১ম দিনেই ইতালি ও হংকং-এ রপ্তানী
রাজশাহীতে আশানুরুপ ফলনে জমে উঠবে আম বাণিজ্য
বিশেষ প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৩ ০১:০৯; আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫২

আমের রাজধানী রাজশাহীতে এবার আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করেছন চাষি ও ব্যবসায়ী। সেই অনুযায়ী আম চাষিরা এখন গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সরকারি ভাবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেশি গুটি জাতের আম বাজারে তুলতে শুরু করেছেন। এদিকে প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রথম দিনেই রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে ৪৪০ কেজি আম রপ্তানী করা হয়েছে হংকং ও ইতালিতে।
রাজশাহীর আমের সুখ্যাতি দেশ-বিদেশের সবখানেই। প্রতিবছর আমের মৌসুম এলে আমচাষী ও ব্যবসায়ীদের আনন্দে মন ভরে উঠে। ব্যবসা সফল এই ফলের কদর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এবার আমের বাম্পার ফলনে আম বিক্রির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে জানিয়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। আমকে ঘিরে গড়ে উঠে শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মের অনলাইন ব্যবসায়ী। এখন তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে আম পরিপক্কতা পেতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা। ফলে আমকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গত কয়েক বছর বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা পরিস্থিতির কারণে রাজশাহীর আম বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়ে। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি ও রমজান পেরিয়ে যাওয়ায় আমের ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছেন আম চাষিরা। আমের মৌসুমে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতিদিন বিশেষ ট্রেন, কুড়িয়ার, পরিবহণসহ বিভিন্ন মাধ্যমে রাজশাহী থেকে কয়েশ কোটি টাকার আম যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সুস্বাদু ও পরিপক্ক আম পরিবহণে চালু হয় ম্যাংঙ্গো স্পেশাল ট্রেন, বিদেশেও রপ্তানি হয় রাজশাহীর আম, সংরক্ষণের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ হিমাগার।
রাজশাহী অঞ্চলের আম বৃহস্পতিবার (৪ মে) থেকে গাছ থেকে পাড়া ও বাজারজাত করা যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসন। আজ থেকে গুটি আম কেনা-বেচা করা যাচ্ছে। ফলে এখন রাজশাহীর আম বাজারে উঠতে শুরু করেছে। বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার আম সংগ্রহ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত মনিটরিং সংক্রান্ত সভায় ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রকাশ করা হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪ মে গুটি আম নামানো যাবে। গোপালভোগ ১৫ মে, লক্ষণভোগ বা লখনা ও রানিপছন্দ ২০ মে, হিমসাগর বা ক্ষীরশাপাতি ২৫ মে থেকে নামিয়ে হাটে তুলতে পারবেন বাগান মালিক ও চাষিরা। এছাড়া ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুন আম্রপালি এবং ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা ও বারি আম-৪ নামানো যাবে। ১০ জুলাই থেকে গৌড়মতি আম এবং ২০ আগস্ট ইলামতি আম নামানো যাবে। আর কাটিমন ও বারি আম-১১ সারা বছর সংগ্রহ করা যাবে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, বাজারে নিরাপদ, বিষমুক্ত ও পরিপক্ব আম নিশ্চিত করতে ‘ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডার’ প্রণয়ন করা হয়েছে। আম নামানোর নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী গাছ থেকে আম সংগ্রহ করতে হবে সবাইকে।
প্রসঙ্গত, এ বছর রাজশাহীর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে এবার আমের উৎপাদন গতবারের চেয়ে অনেক বেশি। এ বছর রাজশাহীর ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। আম উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৬ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯১২ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রাজশাহী নগরীর কোর্ট এলাকার আম ব্যবসায়ী বোরহান উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, আম গাছে অনেক পরিচর্যা করে ব্যাপক ফলন পেয়েছি। এবার আমের দামও ভালো হবে বলে জানান তিনি। বাঘার আম ব্যবসায়ী মানিক, রাশিদুল, ইয়াকুব আলী জানান, গত বছর ভরা মৌসুমে লখনা জাতের আম ৬০০-৮০০ টাকা মণ (৪০ কেজি) দরে এবং হিমসাগর ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি, ফজলি ৭শত থেকে এক হাজার টাকা মণ দরে বেচাকেনা হয়েছে। এবার আমের দাম অনেক বেশি হবে বলে আশা করছি। কারণ সব জিনিসের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। গাড়ী ভাড়া বেশি, তাই আম বিক্রয় করে লাভবান হওয়া যাবে।
আড়তদাররা বলছেন, চলতি বছরের শুরু থেকে আমের জন্য অনুকুল আবহাওয়া বিরাজ করায় এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। ব্যাপক আমের আমদানীও হবে কিন্তু বাজারে বাহিরের পাইকার কম আসলে দামও কম হতে পারে। জেলার দুর্গাপুার উপজেলার শাহবাজপুর এলাকার আম চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, বাগানগুলোতে সঠিক পরিচর্যা করায় এবার আমের গুণগত মান অনেক ভালো। অথচ গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক দামও ভালো হবে বলে আশা করেন তিনি। তিনি বলেন, গত বছর দর পতনের পিছনে করোনার প্রভাব ছিলো। স্থানীয় ব্যবসায়িদের সিন্ডিকেটের কারণেও চাষিরা দাম অনেক কম পেয়েছেন। এবার এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে লাভবান হবেন বলে আশা রয়েছেন তিনি। বানেশ্বর বাজারের আম আড়তদার বজলুর রহমান জানান, গত বছর প্রথম দিকে আমে বাজার অনেক ভালো ছিল। বর্তমানে এখও বাজারে আম আসেনি। তবে যারা বিভিন্ন বাগান থেকে আম কিনে বাজারে বিক্রি করছেন তারা লাভ হচ্ছেন।
বাঘা উপজেলার অমরপুর গ্রামের আম ব্যবসায়ীরা লায়েব উদ্দিন লাভলু জানান, গত বছর আম গাছে থাকতে হিমসাগর (ক্ষিরসাপাত) আম কিনেছেন ১৫‘শ টাকা লক্ষনভোগ ৮‘শ টাকা অন্যান্য আম ৮‘শ থেকে ১হাজার টাকা দরে। অর্থাৎ তারা বেশি দামে বাগান কিনেছেন। এখন বিভিন্ন জাতের আটি বা গুটি আমের পাশাপাশি রয়েছে খিরসাপাত, রানিপছন্দ লোক্ষনভোগ আম। কিন্তুু অন্য বছরের চেয়ে এবার বাজারে আমের আমদানি অনেক বেশি হবে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আমের উৎপাদন বেশি হাওয়াই এবার দাম কমও হতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি।
ইতালি ও হংকং বাঘার আমঃ
রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে ৪৪০ কেজি আম রপ্তানী করা হয়েছে হংকং ও ইতালিতে। বাঘা উপজেলা কৃষি অফিসার শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, রাজশাহীকে আমের জন্য বিখ্যাত বলা হলেও আম প্রধান অঞ্চল হিসাবে খ্যাত জেলার বাঘা উপজেলা। রাজশাহী জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে আট টিতে যে পরিমান আম উৎপাদ হয়, তার চেয়েও বেশি আম উৎপাদন হয় বাঘা উপজেলায়।এ ছাড়াও এখানকার আম অনেক সু-মিষ্ট। এ কারনে রাজশাহীর মানুষ বাঘাকে আমের রাজধানী বলে থাকেন। তিনি বলেন, প্রায় ৮-১০ বছর থেকে এ উপজেলার আম রপ্তানি হচ্ছে দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে। গত বছর ইতালি, হংকং, নেদার ল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও রাশিয়া সহ বেশ কিছু দেশে এ উপজেলার আম রপ্তানী করা হয়। ঠিক একই ধারাবাহিকতায় এ বছর জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা পাওয়ার পরদিন বৃহস্পতিবার বাঘার আড়পাড়া এলাকার একটি আম বাগান থেকে আম নামিয়ে প্যাকেজিং করে ঢাকার আদব ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৪৪০ কেজি গুঠি(চরুসা)আম রপ্তানী করা হয় ইতালি এবং হংকং-এ।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: