আড়াই লাখ টাকার লেবু বিক্রি মশিউরের

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৩৮; আপডেট: ১৭ মে ২০২৪ ০৯:০৮

ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায় সিড লেস বা বীজ ছাড়া ‘চায়না-৩’ জাতের লেবুর বাগান করে সফলতা পেয়েছেন মশিউর রহমান। গত আড়াই বছরে তার বাগান থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়েছে। তার সফলতা দেখে এলাকার বেকার যুবকরা লেবুর বাগান করার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে জেলায় ১৭২ হেক্টর জমিতে লেবুর বাগান রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ হেক্টর, রানীনগরে ২ হেক্টর, আত্রাইয়ে ১০ হেক্টর, বদলগাছীতে ৬৫ হেক্টর, মহাদেবপুরে ১০ হেক্টর, পত্নীতলায় ১০ হেক্টর, ধামইরহাটে ১২ হেক্টর, সাপাহারে সাড়ে ৫ হেক্টর, নিয়ামতপুরে ২৪ হেক্টর, পোরশায় ৬ হেক্টর এবং মান্দায় ২ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে।

জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত কেন্দুয়া গ্রামের ঈসমাইল হকের ছেলে মশিউর রহমান। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। ইউটিউবে সিড লেস লেবু চাষে সফলতা দেখে লেবু চাষের আগ্রহ জন্মে তার। জেলার বদলগাছী উপজেলা থেকে ২৫ টাকা পিস হিসেবে ৬০০ পিস চারা কেনেন। গর্তের মাটির সঙ্গে জৈব সার, গোবর, ডিএপি, এমওপি, ইউরিয়া, জিপসাম, দস্তা ও বোরন মিশিয়ে কিছুদিন জমি ফেলে রাখেন। এরপর বেড তৈরি করে নির্দিষ্ট দূরত্বে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে ওই চারাগুলো সাড়ে চার বিঘা জমিতে রোপণ করেন।

চারা লাগানোর ৬ মাস পর গাছে ফুল আসা শুরু হয়। সে সময় প্রথমবারের মতো ২৩ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ৫০ হাজার টাকা এবং তৃতীয় দফায় ৬০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াই লাখ টাকার মতো লেবু বিক্রি করেছেন মশিউর রহমান।

বরেন্দ্র এলাকায় পানির গভীরতা অনেক নিচে থাকায় ফসল ঠিক মতো হতো না। বছরে একটিমাত্র ফসল বৃষ্টি নির্ভর আমন ধানের আবাদ করা হতো। যেখানে ফলনও ঠিক মতো পাওয়া যেতো না। বছরের বেশির ভাগ সময়ই জমিগুলো অনাবাদি থাকে। তাই ধানের আবাদ কমিয়ে এখন বিভিন্ন ফলের বাগান করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।

সফল চাষি মশিউর রহমান বলেন, ২০০৫ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করি। ২০০৬ সালে বাবা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারপর থেকে তিনি আর সংসার দেখাশোনা করতে পারেন না। সে সময় সংসারের দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হলো। পড়াশোনা বাদ দিয়ে সংসারে মনোযোগ দিলাম। আমাদের বরেন্দ্র এলাকা। পানির সংকট হওয়ায় ধানের আবাদ ঠিক মতো হতো না। বিঘাপ্রতি ১০-১৪ মণ ধান পাওয়া যেতো। পরিশ্রমও বেশি হতো। আবার ধানের দামও ভালো না পাওয়া যেতো না।

এখন ধানের দাম হাজার টাকা মণ। কিন্তু আগে তো ৬০০-৮০০ টাকা মণ ছিল। ধানের আবাদ করে পোষাতো না। বর্তমানে যদিও বাজারে ধানের দাম ভালো। কিন্তু সবসময় ধানের দাম ভালো থাকে না। সিদ্ধান্ত নিলাম ভিন্ন চাষাবাদের। এমন চিন্তা-ভাবনা থেকে ইউটিউব দেখে লেবু চাষের চিন্তা মাথায় আসে। ধানের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়লাম।

চাষি মশিউর বলেন, সাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ৬০০ পিস সিড লেস লেবুর চারা লাগানো হয়। চারা কিনে লাগানো, সার, ঔষধ, শ্রমিক ও জমিতে বেড়াসহ প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছিল। খরচ বাদ দিয়ে এখন লাভের মুখ দেখছি। আমার কাছে মনে হয়েছে লেবু চাষ লাভজনক। ধানের মতো পরিশ্রম করতে হয় না। এমনকি দাম নিয়েও দুশ্চিন্তা করতে হয় না। বাগানে এসে ব্যবসায়ীরা লেবু কিনে নিয়ে যান। এছাড়া হাটে নিয়েও বিক্রি করা হয়। সব মিলিয়ে পরিশ্রমও কম হয়।

বছরের ২-৩ বার সার ও সেচ দেওয়া হয়। দেশে যত জাতের লেবু আছে তার মধ্যে এ জাতের লেবুর বিয়ারিং (ধারণ ক্ষমতা) বেশি এবং সারা বছর পাওয়া যায়। বর্তমানে গাছে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো লেবু আছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি করার উপযোগী হবে। গাছ যত বড় হতে থাকবে লেবুর আসার সংখ্যা বাড়তে থাকবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে লেবুর বাগান দেখতে আসছেন এবং পরামর্শ নিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই এখন লেবু চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top