হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে মুখ খুললেন তার মেয়ে

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৭ জানুয়ারী ২০২২ ০১:২৫; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৪:৫৭

হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে মেয়ে সামীরা তানজীন চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। বেশ কিছুদিন আগে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে তার চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তবে সখানে ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি কিছু বলেননি তিনি। তখন থেকে বিষয়টি আলোচনায় আসে। পরে সাংবাদিকদের তিনি জানান হারিছ চৌধুরী লন্ডনে মারা গেছেন। ফলে কয়েক দিন ধরে তার মৃত্যু নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়।

তবে এবার তার মৃত্যু নিয়ে মুখ খুলেছেন তার কন্যা সামীরা তানজীন চৌধুরী (মুন্নু চৌধুরী)। তিনি জানান, গত ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেছেন তার বাবা হারিছ চৌধুরী। বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি একটি গণমাধ্যমকে জানান, বাবার মৃত্যুর পর তাকে গোসল, অন্তিমযাত্রা আর আতর-গোলাপ ছিটিয়ে অন্তিম শয়নে শুইয়ে দেওয়ার কাজটি করেছেন তিনি নিজেই। কিছু নিকটজন ও আলেম-ওলামাগণ অনেকটা গোপনেই তার বাবার জানাজায় শরিক হন। সিলেটের কানাইঘাটে পারিবারিক গোরস্হানে দাদুর কবরের পাশে বাবাকে দাফন করা হয়েছে।

হারিছ চৌধুরী ঢাকাতেই মারা গেছেন জানিয়ে তার কন্যা সামীরা তানজীন চৌধুরী বলেন, আমার বাবা কোনো দেশেই যাননি। দেশেই ছিলেন এবং গত ১৪ বছর কখনো তাবলিগ জামাতের হয়ে দিনের দাওয়াতে গেছেন, আবার কখনো করেছেন মসজিদে ইমামতি।

সামীরা বলেন, ‘বাবা অসুস্হ হওয়ার পর আমি কয়েক ঘণ্টার নোটিশে গত ২৭ আগস্ট ঢাকায় পৌঁছাই। ততক্ষণে বাবা লাইফ সাপোর্টে। করোনা থেকে নিউমোনিয়া হয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বাঁচাতে পারলাম না বাবাকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি এক মুহূর্ত আড়াল করতে চাইনি। সব সময় তার পাশে বসেছিলাম। ভয় আর শঙ্কা আমাদের সব তছনছ করে দিল।

হারিছ চৌধুরী আত্মগোপনে থাকাকালে পরিবারের সঙ্গে খুব সামান্যই যোগাযোগ হয়েছে উল্লেখ করে সামীরা বলেন, বাবা চাইতেন, যা হয় তার ওপর দিয়ে যাক। সন্তান হিসেবে আমাদের, আত্মীয়স্বজন, এমনকি তিনি যে রাজনীতি করতেন, সেই রাজনৈতিক নেতৃত্বও যাতে তার কারণে কোনো বিপদে না পড়েন, সে জন্য কারো সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখতেন না। মাঝেমধ্যে তিনি ফোনে সবার খোঁজ নিতেন।

মাত্র কয়েক দিন আগে ছোট চাচা (সেলিম চৌধুরী) স্ট্রোক করে মারা গেলেন। তার আগে মারা গেলেন হাসনাত চাচা (হারিছ চৌধুরীর ছোট ভাই), হারালাম এক ফুফু ও চার ফুফাকে। এমন বিপর্যয় আর কোনো পরিবারে হয়েছে কি না, আমার জানা নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমি আইন পাশ করে ব্রিটিশ গভর্নমেন্টের লিগ্যাল ডিপার্টমেন্টের আইনজীবী হিসেবে কাজ করেছি। আমার ছোট ভাই নায়েম চৌধুরী (জনি) লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস থেকে মাস্টার্স করে সিনিয়র এনার্জি ট্রেডার হিসেবে কাজ করছে।’

সামীরা বলেন, ‘আমি ২২ বছর থেকে দেশের বাইরে। পরপর দুই চাচা ও ফুফু মারা গেলেন। এর বাইরে আমি তেমন কাউকে চিনি না। আশিক চাচাই বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সব করতেন বলে জানি। দাদার নামে বাবার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানা, মাদ্রাসা সব তিনিই দেখাশোনা করেন। আমার ভাইয়ের মাধ্যমে সহায়তা দিই। আমরা আশিক চাচার কাছে অনেক কৃতজ্ঞ। চাচাই মৃত্যুসংবাদটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়েছেন।’

তার বাবা লন্ডনে মারা গেছেন বলে আশিক চৌধুরী যে মন্তব্য করেছেন, সে প্রসঙ্গে সামীরা বলেন, ‘হয়তো কোনো চাপে বা পরিস্থিতির কারণে তিনি এমনটা বলেছেন। এই একই কারণে তিনি বলেছিলেন সিলেটে দাফন করা নিরাপদ হবে না। আমার সঙ্গে এ বিষয়ে তার কোনো কথা হয়নি।’ সামীরা আরও বলেন, আমার বাবার মতো একজন বিশাল ব্যক্তিত্বের মৃত্যুসংবাদ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হোক, সেটা সন্তান হিসেবে আমার কাম্য হতে পারে না।’

এদিকে হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে তথ্য দিয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক। একটি সংবাদমাদ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, হারিছ চৌধুরী সাহেব ওয়ানইলেভেনের পর থেকে ঢাকাতেই ছিলেন। উনি দেশ থেকে কখনও বাইরে বের হননি। একটা গুজব ছিল উনি হয়তো ভারতে অথবা লন্ডনে। তো লন্ডনের বিষয়টা টোটালি ভিত্তিহীন। কারণ উনার সঙ্গে আমার পারিবরিক, ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। সেক্ষেত্রে ছেলে-মেয়ে, ভাবী সবার সঙ্গে একটা গুড রিলেশন ছিল। বিষয়টা হচ্ছে যে উনি ওয়ানইলেভেনের পর কখনও লন্ডনে আসেননি। উনি ঢাকাতেই মারা গেছেন। এটা সত্য ঘটনা, আমি খুব ঘনিষ্ঠ সূত্রে এ বিষয়টা জানি এবং উনাকে ঢাকাতে দাফন করা হয়েছে। এ বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত থাকতে পারেন, উনি লন্ডনে আসেননি।

উনি কবে মারা গেছেন জানতে চাইলে এমএ মালেক বলেন, উনি তিন মাস আগে মারা গেছেন এটাও সত্য। উনি মারা যাওয়ার পরই উনার ঘনিষ্ঠ একজন আত্মীয়র সঙ্গে আমার দেখা হয়। গুজবটা আমার কাছেও আসছিল, তখন উনি আমাকে নিশ্চিত করলেন যে হারিছ চৌধুরী সত্যিকার অর্থে মারা গেছেন এবং ঢাকাতে দাফন করা হয়েছে। উনিতে ঢাকাতে থাকতেন এটা আমি ভালো করে জানি। কারণ ওনার বড় বোনের ঢাকার বাড়িতে উনি থাকতেন। মাঝে মাঝে অন্যান্য ভাইদের বাসাতেও থাকতেন। এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, উনি বাংলাদেশের বাইরে কোথাও আসেননি, কখনও আসেননি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আশিক উদ্দিন চৌধুরী তার ফেসবুকে নিজের ও হারিছ চৌধুরীর ছবি দিয়ে লেখেন, ‘ভাই বড় ধন, রক্তের বাঁধন'। এরপর বাংলাদেশের একটি গণমাধ্যমকে সংবাদটি আবারও নিশ্চিত করে আশিক উদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রায় সাড়ে তিন মাস আগে যুক্তরাজ্যে হারিছ চৌধুরী মারা যান। তার বয়স হয়েছিল প্রায় ৬৮ বছর। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছেন তিনি। হারিছ চৌধুরীর দাফন যুক্তরাজ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।

হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে আশিক চৌধুরীর দাবি। তিনি জানান, হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরার পরে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। গত সেপ্টেম্বর মাসের দিকে তিনি যুক্তরাজ্যের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এত দেরিতে হারিছ চৌধুরীর মারা যাওয়ার খবর প্রকাশের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘যারা জিজ্ঞেস করেন, তাদের বিষয়টি জানিয়েছি। হারিছ চৌধুরীর খোঁজখবর রাখার মতো কেউ নেই। এ জন্য বিষয়টি এতদিন জানাজানি হয়নি।'

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর হারিছ চৌধুরীর যাবজ্জীবন সাজা হয়। সে বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার ৭ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা হয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যা মামলার আসামিও ছিলেন হারিছ চৌধুরী।

সূত্র: ইত্তেফাক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top