পুঠিয়ার বিলে নানা প্রজাতির অতিথি পাখির সমারোহ

আরিফ সাদাত, পুঠিয়া | প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারী ২০২১ ০০:২৯; আপডেট: ৩ মে ২০২৪ ১০:০৯

 

রাজশাহীর পুঠিয়ায় প্রতিবছর শীত মৌসুম আসলেই বড় পুকুর, বিল ও জলাশয় গুলোতে নানা রঙের অতিথি পাখি দেখা যায়। তবে এ বছর বিগত বছর গুলোর তুলনায় অনেক বেশী অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। স্থানীয়রা বলছেন, তদারকির অভাবে এক শ্রেণির লোকজন বিভিন্ন কৌশলে আগত অতিথি পাখি গুলো শিকারে মেতে উঠেছে।

শিলমাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন মুকুল বলেন, কয়েক দশক থেকে প্রতিবছর শীত মৌসুমে এই অঞ্চলে অতিথি পাখির আগমন দেখা যায়। তবে এই উপজেলার মধ্যে শিলমাড়িয়া ইউপি এলাকার অনেক বিলে দীর্ঘ মেয়াদী জলাব্ধতা থাকে। যার কারণে এখানে বিভিন্ন রকমের অতিথি পাখির আগমন ঘটে। এর মধ্যে শামুককৌড়, বুনো হাঁস, ছোট সারস, বড় সারস পাখি, চামুচমূখ, পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধূসর ও গোলাপি রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি এবং বিলুপ্ত প্রায় উদয়ী গয়ার ও প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

এখানে অতিথি পাখিরা যেনো নিরাপদে অবস্থান করতে পারে সে লক্ষ্যে গত ২০০৪ সালে পচামাড়িয়ার ১ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে। আর পাখিপ্রেমী ও দশনার্থীদের জন্য ইউপি ভবনের পাশে একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওই পাখিদের সুরক্ষার জন্য ২০০৫ সালে পাখি সুরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির লোকজন সার্বক্ষনিক শিকারীদের হাত থেকে পাখিদের রক্ষায় কাজ করছেন। তবে মাঝে মধ্যে শিকারীরা অতিথি পাখি শিকার করার চেষ্টা করে। আমরা ওই শিকারীদের আইনের আওতায়ও আনছি।

জানা গেছে, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী, পরিযায়ী বা অতিথি পাখি হত্যার দায়ে একজন অপরাধীকে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। একইভাবে কোনো ব্যক্তি যদি পরিযায়ী পাখির মাংস, দেহের অংশ সংগ্রহ করেন, দখলে রাখেন কিংবা ক্রয়-বিক্রয় করেন বা পরিবহন করেন, সে ক্ষেত্রে তাঁর সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার আইন প্রচলিত রয়েছে। এছাড়া পোষা পাখি লালন-পালন, খামার স্থাপন, কেনা-বেচা ও আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম হীরা বাচ্চু বলেন, বিগত বছরের তুলনায় এবার এই উপজেলায় অনেক বেশী অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। এর মধ্যে শিলমাড়িয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশী এসেছে। এছাড়া পুঠিয়া পৌরসভা সদরের ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডের বিলেও বিভিন্ন প্রজাতি অতিথি পাখির আগমন ঘটেছে। আমাদের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক অতিথি পাখি রক্ষায় কয়েকটি টীম কাজ করছেন। পাশাপাশি এলাকাবাসীদের বলতে চাই অতিথি পাখি গুলো আত্মরক্ষার জন্য হাজার মাইল পথ বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকে আমাদের দেশে আসছে। সেগুলোকে রক্ষার দ্বায়িত্ব আমাদের সকলের।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে অতিথি পাখি সুরক্ষায় শিলমাড়িয়া ইউনিয়ন এলাকায় একটি টীম কাজ করছেন। সেখানে ইউপি চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে একটি কমিটিও রয়েছে। আর বাকি নতুন এলাকা গুলোতে আগত অতিথি পাখিদের বিষয়টি দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি পাখি শিকারীদের আইনের আওতায় আনতে এলাকাবাসীদের সহযোগিতা কামনা করছি।

এনএস



বিষয়: পুঠিয়া


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top