মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পোশাক-পরিচ্ছদে

রাজশাহীতে ঈদের বাজারে দাম বাড়তি ॥ কেনাকাটায় কাটছাঁট

বিশেষ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৩৭; আপডেট: ৯ এপ্রিল ২০২৩ ২২:৫৬

রাজশাহীতে শুরু হয়েছে ঈদের বেচা-কেনা। ছবিটি নগরীর সাহেব বাজার থেকে তোলা হয়েছে ।

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে চাই নতুন জামা-কাপড়-জুতো। বছরজুড়ে এটা সেটা কিনলেও রমজান এলেই ঈদকে সামনে রেখে শুরু হয় কেনা কাটার উৎসব। ক্রেতাদের কথা ঈদের সময় কেনাকাটার মজাই আলাদা। সিয়াম সাধনার পাশাপাশি কেনা কাটাতে অন্যরকম আবহ বিরাজ করে।

এবারও পবিত্র ঈদুল ফিতরের ঈদ পালনের জন্য রাজশাহী নগরীর বাজার গুলোতে ক্রেতাদেও পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। নারীদের থ্রি-পিস ছাড়াও সারারা, ঘারারা, নায়রা ও গ্রাউনের চাহিদা বেশি। শিশুদের পোশাকেও দেখা গেছে বৈচিত্র্য।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পোশাকের দাম অনেক বেশি বলে জানান ক্রেতারা। ক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম যেমন বেড়েছে বাজারে, পোশাকের দামও বেড়েছে তেমন ভাবেই। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতির মধ্যে ক্রেতারা সাধ ও সাধ্যের মধ্যে খুঁজছেন ঈদের পোশাক।

রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট ও হকার্স মার্কেট, গণকপাড়াসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ও শপিং মল ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের ভিড় রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় সাহেব বাজারের আরডিএ মার্কেটে। এই বাজারে মেয়েদের শাড়ি, থ্রি-পিস, বোরকা, জুতা-স্যান্ডেল, অলংকার ও কসমেটিকস থেকে শুরু করে সবকিছুই সহজলভ্য হওয়ায় নারী ক্রেতাদের সমাগম সব থেকে বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদকে সামনে রেখে বাজারে ক্রেতাদের আনাগোনা বাড়ছে।

কিন্তু সেই তুলনায় বিক্রি কম হচ্ছে। কারণ দেশে কয়েক মাস ধরে মাছ-মাংস, চাল-ডালসহ সব ধরনের নিত্যপণের দাম বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আমদানি করা কাপড় ও আনুষঙ্গিক কাঁচামালের দাম। তাই কোনোভাবেই মূল্যবৃদ্ধির চাপ সামাল দিতে পারছেন না তারা। এ মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে পোশাকের বাজারেও। তবে আরও কয়েক রোজা গেলে বিক্রি আরও বাড়বে বলে প্রত্যাশা তাদের। এদিকে পোশাকে দাম দ্বিগুণ হয়েছে বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। এ জন্য তাদের কাটছাঁট করে পোশাকে কিনতে হচ্ছে বলেও জানান তারা। মার্কেটে আসা ক্রেতারা জানান, ‘গতবছর করোনার প্রভাব ছিলো। বাজারে ভিড় ছিলো না। এ বছর বাজারে ভিড়ও বেশি, কাপড়-চোপড়ের দামও অনেক। গতবছর বাচ্চার যে প্যান্ট কেনা হয়েছিল ৪০০ টাকায়, আজ ওই ধরনের প্যান্ট কিনলাম ১২০০ টাকায়।

স্ত্রীর জন্য যে পোশাক গতবছরে কেনা হয়েছিল এক হাজার টাকায়। ওই একই ধরনের পোশাকের দাম বেড়ে হয়েছে ১৫০০-১৭০০ টাকা।’ সাহেব বাজারে এক ক্রেতা বলেন, ‘গতবছরের তুলনায় থ্রি-পিসের দাম প্রায় ডাবল হয়েছে। যে থ্রি-পিসের দাম দুই হাজার ছিল এ বছর সেগুলোর দাম তিন থেকে সাড়ে তিন হাজারে ঠেকেছে। শাড়ির দামও কিছুটা বেড়েছে।’

আরডিএ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, রোজার শুরু থেকেই বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে। নারী ও শিশুদের নিত্য নতুন ফ্রক, স্কার্ট, লেহেঙ্গা, টু-পিস, থ্রি-পিস ও বোরকার দোকান হিসেবে পরিচিত আরডিএ মার্কেট। এ মার্কেটে ঈদ উপলক্ষে এখন প্রতিদিনই প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার পোশাক বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। কেনাকাটাও বাড়ছে বলে জানান তিনি। এদিকে এবারের ঈদেও ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী সিল্কের শাড়ি ও পাঞ্জাবিসহ বিভিন্ন পোষাক। চাহিদার যোগান দিতে ব্যস্ত রাজশাহীর রেশমপাড়ার শ্রমিকরা। এবার ঈদে সিল্কের কাপড়ের ওপরে হাতের কাজের শাড়ি ও পাঞ্জাবি এসেছে শো-রুম গুলোতে। রাজশাহীর বিসিক এলাকায় অবস্থিত সিল্ক হাউসগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও শুরু হয়েছে ঈদের কেনাবেচা।

অপর দিকে পোশাক কেনা শেষে সবাই ঢুঁ মারছেন জুতা ও কসমেটিকসের দোকান এবং শোরুমে। জুতা পছন্দের ক্ষেত্রে বাটা, অ্যাপেক্স, লোটো ও ক্যাজুয়াল রয়েছে শীর্ষে। জুতুার একজন বিক্রয় কর্মী বলেন, নারী ক্রেতারা তাঁদের পোশাকের সঙ্গে মিল রেখে স্যান্ডেল, শু, নাগরা, পেনসিল হিল ও স্লিপার কিনছেন। ছেলেরা পাঞ্জাবি, প্যান্ট ও টি-শার্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ক্যাজুয়াল ও ফ্ল্যাট জুতা নিচ্ছেন। এখানেও দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের রয়েছে আক্ষেপ অভিযোগ।

রাজশাহী নগরীর আরডিএ মার্কেট, হকার্স মার্কেট ও অন্যান্য মার্কেটের পাশাপাশি অনেকেই আবার ফুটপাত এবং হকার্স মার্কেট গুলোতে ভীড় করছেন। এই শ্রেণীর ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। নিম্ন বিত্তদের ভরসাস্থল ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে নেই জামা কাপড় জুতো স্যান্ডেল নিয়ে। জরি পাথর কাঁচ চুমকীর কাজ করা জমকালো পোশাক শোভা পাচ্ছে ফুটপাতের দোকান গুলোতে। একই সাথে ভীড় বেড়েছে দরজি বাড়ি গুলোয়। কাপড় কিনে ছুটছেন পছন্দের টেইলার্সে।

এখন ভীষন ব্যাস্ত দরজীবাড়ি গুলো। কয়েকজন জানালেন মধ্য রমজানের পর থেকে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। একদম শুরু দিকে যারা কাপড় দিয়েছেন এখন তাদের গুলো তৈরী করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন ঈদ আসতে এখনও সময় আছে। এ সময়ের মধ্যেই তাদের মুনাফা পাল্লাটা ভারী হয়ে উঠবে। অপর দিকে ক্রেতারা বাজার মনিটরিং এর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। 

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top