রাজশাহীতে ডা. শফিকুর রহমান
আমরা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারী ২০২৫ ১৫:২৭; আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:১৬

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা এখনো স্লোগান দিচ্ছে ‘আবু সাইদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ'। এই লড়াই চলবে ইনশাআল্লাহ। কতক্ষণ? যতক্ষণ না ইনসাফ এই জমিনে কায়েম না হয়। আর ইনসাফ কায়েমের গ্যারান্টি একমাত্র আল কুরআন দিতে পারে, আর কিছুই দিতে পারে না। এই কুরআনের শাসন সকল ধর্মের, সকল দলের, সকল বর্ণের মানুষের জন্য একমাত্র ইজ্জতের গ্যারান্টি। এই কুরআনের শাসন কায়েমের মধ্য দিয়ে একটা মানবিক বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই, দুর্নীতি এবং দুঃশাসনমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। অন্য ধর্মের ভাইদেরকে আমরা ভাই হিসেবে দেখি। আমরা মানুষকে ঘৃণা করি না, হিংসা করি না। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করি। মানুষের দুঃখে কষ্টে চেষ্টা করি সাড়া দেওয়ার, এবং এটাও চেষ্টা করি সবার আগে সাড়া দেওয়ার।’
আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে অনুষ্ঠিত রাজশাহী জেলার কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আমীরে জামায়াত আরও বলেন, জাতির উপর জগদ্বল পাথরের মতো একটি ফ্যাসিষ্ট সরকার বসেছিল। মহান রাব্বুল আলামিন গত বছরের ৫ আগষ্ট তাদের জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। এ জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ আমাদের এখনো শেষ হয়নি। বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, চাঁদাবাজমুক্ত, ঘুষমুক্ত একটি ন্যায় ইনসাফের বাংলাদেশ গড়েই আমরা মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই। এই বাংলাদেশ আপনারা চান? আমার সহকর্মীরা চান? তাহলে আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। ত্যাগ অনেক করেছি, ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তওফিক দিলে জাতির জন্য আরও ত্যাগ স্বীকার করবো। আমরা এক মুহূর্তের জন্য বিশ্রাম নেব না। বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সময় আমাদের নাই। এ জীবন অনেক ছোট, কাজ অনেক বড়।’
রাজশাহী মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা কেরামত আলীর সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মোঃ সাহাবুদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোঃ মোবারক হোসাইন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাজশাহী জেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল খালেক। এর আগে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন শহীদ সাকিব আনজুমের গর্বিত পিতা মাইনুল হক। আমীরে জামায়াত মামলাবাজি ও চাঁদাবাজি ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘এ কাজ যারা করেন, বিনয়ের সাথে তাদের অনুরোধ করি, এ কাজ করবেন না। আমাদের শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে। মানবতা অপমানিত হবে, লাঞ্ছিত হবে, ভাই আল্লাহর ওয়াস্তে এ কাজ ছেড়ে দেন।’ ‘অফিস আদালতে যারা ঘুষ বাণিজ্য করেন, আবার মামলা বাণিজ্যও অনেকে করেন, তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক অনুরোধ, ভাই, কাজগুলো করিয়েন না। আমাদের শহীদদের আত্মা কষ্ট পাবে।’ শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘শহীদরা আমাদের জাতীয় সম্পদ, পরম সম্মানের পাত্র। যারা শহীদ হয়েছে, আমরা তাদের দলের, সবাই আমাদের দলের মানুষ। তারা জাতীয় সম্পদ, জাতীয় বীর, মাথার ওপরে শ্রদ্ধার সাথে তুলে রাখতে চাই।’
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম, মাওলানা মোঃ রুহুল আমিন- সেক্রেটারী, উলামা বিভাগ, রাজশাহী মহানগরী, মোঃ ইলিয়াস হোসেন-শিবির সভাপতি, রাজশাহী জেলা পশ্চিম, মোঃ রুবেল আলী- শিবির সভাপতি, রাজশাহী জেলা পূর্ব, জসিম উদ্দিন সরকার-সাংগঠনিক সেক্রেটারী, রাজশাহী মহানগরী, অধ্যাপক কামরুজ্জামান- সহকারী সেক্রেটারী ও শ্রমিককল্যাণ সভাপতি, রাজশাহী জেলা, অধ্যক্ষ নাজমুল হক-সহকারী সেক্রেটারী, রাজশাহী জেলা, অধ্যাপক আব্দুস সামাদ-সহকারী সেক্রেটারী ও শ্রমিককল্যাণ সভাপতি, রাজশাহী মহানগরী, অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল-সহকারী সেক্রেটারী, রাজশাহী মহানগরী,নওসাজ জামান-সমন্বয়ক, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, রা.বি, মোঃ শামিম উদ্দিন-সভাপতি, রাজশাহী মহানগরী, মোস্তাকুর রহমান জাহিদ-সভাপতি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, নওগাঁ জেলা আমীর খন্দকার মোঃ আব্দুর রাকিবন, নাটোর জেলা আমীর ড. মীর নুরুল ইসলাম, চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর মওলানা আবুযর গিফারী, পাবনা জেলা আমীর অধ্যাপক আবু তালেব মন্ডল, বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিশ মহানগর সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ আবুল বাশার মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী-আহবায়ক, হেফাজতে ইসলাম, রাজশাহী; রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমীর এ্যাড, আবু মোহাম্মদ সেলিম, রাজশাহী জেলা নায়েব আমীর মাওলানা আব্দুল খালেক প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও রাজশাহী ১ আসন গোদাগাড়ী ও তানোরের সাবেক সাংসদ মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব, এই জুলুম থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে এই আমীর বলেন, মানুষ আর কখনও ফ্যাসিবাদী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি সম্মান দেখিয়ে দেশ পরিচালনা করবে এমন সরকারকে মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চায়। তিনি আরো বলেন, এবার শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী দল জামায়াত ইসলামীকে ক্ষমতায় দেখতে চায় দেশের জনগণ। কোনো জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্নীতির আশ্রয়দাতাকে আর কখনও জনগণ ফিরতে দিবে না দেশের মানুষ। রাজশাহীতে লাখো কর্মীদের সামনে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তরুণ সমাজ। তারা চায় এদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে। গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে না।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পরিষ্কার করে বলতে চাই, ৫ আগস্টের পরে জনগণের ওপর কোনো জুলুম অত্যাচার হোক, দেশের মানুষ বরদাশত করতে রাজি না। যদি জুলুম চলতে থাকে, বাংলাদেশের জনগণ জালেমকে তাড়িয়ে দিয়েছে, নতুনভাবে কোনো জালেম আবির্ভূত হলে তাকেও বিতাড়িত করে ছাড়বে। আমরা বিশ্বাস করি, সকল দল তাদের মূল কাজ নানুষকে জুলুমের হাত থেকে রক্ষা করা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দুনিয়ার কল্যাণ চাই, আখেরাতের কল্যাণ চাই। আগামীর জাতীয় সংসদ হবে আল কুরআনের সংসদ, এটা আমরা আশা করতে পারি। মানবরচিত মতবাদকে আর প্রতিষ্ঠিত হতে দেওয়া হবে না। আমরা আল্লাহর গোলাম হতে চাই, মানুষের গোলামি করতে চাই না। আগামী দিনে আমরা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও রাজশাহী ১ আসন গোদাগাড়ী ও তানোরের সাবেক সাংসদ মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব, এই জুলুম থেকে দেশের মানুষ মুক্তি পেয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষ আর কখনও ফ্যাসিবাদী সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই দেশের তরুণ প্রজন্মের প্রতি সম্মান দেখিয়ে দেশ পরিচালনা করবে এমন সরকারকে মানুষ ক্ষমতায় দেখতে চান। তিনি আরো বলেন, এবার শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী দল জামায়াত ইসলামীকে ক্ষমতায় দেখতে চায় দেশের জনগণ। কোনো জুলুম, নির্যাতন, চাঁদাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্ত ও দুর্নীতির আশ্রয়দাতাকে আর কখনও জনগণ ফিরতে দিবে না দেশের মানুষ। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন তরুণ সমাজ। তারা চায় এদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে শাস্তি নিশ্চিত করতে। গণহত্যার বিচার নিশ্চিত না করে মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে না।
সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, ‘দীর্ঘ ফ্যাসিবাদের আমলে বাংলাদেশের জনগণের এইভাবে সম্মেলন করার সুযোগ পাইনি, বাংলাদেশের জনগণ কথা বলতে পারে নাই। পরাজিত সরকার গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছিল। ফ্যাসিবাদি ঘশেটি বেগম গুলি চালিয়েছে, অলিতে-গলিতে লাশ পড়েছিল। ছাত্র জনতার প্রতিবাদের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। কিয়ামতের আগেই তাদের জন্য অন্ধকার হয়ে গেছে। কোনো জিনিসেরই বাড়াবাড়ি ভাল নয়। মানুষ খুনকারী নেতাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করতে হবে।’ ‘চাঁদাবাজমুক্ত নেতৃত্ব জামায়াতের কাছে আছে, দুর্নীতিমুক্ত নেতৃত্ব জামায়াতের কাছে আছে, বৈষম্যমুক্ত নেতৃত্ব জামায়াতের কাছে আছে। আমিরে জামায়াতের নেতৃত্বে দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী দিনের বাংলাদেশ হবে ইসলামের বাংলাদেশ।’
পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন বলেন, "ওদের বিচার হবে এবং ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হবে ইনশাআল্লাহ।" ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘আমরা চাঁদাবাজমুক্ত বাংলাদেশ চাই, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ চাই, ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ চাই। যারা চাঁদাবাজি থেকে দূরে থাকতে পারবেন না, আজকে তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। এদেশে জামায়াতে ইসলামী জনগণের হৃদয় কেড়েছে। যেখানেই বিপদ, মুসিবত, অগ্নিসংযোগ, আমিরে জামায়াত সবার আগে ছুটে গিয়েছেন। একজন মানবিক নেতা ও সংগঠক হিসেবে এদেশের জনগণের অন্তরে জায়গা করে নিয়েছেন। বাতিলের কাছে আমাদের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা আপোষ করে নাই, আমরাও মাথানত করবো না। আপোষহীন রাজনৈতিক শক্তির নাম জামায়াত ইসলামী। আর বাংলাদেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা যাবে না। আগামী দিনে ইসলামের আদর্শিক জন্ম হবে। প্রতিটি ঘরে ইসলামের আদর্শ পৌঁছে দেব।’
সভাপতির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. মাওলানা কেরামত আলী বলেন, ‘আগামী দিনে একটি সফল ইসলামী বিপ্লব হবে বাংলাদেশে। পূর্ণাঙ্গ ইসলামী দেশ হিসেবে কবুল করবেন।’ উল্লেখ্য রাজশাহী জেলা ও মহানগরীর যৌথ আয়োজনে জামায়াতে ইসলামী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টায় জেলা ও মহানগরী জামায়াতের আয়োজনে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠে এই সম্মেলন শুরু হয়। মাদরাসা মাঠে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে ঐতিহাসিক মাদরাসা মাঠ। এছাড়া সিপাইপাড়া, ফায়ার সার্ভিস মোড়, ঘোষপাড়া, সিএন্ডবি মোড়, মনিচত্বর ও লক্ষিপুরসহ কয়েক কিলোমিটার এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সম্মেলনে হামদ পেশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প সংস্কৃতিক সংসদ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: