সংবাদকর্মীদের হলে থাকতে দেবেন না ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২২ ০৪:৫৮; আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ১০:৪৯

ছবি : সংগৃহীত

প্রকাশিত সংবাদের জের ধরে দৈনিক আজকের পত্রিকার কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাজ্জাদ বাসারকে হল থেকে বের করা ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের চার বছর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। এছাড়া আরটিভি অনলাইনের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাফায়িত সিফাতকে ‘হ্যাডম’ দেখাবেন বলেও শাসিয়েছেন। সাজ্জাদ বাসার ও সাফায়িত সিফাত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

রবিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তিনি সব হল থেকে প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকদের নামিয়ে দেবেন বলেও হুমকি দেন। তার সঙ্গে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাশার সাকিবকে বঙ্গবন্ধু হল থেকে সংবাদকর্মীদের নামিয়ে দিতে আদেশও দেন।

এ সময় তার সঙ্গে থেকে দুই সাংবাদিককে শাসান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল ইসলাম মাজেদ, কাজী নজরুল ইসলাম হলের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান পলাশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাসার সাকিবসহ আরও কয়েকজন। সংবাদকর্মী সাজ্জাদ বাসারের বাবাকে নিয়েও অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস ও সম্পাদক মাজেদ।

এদিকে, এই ঘটনায় ২৫ জুলাই (সোমবার) ভুক্তভোগী দুই সাংবাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। সর্বশেষ, সাজ্জাদ বাসার ও সাফায়িত সিফাত থানায় জিডির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সাজ্জাদ বাসার ও সাফায়িত সিফাত জানান, তারা রাতের খাবার শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে কথা বলছিলেন। এ সময় তাদের ডেকে নিয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

দুই সংবাদকর্মীর অভিযোগ, কথাবার্তার একপর্যায়ে ইলিয়াস ও মাজেদ তাদের করা সংবাদের প্রসঙ্গ তুলে এবং উত্তেজিত হয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ সাজ্জাদ ও সিফাতকে বলেন, ‘ভেবেছিস তোদের হ্যাডম আছে তাই যা ইচ্ছে লিখে ফেলছস। এবার দেখবি আমাদের কি হ্যাডম।’

তারা আরও জানান, ইলিয়াসকে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে কোনও মন্তব্য থাকলে প্রতিবাদলিপি দেওয়ার কথা বলা হলেও তিনি ক্রমেই আরও আক্রমণাত্বক হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে তিনি প্রেসক্লাবে যুক্ত থাকা সাংবাদিকদের হলে থাকতে দেবেন না বলেও ঘোষণা দেন।

সাজ্জাদ বাসার বলেন, ‘ইলিয়াস ভাই আমাকে দেখিয়ে তার সঙ্গে থাকা বঙ্গবন্ধু হলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক খায়রুল বাসার সাকিবকে আমি ও অন্যান্য সাংবাদিকদের কালই হল থেকে বের করে দেওয়ার আদেশ দেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যা সত্য আমরা তা নিয়েই সংবাদে লিখি। এরকম হুমকি প্রমাণ করে সাংবাদিকতায় আমরা ঠিক পথেই আগাচ্ছি। তবে, এই হুমকি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার পথে অন্তরায়। আমি অনিরাপদ বোধ করছি। আমি প্রশাসনের কাছে এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাফায়িত সিফাত বলেন, ‘আমি সাংবাদিকতা চর্চা করি। বিভিন্ন বিষয়ে সংবাদ করতে হয়। কিছু বিষয় কারও পক্ষে যাবে, কারও বিপক্ষে। আমি ঘটনার সময় ইলিয়াস ভাইকে বলেছিলাম- যদি কোনও কিছু ভুল মনে হয় তাহলে পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনি যা করলেন তা ন‍্যাক্কারজনক। আমি এর বিচার চাই।’

এদিকে সংবাদকর্মীদের হুমকি দেওয়াপর বিষয়টি অস্বীকার করেছে ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেন সবুজ। তিনি দাবি করেন, ‘কোনও হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটে নাই। আমরা ওই দুই সংবাদকর্মীর সঙ্গে শুধু কিছু কথা বলেছি।’

তবে হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার হুমকি প্রসঙ্গে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে, তাদের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ নিয়ে লিখবে আর ছাত্রলীগ কিছু করবে না। এটা হতে পারে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগেরই তো মেয়াদ নেই, সেখানে আমাদের মেয়াদ নিয়ে প্রশ্ন আসে কেন? তোমরা যাদের বক্তব্যে নিউজ দাও তাদের মেয়াদ তখন কই থাকে?

এ বিষয়ে কুবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘আমি ছোট ভাইয়ের মতো বিষয়টা বলেছি। সাংগঠনিক জায়গা থেকে তাদের কিছু বলি নাই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি অভিযোগপত্র পেয়েছি। প্রক্টরিয়াল বডি আমরা সবাই বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবো।’

এর আগে, গত ১৯ জুলাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগ ৫ দফা দাবিতে, ২০ জুলাই নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী হল শাখা ছাত্রলীগ তিন দফা দাবিতে এবং সর্বশেষ ২১ জুলাই ১৪ দফা দাবিতে মানববন্ধনে নামান শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ। গত ২১ জুলাই মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সঙ্গে ইলিয়াস হোসেন সবুজের কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় উপাচার্য ইলিয়াস হোসেন সবুজকে উদ্দেশ্য করে তার স্ত্রীর চাকরি ও টেন্ডার বাণিজ্যের জন্য বারবার আসার কথা মনে করিয়ে দেন। ঘটনা পরবর্তী সময়ে দৈনিক আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সাজ্জাদ বাশার 'উপাচার্যকে চাপে রাখতে তৎপর কুবি ছাত্রলীগ' শিরোনামে ও ' উপাচার্যকে চাপে ফেলে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা কুবি ছাত্রলীগ নেতার' শিরোনামে সাফায়িত সিফাত সংবাদ করেন।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৬ মে ইলিয়াস হোসেন সবুজকে সভাপতি ও রেজাউল ইসলাম মাজেদকে সাধারণ সম্পাদক করে কুবি শাখা ছাত্রলীগের আংশিক কমিটিকে এক বছরের জন্য অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পরবর্তীতে একই বছরের ২২ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top