ঘরে বসে আমার ছেলেদের রক্ত দেখবো- রাবি শিক্ষক

রাজশাহীতে নজিরবিহীন ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ৩ আগস্ট ২০২৪ ১৯:১৮; আপডেট: ৩ আগস্ট ২০২৪ ১৯:১৯

রাজশাহীতে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে ৯ দফা দাবিতে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে ছাত্র-জনতা। শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা।

বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে তারা। শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন এতে। বিভিন্ন দিক থেকে ছোট-বড় মিছিল নিয়ে আসতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপস্থিতে কে নজিরবিহীন বিক্ষোভ বলে নগরবাসী মনে করছেন।

প্রত্যক্ষদশীরা জানায়, গতকাল সকাল পৌনে ১১টার দিকে ভদ্রা মোড় থেকে মিছিল নিয়ে রুয়েট গেইট দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে আসার পর সেখানে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। অপর দিকে, নগরীর রেলগেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কারী রাকিব হাসান অর্ণবকে পিটিয়ে জখম করে শিক্ষাথীরা। অর্ণব সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে কোটা আন্দোলনকারী সকল শিক্ষার্থীদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। ধারণা করা হচ্ছে এক্ষোভ থেকে শিক্ষাথীরা তাকে পিটুনি দেয়।

মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভে বাধা দেয়নি। তাদের নির্বিঘ্নে বিক্ষোভ করতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও তারা ৩টি পুলিশ বক্সে হামলা করে ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করে। এদিকে পুলিশ বক্স ভাঙচুরের ছবি তোলার সময় আন্দোলনকারীরা তালাইমারি মোড়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য সাইফুল ইসলামেকে পিটুনি দেয়। তিনি সিটি এসবিতে কর্মরত রয়েছেন। পরে তাদের দুইজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটের শিক্ষকরাও একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দেন। এসময় সরকার বিরোধী নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আমরা তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছি। আর কত ঘরে বসে আমার ছেলেদের রক্ত দেখবো। শিক্ষার্থীদের গায়ে গুলি করতে স্বৈরাচার সরকারের কি একটুও বুক কাঁপেনি? আজ থেকে এ আন্দোলনে গুলি চালালে সেই গুলি আগে শিক্ষকদের গায়ে লাগবে, তারপর আমাদের ছাত্রদের। শিক্ষার্থীদের আর কোনো ভয় পাওয়ার কারণ নেই, তাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা আজ থেকে তাদের সামনে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং তাদেরকে সুরক্ষা দিতে সবসময় তাদের সঙ্গেই আমরা আছি। গণহত্যার দায় স্বীকার করে স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন এ অধ্যাপক।

আন্দোলনকারীরা দুপুরের দিকে কাজলা গেট হয়ে ভদ্রা মোড় পার হয়ে রেলগেট শহীদ কামারুজ্জামান চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।  পুলিশ জানায়, সকাল ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হন। পরে তারা রুয়েটের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। একই সময় মহানগরীর নর্দান মোড় থেকে আন্দোলনকারীদের আরও একটি মিছিল এসে সড়ক অবরোধকারীদের সঙ্গে যোগ দেয়।
পরে আন্দোলনকারীরা রুয়েটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তালাইমারি হয়ে নর্দানের মোড়ে যান। সেখান থেকে ঘুরে একই স্থানে এসে আবারও বিক্ষোভে কর্মসূচিতে মিলিত হন।
এ সময় বৃষ্টি কারণে তালাইমারি মোড়ে অবস্থান নেওয়া পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে সরে যান। তবে বিক্ষুব্ধরা এ বৃষ্টির মধ্যেই তাদের আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যান। পরে পুলিশ আবারও সেখানে সতর্ক অবস্থান নেয়।


রাজশাহীর মতিহার থানার ওসি শেখ মোবারক পারভেজ জানান, আন্দোলনরতরা সকাল থেকে বিক্ষোভ করলেও পরিস্থিতি এখনও পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে। তালাইমারিতে অবরোধ করলেও বিভিন্ন যানবাহন পাশের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটসহ আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঘিরে বাড়তি নিরাপত্তা নেওয়া হয়েছে। এসব এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতির চেষ্টা করলে পুলিশ তা প্রতিরোধ করবে।
সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে হামলা ও খুনের প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবিতে শনিবার সারা দেশের মতো রাজশাহীতেও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা সংশ্লিষ্টদের রুয়েট গেটে জমায়েত হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top