাসমাবেশের দিন বিকাল থেকে কার্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়। সেখানে অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কার্যালয়ের সামনে কিছুদিনের জন্য ক্রাইম সিন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছিল। এরপর আর কার্যালয়ের প্রধান ফটকের তালা খোলা হয়নি। দলটির নেতাকর্মীদের কেউ কার্যালয়ে যাননি।

সর্বশেষ ১৬ই ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে বিজয় র‌্যালি বের করলেও কার্যালয় ছিল তালাবদ্ধ। দীর্ঘদিন তালাবদ্ধ থাকায় কার্যালয়ের বাইরে ভেতরে ধুলার স্তর পড়েছে। প্রধান ফটকটিও ধুলায় ধুসর হয়ে আছে।

সরজমিন দেখা গেছে, কার্যালয়ের মূল ফটকের ভেতরে জমেছে ধুলার স্তূপ। কার্যালয়ের কলাপসিবল গেটের পরে তিনটি প্লাস্টিকের চেয়ার একটির উপরে আরেকটি রাখা। চেয়ারগুলোর উপর কয়েকটি পত্রিকা রাখা। ভেতরের মেঝেতে পত্রিকা, খাবারের প্যাকেট, ময়লা কাপড়, চিঠির খাম এবং পানির বোতল পড়ে আছে।

গতকাল বিএনপি’র ডাকা অবরোধ চলাকালে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি তেমন দেখা যায়নি। পোশাকধারী ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।

ওই কার্যালয়ের আশপাশের দোকানিরা জানান, প্রায় প্রতিদিনই বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কিছু কর্মী এবং সমর্থকরা কার্যালয়ের সামনে আসেন। কিন্তু গ্রেপ্তার এড়াতে পদধারী কোনো নেতা আসেন না। যারা আসেন তারা কিছু সময় কার্যালয় দেখে চলে যান। এসময়ে তাদের অনেকের চোখে অশ্রুও দেখা গেছে। মুখে ছিল বিষন্নতার ছাপ।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েনের বিষয়ে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ সদস্য বলেন, গত তিনদিন ধরে নয়াপল্টন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ১০ থেকে ১৫ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তারা সকাল ৮টায় আসেন এবং রাত ৯টার দিকে চলে যান। আর রাতে গত তিনদিন ধরে কোনো পুলিশ সদস্য কার্যালয়ের সামনে থাকেন না। তবে বিএনপি’র কর্মসূচি থাকলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সকাল ৬টার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপি’র কার্যালয়ের সামনে আসেন।

এদিকে কার্যালয় তালাবদ্ধ হওয়ার গত ১৬ই ডিসেম্বর নয়াপল্টনে যান বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। সেদিন মহান বিজয় দিবসে বর্ণাঢ্য র‌্যালি করে দলটি। নয়াপল্টনে গেলেও তারা কার্যালয়ে প্রবেশ করেননি।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। আর আওয়ামী লীগ সরকার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। এজন্য বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছে এবং আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িছাড়া করেছে। এরমধ্য দিয়ে আমরা যেভাবে পারছি আমাদের সাংগঠনিক কাজ করছি এবং যার যার মতো করে কর্মসূচিও সফল করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।

নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির ১১টি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অফিস: নয়াপল্টনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের মূল অফিস। ফলে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকায় এসব অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোরও সাংগঠনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে কার্যালয়ে যেতে না পারলেও তারা অনলাইনে মিটিং করছেন। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলে সিনিয়র কয়েকজন নেতা কোথাও একসঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।

কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল বলেন, ফোনে ফোনে কথা বলে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম করছি। আবার কোথাও গোপনে গিয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আর আমরা আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করছি। কারণ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এই সরকারের পতন আন্দোলনের মধ্যদিয়েই হবে।

মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ বলেন, ওদের (সরকার) নির্যাতন-নিপীড়ন এবং গ্রেপ্তারে নেতাকর্মীরা যার যার মতো করে কাজ করছেন। কারণ তারা মহিলা দলের নেতাকর্মীদেরকেও ঘরে থাকতে দিচ্ছে না। তারপরেও আমরা স্কাইপিতে আলোচনা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি এবং কাজ করছি।

স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, সাংগঠনিক কার্যক্রম আমরা ফোনে আলোচনা করে করছি। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিনিয়র নেতারা কোথাও বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

ওদিকে বিএনপি’র অফিসে ১১ জনসহ দলটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন স্টাফ কাজ করেন। ২৮শে অক্টোবর থেকে কার্যালয় তালাবদ্ধ হওয়ার পর থেকে তারা অফিসে আসেন না। তাদের সবার সঙ্গে দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেয়াসহ বেতনও দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের স্টাফ আবদুল গাফফার বলেন, আমাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বেতনও দেয়া হচ্ছে এবং দল থেকে খোঁজখবরও নিচ্ছে। কিন্তু কার্যালয়ে তালা। এজন্য আমরা অফিসে যেতে পারছি না। এতে আমাদের খারাপ লাগে।

কৃষক দলের অফিসের স্টাফ আব্দুল্লাহ ফারুক বলেন, আমাদের বেতন সময় মতোই হচ্ছে। আর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রতিনিয়তই আমাদের খোঁজখবর রাখছেন।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top