মৌলিক সংস্কার ও সুষ্ঠু ভোট আদায় করে ছাড়ব: জামায়াত আমির
রাজ টাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৪ জুলাই ২০২৫ ২১:৪৬; আপডেট: ৫ জুলাই ২০২৫ ০৫:১০

যেকোনো মূল্যে মৌলিক সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়বেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, দেশটা কেউ কেউ পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) বানিয়ে ফেলছে, যার কারণে বর্তমান সময়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা কল্পনাও করা যায় না। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কতগুলো মৌলিক সংস্কার প্রয়োজন রয়েছে। সেই মৌলিক সংস্কারের কথা আমরা বলেছি। আমরা মৌলিক সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব ইনশাআল্লাহ।
শুক্রবার (৪ জুলাই) বিকেলে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কথা শুনতে পাচ্ছি। আমরা সবাইকে স্মরণ করে দিতে চাই- কেউ যদি আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলের মতো স্বপ্ন দেখে থাকেন, তাহলে বলতে চাই, মহান আল্লাহর সাহায্যে আমরা সেই স্বপ্নকে দুঃস্বপ্ন করে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। এমন কিছু বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, দেশে কোনো মাস্তানতন্ত্র চলবে না, কালো টাকার খেলা চলবে না। প্রশাসনের ক্যু চলবে না। নির্বাচনের সময় কেউ যেন অপকর্ম করতে না পারে, এজন্য আমরা সজাগ রয়েছি। জনগণের ভোটে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনে যারাই জয়ী হবে তাদের স্বাগত জানাতে এখন থেকেই আমরা প্রস্তুত।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা আরও বলতে চাই, হাসিনার হাতে সব বাহিনী ছিল। জনবিস্ফোরণের কারণে ক্ষমতা আটকাতে পারেনি তারা। পালিয়ে গেছে। ফ্যাসিবাদের নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের নিয়ে যারা মায়াকান্না করেছে, তারাই সংখ্যালঘুদের সম্পদ লুট করেছে। আমরা দেশের মধ্যে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা মানি না। এ দেশের মাটিতে যারাই জন্ম গ্রহণ করবে, তারাই এদেশের সম্মানিত নাগরিক। আমরা কথা দিচ্ছি, সংবিধান অনুযায়ী আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াবো। ওরা মালিক হয়েছিল জনগণের। আমরা জনগণের সেবক হবো ইনশাআল্লাহ।
ডা. শফিকুর রহমানে বলেন, মদিনার ছায়ার আলো এই বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই। শরিয়ার কথা শুনলে অনেকের গায়ের লোম খাড়া হয়ে যায়। কেননা তারা ঘুষ দুনীতি করতে পারবো না, যা ইচ্ছে তা করতে পারবে না, পরনারীর ইজ্জত লুট করলে তাদের জীবন থাকবে না, চুরি করলে তার হাত থাকবে না। এমন মদিনার ছায়া আমরা এ দেশে দেখতে চাই।
মব প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির বলেন, দেশে মব কালচার নতুন না। ৭২ সাল থেকেই দেশে মব চলছে। ৭২ সালে মায়ের স্তন কেটে উল্লাস করেছে, এমন কুলাঙ্গার বাংলাদেশে আছে। সে নারী যেই হোক, সে আমার মা, সে নারী আমার বোন, আমার মেয়ে। তার স্তন কাটার অধিকার কাউকে দেওয়া হয়নি। খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মানুষ মারা হয়েছে। সেগুলো কি মব ছিল না। সেগুলো মব ছিল।
তবে জামায়াত আমির বলেন, মবকে সমর্থন করার সুযোগ নেই আমাদের। কোনো নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়ার অধিকার রাখে না। দেশের সরকার ও বিচার বিভাগ বিচার করবে। সেই আইন দেশের সংবিধানে রয়েছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আবু সাঈদ বিশাল আন্দোলনের আইকনিক পারসন ছিলেন। তিনি রংপুরের গর্ব। ২৪ জুলাইয়ে যারা নিহত হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, আহতদের এখনো সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এসবের সাথে যারা জড়িত ছিল, এদেশের মানুষে তাদের বিচার দেখতে চায়। তাদের বিচার হলে ভবিষ্যতে কোনো দল এমন দুঃসাহস দেখাবে না। যদি বিচার না হয়, তাহলে ন্যায়বিচারের সংস্কৃতির অভাবে, বাংলাদেশ জঙ্গলে পরিণত হবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় যা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ হচ্ছে। আইনশৃঙখলা বাহিনীকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আইনশৃঙখলা বাহিনীর উদ্দেশে বলি, অতীতে যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিষয়টা রাষ্ট্র দেখবে। এখন আপনারা যারা দায়িত্বে রয়েছেন, আপনারা দায়িত্ব পালন করুন। আপনারা ন্যায়ের পক্ষে থাকবেন, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
জনগণ আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আপনাদের শক্তি যোগাবে ইনশাআল্লাহ। আমরাও আপনাদের পাশে থাকব। কিন্তু অন্যায় দেখলে আমরা সবার আগে প্রতিবাদ করব। অতএব অন্যায়কারীর পক্ষ নেবেন না। জনগণের বিপক্ষে যাবেন না। জনগণের বিপক্ষে গেলে কী পরিণতি হয় সেটা ২০২৪ সালে দেখেছেন।
দীর্ঘ ১৭ পর রংপুরে অনুষ্ঠিত এই জনসভায় প্রধান বক্তা ছিলেন সদ্য কারামুক্ত কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম।
বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, শহীদ আবু সাঈদের বাবা ও বড়ভাই রমজান আলীসহ জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগরের আমির এটিএম আজম খান।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: