জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমি মারা যাব

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৭ জুন ২০২৪ ১০:৫৩; আপডেট: ৩০ জুন ২০২৪ ১৬:১৩

ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হলে আমাকে আর গুলি-বোমা লাগবে না, এমনিতেই শেষ হয়ে যাব। মারা যাব। কারণ জনগণই আমার প্রাণশক্তি। এটুকু মনে রাখতে হবে। এসএসএফের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বুধবার তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে আয়োজিত দরবারে দেওয়া ভাষণে বিশেষ সংস্থাটির সদস্যদের উদ্দেশে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি এটা কঠিন দায়িত্ব। তারপরও এদিকে নজর রাখতে হবে। কারণ এ মানুষগুলোর জন্যই তো রাজনীতি করি। মানুষদের নিয়েই তো পথ চলা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা সব সময়ই এসএসএফের সদস্যদের বলি এবং মাঝেমধ্যে রাগও করি। কাজেই এই বিষয়গুলো একটু সংবেদনশীলতার সঙ্গে দেখা দরকার। কারণ, আমি যখন সরকারে ছিলাম না তখন এই দেশের মানুষ এবং দলীয় লোকই আমার পাশে ছিলেন।’

এই সময় তিনি এক দরিদ্র রিকশাওয়ালার উপার্জনের সামান্য জমানো অর্থে তাদের দুই বোনের জন্য (যেহেতু ঢাকায় তাদের বাড়ি নেই এবং ধানমন্ডির বাড়ি দান করেছেন) একটি জমি কেনার এবং তার কাছে হস্তান্তর করতে চাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকবার তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি শোনেননি। সেই রিকশাওয়ালার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সেই দলিলটা আমার কাছে হস্তান্তর করতে চাইলে আমি নিজে সেখানে গিয়ে তাদের বাড়ি তৈরি করে তার (রিকশাওয়ালা) স্ত্রীর হাতে দলিল দিয়ে বলি, মনে করবেন এটা আমারই বাড়ি, এখন আপনারা থাকবেন। অন্যদিকে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর খালেদা জিয়ার জন্য দুটি বাড়ি, গাড়ি, ক্যাশ টাকা অনেক কিছু রেখে যান।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘মানুষের জন্যই আমার রাজনীতি। তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ও জীবনমান উন্নত করাই আমার লক্ষ্য। তাই এসব মানুষগুলোর কাছ থেকে আমি যেন বিচ্ছিন্ন হয়ে না যাই। কারণ এরাই আমার চলার শক্তি জোগান।’

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

বাঙালি জাতি যাতে বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এসএসএফের প্রতিটি সদস্য সার্বক্ষণিক সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশংসনীয় কর্মদক্ষতা প্রদর্শন করে আসছেন এবং বাংলাদেশে আগত বিদেশিরাও তাদের নিরাপত্তা প্রদানের প্রশংসা করেছেন।’

ভাষণে সরকারপ্রধান তার শাসনামলে বেকারত্বের হার ৩ ভাগে নামিয়ে আনা, স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে গ্রাম-গঞ্জে হাতের নাগালে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া, সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের নিুস্তরের মানুষ ও হতদরিদ্রদের সাহায্য প্রদান, গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘরবাড়ি প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে হতদরিদ্রের হার নামিয়ে আনার সাফল্য তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্যের হার ভবিষ্যতে আরও কমিয়ে আনার এবং অতি দারিদ্র্য একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে। ইতোমধ্যে কোভিড-১৯ মহামারি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা না এলে দারিদ্র্যের হার আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হতো।’

গুলি, বোমা, গ্রেনেড হামলার শিকার হয়ে বারবার বেঁচে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছেন তাদের জীবনও ঝুঁকিতে পড়ছে।’

তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে হয়তো একটা কাজ দিয়ে পাঠিয়েছেন, সেই কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকব। কিন্তু আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন এবং যারা আমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত তাদের জন্য আমি চিন্তায় থাকি। কারণ যতবার আমার ওপর আক্রমণ হয়েছে প্রতিবারই আমার কিছু না কিছু নেতাকর্মীকে জীবন দিতে হয়েছে। তারা মানববর্ম রচনা করে আমাকে গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা করেছেন। কাজেই এসএসএফ যেহেতু আমার সবচেয়ে কাছে থাকে, সব সময় তাদের নিয়ে আমি চিন্তিত।’

এসএসএফের জন্য যা যা করণীয় তা সরকার করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে সরকারে আসার পরই তেজগাঁওয়ে শ্যুটিং প্র্যাকটিসের জায়গা করে দেই। এখন আধুনিক ও উন্নতমানের শুটিং রেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। তাদের অফিসার্স মেস থেকে শুরু করে সবকিছুই কিন্তু ধীরে ধীরে আমার হাতে গড়া। লোকবলও আমিই বৃদ্ধি করেছি।’

তিনি বলেন, ‘গাড়ি থেকে শুরু করে আধুনিক সরঞ্জামাদি যা যা দরকার সবই কিন্তু আমরা ব্যবস্থা করে দিয়েছি। শুধু এসএসএফ নয় সব প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নেই আমরা কাজ করেছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি এসএসএফের সবাইকে বলব, অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা প্রদানে সব সময় পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি প্রত্যেকেই দৃঢ়তা, উন্নত শৃঙ্খলা, সততা, দায়িত্বশীলতা এবং মানবিক গুণাবলী নিয়েই নিজেদেরকে তৈরি করে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। নিজের ভেতর যদি দৃঢ়তা না থাকে, সততা না থাকে এবং নিরলসভাবে দায়িত্ব পালনের কর্তব্যনিষ্ঠা না থাকে তাহলে সফলতা পাওয়া যায় না।’।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top