বন্যায় নদীর দুই পাড়ে ডাকাত আতঙ্ক

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ৮ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫৮; আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ২০:১৭

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উপকণ্ঠসহ সারা দেশের নদীপাড়ের বাসিন্দারা ডাকাত আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি বন্যার কারণে ছোট নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়ে দুই পাড় প্লাবিত করেছে। এর সঙ্গে প্রধান নদীগুলোর দুই পাড়ের কোনো কোনো স্থানের গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

নদীতে নৌকা বা ট্রলারযোগে সংঘবদ্ধ ডাকাত দল রাতে জেলে সেজে ঘোরাঘুরি করছে। সুযোগ বুঝে নদীপথ দিয়ে গ্রামে ঢুকে ডাকাতি করে তারা পালিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও। এ কারণে পুলিশের নৌ-পুলিশের সদর দপ্তর থেকে নৌ-পুলিশের ১১টি অঞ্চলের সব কর্মকর্তাকে সজাগ থাকার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ ব্যাপারে নৌ-পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকাল বা বন্যাকালীন সময়ে নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত টহল থাকে। নদীর দুই পাড়ে যেসব গ্রাম নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে যায়, ঐসব এলাকায় সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত টহল থাকে। এর পাশাপাশি বড় নদী ও ছোট নদীর মোহনায় আমাদের টহল জলযান মোতায়েন করা থাকে।

সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের থানায় যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পেলেই নৌ-পুলিশ জেলা পুলিশকে সহায়তা করতে এগিয়ে যায়।

পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ শাখার একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, বছরের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের বৃষ্টিতে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে অনেক নদীর সীমানা বসতবাড়ি পর্যন্ত ছুঁয়ে যায়। রাস্তাঘাটও পানিতে ডুবে যায়। ফলে নদীপাড়ের এসব বাসিন্দা চলাফেরার জন্য নিজেরা ছোট ছোট নৌকা ব্যবহার করেন। আবার অনেক ফেরিওয়ালা নৌকা ব্যবহার করে নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল বিক্রি করে থাকেন। আর এই সুযোগে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট সংঘবদ্ধ ডাকাত দল।

তারা দিনের বেলায় ঘুরে ঘুরে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের বাড়িঘর রেকি করেন। এরপর গভীর রাতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারযোগে টার্গেটকৃত বাড়িতে হামলা করেন। এক্ষেত্রে টার্গেটকৃত বাড়ির কিছুটা দূরে থেকেই তারা ইঞ্জিন বন্ধ করে দেয়। এরপর বাড়িতে হামলা চালিয়ে আবার ঐ ট্রলারেই দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এক্ষেত্রে অনেকেরই কিছু করার থাকে না। কারণ ভুক্তভোগীরা নৌপথে ট্রলারকে ধাওয়া করতে পারে না।

আবার ডাকাত দলের কাছে ধারালো অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রও থাকে। এ কারণে অনেকে প্রতিরোধ করার সাহস পায় না।

ঢাকা, মাদারীপুর ও নারায়ণগঞ্জের জেলা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হওয়া বেশ কয়েক জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি পুলিশ সদর দপ্তরে জানানোর পর নৌ-পুলিশকে নিয়মিত অভিযান চালানোর পাশাপাশি ছোট ছোট নৌযানগুলোর ওপর বিশেষ নজরদারি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি মাদারীপুরের ডাসার ও রাজৈর এলাকায় নদীপাড়ের বসতবাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ঐসব ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মনির বেপারী, হাসান মুন্সি, মিজান বেপারী, সামাদ সরদার, মিন্টু চৌকিদার, কবির হাওলাদার, হালিম হাওলাদার, সুমন, সজিব, সজল খলিফা, এমারত ফকির, সোহেল জমাদ্দার ও মনু ফকিরকে। এর মধ্যে সুমন, মিন্টু, সামাদ, হাসান ও মনির আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃত সবার বাড়ি পদ্মা নদীসংলগ্ন মাদারীপুর জেলায়। তাদের চক্রে আরও একাধিক সদস্য রয়েছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এই চক্রের সদস্যদের প্রধান টার্গেট নদীপাড়ের বসতবাড়ির দিকে।

নৌপুলিশের তথ্যমতে, নদীপাড়ের ডাকাতপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ফেনী, ভোলা, নোয়াখালী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, বরিশাল, পটুয়াখালী, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ ও পাবনা। এসব জেলার দুই থেকে তিনটি উপজেলা রয়েছে ডাকাতপ্রবণ এলাকা।

নৌ-পুলিশের অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) শফিকুল ইসলাম বলেন, বর্ষাকাল ও আশ্বিন-কার্তিক মাসে অতিবৃষ্টিতে নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়। এ কারণে আমাদের রাত্রিকালীন টহল জোরদার করা হয়ে থাকে।

বিশেষ করে জেলা পুলিশের সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে সমন্বয় করে ডিউটি থাকে। কারণ, নদীপথে টহলের জন্য নৌ-পুলিশের কাছে জলযান থাকে। নদীপথে নৌ-পুলিশ ছোট ছোট সন্দেহভাজন ট্রলারে তল্লাশি চালায়। আবার ডাকাতির খবর পেলে জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে জলযান দিয়ে নৌ-পুলিশ টহল দেয়।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top