নেটওয়ার্ক ভোগান্তিতে রাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থী

রাবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২২ ০৩:৪৫; আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ১০:২৭

ফাইল ছবি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী রিয়াদ। প্রায়ই তার গ্রামের আত্মীয় স্বজন, বন্ধুদের কাছ থেকে অভিযোগ পান ফোনে পাওয়া যায় না তাকে। অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে ফোন। তবে তিনি বলছেন, কখনও ফোন বন্ধ রাখেন না। খোলা থাকলেও বন্ধ পান তার বন্ধুরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের ৩য় বর্ষের এ শিক্ষার্থী বলছেন, "ক্যাম্পাসে নেটওয়ার্ক এত বাজে যেটা খুবই দুঃখজনক। ডাটা চালু করলেও অনেক সময় চালু হয়না, হলেও কোনো প্রয়োজনীয় কাজ করতে পারিনা। ক্লাস রুমের ভিতরে তো ইমার্জেন্সি নেটওয়ার্ক। এত দূর্বল নেটওয়ার্ক তা ধারণার বাইরে।''

এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছেন শিক্ষকরাও। চালু রেখেও বিভিন্নজনের কাছ থেকে ফোন বন্ধ করে রাখার অভিযোগ পান বিশ্ববিদ্যালয়টির ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কনক। খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজী ভবনের চেম্বারেই নেটওয়ার্ক না পাওয়ার অভিযোগ এ অধ্যাপকের। তিনি বলছেন, ক্যাম্পাসে ফোন নেটওয়ার্ক সমস্যা খুবই প্রকট আকার ধারণ করেছে। চালু থাকা অবস্থায় অনেকেই ফোনে পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। যদিও আমি কখনো ফোন বন্ধ করি না। আবার কথা বলতে বলতে দেখি কল কেটে গেছে, ফোনে নেটওয়ার্কই নাই।"

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম সাগর বলছেন, তিনি নিজে ইন্টারনেট ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে কথাই বলতে পারেন না। অনেক সময় ফোনেও কথা বলা যায় না। প্রায় সময় তাকে ফোন করে ফোন বন্ধ পাওয়ার কথা বলেন সহকর্মীরা। তিনি বলেন, "ক্যাম্পাসের মধ্যে নেটওয়ার্কের অবস্থা খুবই ভয়াবহ, খুবই খারাপ।"

ঘটনা অনুসন্ধানে দেখা যায়, এমন অভিযোগ দিচ্ছেন অন্য শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও। মূলত ক্যাম্পাস থেকে টাওয়ার সরিয়ে নেওয়ার ফলে সবাইকেই এই ভোগান্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে সমস্যার শুরু হয় আরও বছর দেড়েক আগে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের ছাদ থেকে ফোন অপারেটরগুলো টাওয়ার খুলে নিয়ে যায়। তখন ভবনটির নির্মাণকাজের কারণে টাওয়ারগুলো খুলে নেয়া হয়। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাম্পাসে অর্ধ লাখের কাছাকাছি জনসংখ্যার জন্য কোনো টাওয়ার নেই। মাঝে করোনা মহামারির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সমস্যা টের পাওয়া না গেলেও খোলার পর নেটওয়ার্ক নিয়ে ভোগান্তির শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার।

এদিকে ভোগান্তি নিরসনে সংশ্লিষ্ট ফোন অপারেটরগুলোর সাথে আলোচনা করেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এখন থেকে বিল্ডিংয়ের উপর টাওয়ার না করে সরাসরি ভূমিতে টাওয়ার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রশাসনের করা কমিটি প্রধানের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামকে। তিনি জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে আগে টাওয়ারগুলো স্থাপন করা হয়েছিল। নির্মাণ কাজের জন্য সেখান থেকে টাওয়ারগুলো সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সাথে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আপত্তির একটা বিষয় ছিল। এখন ভূমি থেকে টাওয়ার স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দ্রুত সমাধান হবার প্রত্যাশা তার।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার মো. জাহিদ আলী বলেন, " নেটওয়ার্ক সমস্যা সমাধানে অপারেটরগুলোর সাথে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের পুকুরের কোণায় তাদের জন্য আলাদা জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে বাংলালিংক, রবি, টেলিটক ল্যান্ড টাওয়ার করবে। আর জিপি আলাদা করে জায়গা চাওয়ায় বিষয়টা এখনো সমাধান হয়নি।" সমাধান হতে কতদিন সময় লাগবে?

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক বা অন্যান্য কোনো ভবনের পরিবর্তে সরাসরি ভূমিতে টাওয়ার করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল অপারেটরগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আলোচনা করে জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন তারা যেকোনো মুহুর্তে কাজ শুরু করতে পারে। আর একতলা স্থাপনা করে সেখানেই টাওয়ার বসিয়ে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করার দরকার হবে না শিক্ষার্থীদের।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top