দেশি মুরগির স্বাদে ফার্মে পালন করা বাউ মুরগি

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ৮ আগস্ট ২০২১ ০১:৫৬; আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৫:২১

গবেষণাগারে বাউ ব্রো মুরগি' বা 'বাউ মুরগি'

খামারে পালন করা হলেও দেখতে আর স্বাদে- গুণে প্রায় দেশি মুরগির মতোই - দেশি মুরগির জাত থেকেই এমন এক মুরগির প্রজাতি উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের একদল গবেষক।

'বাউ ব্রো মুরগি' বা 'বাউ মুরগি' নাম দিয়ে নতুন জাতের এই মুরগির দুটি স্ট্রেইন বা জাত উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ।

এই গবেষণা দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী (অবসরপ্রাপ্ত) ও অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্যা।

অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্যা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ''অনেকগুলো স্থানীয় জাতের জার্মপল্গাজম ব্যবহার করে আমরা দুইটা জাত উদ্ভাবন করতে পেরেছি, যেগুলো ফার্মে পালন করা সম্ভব। এগুলোর স্বাদ প্রায় দেশি মুরগির মতোই, সুস্বাদু।''

প্রচলিত ব্রয়লার মুরগির মতোই ঘরে এগুলো লালন-পালন করা যাবে। ছয় সপ্তাহ বা দেড়মাস বয়স হলেই সেগুলো বাজারজাত করা যাবে।
বর্তমানে সীমিত আকারে বাণিজ্যিকভাবে এই মুরগি বাজারজাত করা শুরুও হয়েছে।

গবেষকরা যে দুইটি জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, তার নাম দেয়া হয়েছে 'বাউ সাদা' আর 'বাউ রঙিন'। অর্থাৎ একটি মুরগি সাদা রঙের হয়ে থাকে, আরেকটা রঙিন। সাদা বাউ প্রচলিত ব্রয়লার মুরগির চেয়ে একটু শক্ত। তবে রঙিন জাতটির স্বাদ একেবারে দেশি মুরগির মতো। দেড় মাস সময়ে একেকটা মুরগির ওজন হয়ে থাকে গড়ে ৯০০ গ্রাম থেকে এক কেজি পর্যন্ত।

অধ্যাপক ড. বজলুর রহমান মোল্যা বলছেন, ''দেশি মুরগির জাত থেকে এগুলো উদ্ভাবন হওয়ায় আমাদের দেশের আলো বাতাসে এরা সহজেই খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এদের রোগ-বালাই কম হয়। অতিরিক্ত টিকা বা অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয় না।''

ঢাকার ধানমণ্ডির একজন বাসিন্দা, নাজমা আক্তার অনলাইন ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট থেকে এই মুরগি কিনে খেয়েছেন। ''মাংসটা দেশি মুরগির মতোই কিছুটা শক্ত, অনেকটা একই রকম স্বাদ। তবে বাজারে দেশি মুরগির যেরকম দাম, তারে চেয়ে দামে বেশ কম পড়ে।'' তিনি জানান, পরিবারের যেসব সদস্যরা ব্রয়লার মুরগি খেতে পছন্দ করেন না, তারাও এই মুরগির মাংস বেশ মজা করে খেয়েছেন।

অধ্যাপক মোল্লা জানিয়েছেন, তারা বিকল্প এই জাতের উদ্ভাবনের কাজ শুরু করেন ২০০২ সালে। ''অনেকে ব্রয়লার মুরগি খেতে পছন্দ করেন না। কিন্তু দেশি মুরগির যোগান তো কম। তখন আমরা চিন্তা করলাম, আমাদের স্থানীয় মোরগ-মুরগি থেকে যদি এমন একটা স্ট্রেইন উদ্ভাবন করা যায়, যেটি ফার্মে লালনপালন করা যাবে, তাহলে আমিষের বিকল্প একটা উৎস তৈরি হবে'' - তিনি বলছেন।

বিদেশি জাতের সংমিশ্রণে 'সোনালি' নামের একটি জাত এর আগে উদ্ভাবিত হলেও, সেটির স্বাদ দেশি মুরগির মতো নয়। ফলে গবেষকরা চাইছিলেন এমন একটি জাত উদ্ভাবন করতে, যা দেশীয় মুরগির প্রজাতি থেকে আসবে। ফলে সেখানে দেশি মুরগির স্বাদ যেমন পাওয়া যাবে, তেমনি বাংলাদেশি আবহাওয়ায় তাদের টিকে থাকার ক্ষমতা হবে বেশি।

২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএনআরসি) সহায়তায় একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তারা গবেষণা কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৪ সালে এসে তারা ঘোষণা করেন যে, স্থানীয় মুরগির জাত থেকে তারা খামারে লালনপালনের উপযোগী দুইটি জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছেন।

বর্তমানে প্রতি মাসে এই জাতের মুরগির ৩০ হাজার বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কেটে গেলে তারা মাসে দুই লাখ বাচ্চা উৎপাদন করতে সক্ষম হবেন বলে আশা করছেন।

তবে এই জাত দুইটি ব্রয়লার মুরগির মতোই - যা শুধুমাত্র মাংসের জন্যই উৎপাদন করা যাবে, এবং এসব মুরগি থেকে ডিম হবে না।

এই জাত দুইটি বাণিজ্যিকভাবে ছড়িয়ে দিতে এই বছরের শুরুতে একটি প্রকল্পও নেয়া হয়েছে। এসব জাতের আরেকটি সুবিধা হচ্ছে, ব্রয়লারের মতো বিদেশ থেকে মুরগির বাচ্চা আমদানি করতে হয় না। রোগে মৃত্যুর হারও অনেক কম।

সূত্র: বিবিসি বাংলা /এএস



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top