রাকসু নির্বাচন:  বিদায়ী ভিসি সোবহানের 'সংলাপ নাটক'

কে এ এম সাকিব, রাবি | প্রকাশিত: ২১ মে ২০২১ ২২:৩৮; আপডেট: ২২ মে ২০২১ ০৪:৩২

রাজটাইমস ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) অনুষ্ঠিত হওয়ার পরপরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তোড়জোড়। রাকসু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হয়েছিল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন, উঠেছিল রাকসু নির্বাচনের দাবি।

ফলশ্রুতিতে রাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে সংলাপের আয়োজন করে তৎকালীন উপাচার্য এম আবদুস সোবহানের প্রশাসন৷ ২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানকে সভাপতি করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেন বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, রাকসুর কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মীর ইমাম ইবনে ওয়াহেদ ও সহকারী প্রক্টর আবু সাঈদ মো. নাজমুল হায়দার।

ধাপে ধাপে চলে আলোচনা কর্মসূচী। একে একে আলোচনা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গুলোর সাথে।

কিন্তু সকল সংগঠনের সাথে শেষমেশ সংলাপ করতে পারে নি কমিটি। ভিসি সোবহানের মেয়াদেই আয়োজন করা হয় নি কোন নির্বাচন।

এদিকে, সংলাপ কমিটির ব্যর্থতা ও বিদায়ী ভিসির সমালোচনা করে অনেক শিক্ষার্থী সংলাপ আয়োজনটি কালক্ষেপণের একটি অযুহাত বলেই মনে করছেন। শিক্ষার্থীদের মতে, সংলাপের কথা বলে শিক্ষার্থীদের নির্বাচনের দাবি যাতে জোড়ালো না হয় সেজন্যই এই কৌশল বেছে নিয়েছিলেন ভিসি এম আবদুস সোবহান। তিনি নিজে রাকসু নির্বাচনে আগ্রহী ছিলেন না, এমনটাই অভিমত উঠে এসেছে শিক্ষার্থীদের বক্তব্যে।

বিতর্ক সংগঠন গোল্ড বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট তাজরীন আহমেদ। কাজ করেন আরও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে৷ রাকসু নির্বাচন নিয়ে নিজের আক্ষেপের কথা জানান তিনি৷ রাজটাইমসকে বলেন, দল-মত নির্বিশেষে অনেক দিন যাবৎ ই সবার চাওয়া রাকসু নির্বাচন।আমরা জানি,রাকসুর কাজ হল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনসভা বা সিনেটে সাধারণ ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব করা।সিনেটে মাত্র ৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি থাকলেও তাদের ক্ষমতা অনেক বেশি কারণ প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর প্রতিনিধি তারা। নির্বাচিত এসকল ছাত্র প্রতিনিধি কোনো নির্দিষ্ট দলের ছাত্রনেতা নন বরং ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর ভোটে নির্বাচিত নেতা তাই সবার জন্য সমানভাবে চিন্তা করা ও কাজ করার সুযোগ তাদের রয়েছে,যার ফলে সকল শিক্ষার্থীর সমর্থন থাকে তাদের প্রতি।

ফলশ্রুতিতে,বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পারে শিক্ষার্থীরা।অথচ বিগত ২৯ বছর যাবত রাকসু নির্বাচন বন্ধ!যার ফলে অগণতান্ত্রিক পন্থায় পরিচালনা করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়কে।বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও অনুদাসে পরিণত হচ্ছে এবং জাতীয় পর্যায়ে যোগ্য নেতৃত্বের অভাব দেখা দিচ্ছে।অবিলম্বে রাকসু নির্বাচন চাই আমরা।ক্যাম্পাসের সকল সংগঠনের সাথে প্রশাসনের রাকসু সংলাপ হওয়ার কথা থাকলেও তা পরবর্তীতে আর হয়নি!

অর্থাৎ, বারবার আশা দেখিয়ে কোনো আশানুরূপ ফল তো আমরা পাচ্ছিই না,রীতিমত আমাদের সাথে এ নিয়ে নাটক করা হচ্ছে যার ফলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা অসন্তুষ্ট।

আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রুত রাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে গণতান্ত্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার পন্থা সৃষ্টি করুক।তাই,"মোদের প্রাণের দাবি একটাই,রাকসু নির্বাচন চাই"

শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশন এর সহ-সভাপতি সারোয়ার সাব্বির বলেন, রাকসু নির্বাচন না হওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে সত্যিকার অর্থে কাজ করতে চাওয়া ছাত্র সংগঠনগুলোর জন্য হতাশাজনক। স্টুডেন্ট রাইটস এসোসিয়েশন বিশ্বাস করে রাকসু নির্বাচন একটি স্বতন্ত্র স্বত্ত্বা তৈরী করতো যার ফলে ক্যাম্পাসের বর্তমান দূর্নীতি সহ বিভিন্ন ইস্যুতে শিক্ষার্থীদের স্পষ্ট অবস্থান বর্ণনা করার সুযোগ থাকতো। বর্তমানের এই নাজুক অবস্থার সৃষ্টি হতোনা।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান আসিফ রাজটাইমসকে বলেন, ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের সকল অধিকার, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চর্চার কেন্দ্র হল ছাত্র সংসদ। ছাত্র সংসদ না থাকায় ক্যাম্পাসের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এই কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ জবাবদিহি বিহীন দূর্নীতির সাথে জরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তাই, যে কোনো দূর্নীতিবাজ প্রশাসনই চাইবেনা রাকসু চালু হোক। বিগত প্রশাসন রাকসুর আলোচনা তুলে সেখানে আমাদের মনোযোগী করে রাখলেও, এর অন্তরালে তাদের মনোযোগ ছিল দূর্নীতির দিকেই। ক্যাম্পাসে শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ ও দক্ষ নেতৃত্বে গঠণের রাকসুর বিকল্প নাই।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান মিশু রাজটাইমসকে বলেন, সংলাপ কমিটির সাথে আমাদের সংলাপ হল, দাবি-দাওয়া ও তুলে ধরলাম কিন্তু নির্বাচন আর দেখা হল না৷ সংলাপের মধ্যেই এর কার্যক্রমকো সীমিত রাখা হয়েছে। তাছাড়া প্রশাসনের রাকসু নির্বাচন আয়োজন করতে তেমন আন্তরিকতা পরিলক্ষিত হয় নি।

রাকসুর অনুপস্থিতিতে ছাত্রলীগের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন এই ছাত্রনেতা।

সংলাপ কমিটির সদস্য সচিব আবু সাঈদ মোহাম্মদ নাজমুল হায়দার রাজটাইমসকে বলেন, আমি সহকারী প্রক্টর হিসেবে ওই কমিটিতে দায়িত্ব ছিলাম। আমার দায়িত্ব থাকা কালে সংলাপ কার্যক্রম চলমান ছিল। সর্বশেষ কি হল সেটা আমি বলতে পারব না।

কমিটির আহবায়ক প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান রাজটাইমসকে বলেন, ক্যাম্পাস বন্ধসহ নানা কারণে সংলাপ কার্যক্রম বন্ধ আছে। নতুন কোন উপাচার্য আসলে এই কার্যক্রম আবার শুরু করা যাবে।

 

  • এসএইচ


বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top