রাবি শিক্ষকের ট্রাই সাইকেলে সচল মোজ্জাফরের জীবন

রাবি প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২২ ০১:২৫; আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২২ ০১:৫২

ছবি: সংগৃহিত

নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বাসিন্দা মোজ্জাফর হোসেন। দিনমজুর হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন কোনো মতে। তবে ৮ বছর আগে শরীরের উপর গাছ পরে ভেঙে যায় তার মেরুদন্ড। অচল হয়ে পরে তার দুটো পা'ই। চলা ফেরার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন তিনি। এর ফলে চরম আর্থিক অনটনে স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হতো মোজ্জাফরকে। দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করতে হাত পাততে হয়েছে মানুষের কাছে।

তবে ৩ বছর আগে রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতে এসে পরিচয় হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. গোলাম কিররিয়া ফেরদৌসের সাথে। পরিচয়ের পর কেটে দুই বছর। যখন তিনি জানতে পারেন মোজ্জাফর আর চলাফেরা করতে পারেন না তখন তার অসহায়ত্ব দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন এই শিক্ষক। আর্থিক সহযোগিতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাকে দেয়া হয় একটি হুইল চেয়ার।

তবে হুইল চেয়ার টেনে নিয়ে যেতে কষ্ট হতো মোজ্জাফরের। তার এই কষ্টের কথা শুনে অসহায় মোজ্জাফরকে একটি ট্রাই সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিতে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করেন রাবির এই অধ্যাপক। পরে রাজশাহী বিভাগীয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপসচিব সৈয়দ মোস্তাক হাসানের সহযোগীতায় ও রাজশাহী প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে মোজ্জাফরকে একটি ট্রাই সাইকেলের ব্যবস্থা করে দেন এই শিক্ষক।

ট্রাই সাইকেল পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে মোজ্জাফর হোসেনের বলেন, ৮ বছর আগে গাছ কাটতে গিয়ে গাছটি আমার শরীরের উপর পরে আমার মেরুদন্ড ভেঙে যায়। অনেক চিকিৎসা নিয়ে আমার দুটি পা’ই অচল হয়ে যায়। আমার একটা ছেলে ও একটা মেয়ে। মেয়েটাকে বিয়ে দিলেও তার ‍বিয়ের টাকা আমি শোধ করতে পারিনি। আর ছেলে আমাকে দেখে না। রাজশাহীতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে আমার স্যাররের সাথে পরিচয় হয়। স্যার নানা ভাবে আমাকে সাহায্য করে যাচ্ছেন। তিনি আমাকে আর্থিক সাহায্য করার পাশাপাশি আমাকে একটা হুইল চেয়ার কিনে দেন। স্যারের সহযোগীতায় সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে আমাকে একটা ট্রাই সাইকেল দিয়েছেন। এটা দিয়ে আমি এখন ভালোভাবেই চলাফেরা করতে পারবো।

মোজ্জাফর বলেন, স্যারের সহযোগীতায় আমি গ্রামের বাজারে একটা দোকান দিবো। আশা করি সংসার চালাতে আমার আর কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না।

রাবি অধ্যাপক ড. গোলাম কিররিয়া ফেরদৌস বলেন, তার অসহায়ত্ব দেখে আমি তাকে ২ বার সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাকে একটি হুইল চেয়ার দেই পরে আত্রাই উপজেলার ইএনও 'র মাধ্যমে তাকে একটি ট্রাই সাইকেল দেয়া হয়। এটি তেমন কার্যকর হয়নি। এখন কয়েকমাস ধরে সে আবার সহযোগিতা চাচ্ছিলো। এইবার সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। তখন সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করি, রাজশাহীর সমাজসেবা পরিচালক মোস্তাক হাসানের কাছ থেকে। তিনি সমাজকল্যান বিভাগেরই ছাত্র। তাকে বলার পরই তিনি সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করেন। ১৫ দিন আগে আমি তাকে একটা এপ্লিকেশন জমা দেই আর আজ তিনি তাকে একটা ট্রাই সাইকেল উপহার দেন।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহীর সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক সৈয়দ মোস্তাক হাসান বলেন, স্যার আমার কাছে যখন এই বিষয়টি নিয়ে আসছেন, আমি তাকে সব ধরনের সহযোগীতা দেয়ার চেষ্টা করেছি। সমাজ সেবার অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের মাধ্যমে আমি একটি ট্রাই সাইকেলের ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

মোস্তাক হাসান বলেন, এধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আমাদের প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র নামের একটি আলাদা উইং আছে। এধরনের ব্যক্তিদের যে কোনো ধরনের সেবা দেয়া হয় এখানে। পাশাপাশি হুইল চেয়ার , ট্রাই সাইকেল, সাদা চরি, কর্ণার চেয়ার, টয়লেট চেয়ার, এলমো ক্রাচের মত বিভিন্ন ধরনের উপকরণও দেয়া হয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top