ছয় বছর আগে গুম হওয়া যুবক প্রকাশ্যে, এলাকায় তুলকালাম

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ১০ আগস্ট ২০২১ ০৫:৪৮; আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৩:২৭

ছবি: সংগৃহীত

বগুড়া সদরের কর্ণপুর গ্রামের মধু ব্যবসায়ী মো. শামীম ছয় বছর আগে অপহরণের পর গুম হয়েছিলেন। তিনি মায়ের পরামর্শে ভারতে আত্মগোপন করলেও এ ব্যাপারে তার বন্ধু দোকান কর্মচারী আইজার ওরফে আজিজার রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।

সাড়ে চার মাস জেল ভোগের পর তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা একমাত্র আসামি আজিজারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।

সোমবার সকালে গুম হওয়া শামীম আসামিদের এলাকায় ঘোরাফেরা করলে তাকে আটকের চেষ্টা করা হয়। তিনি পালিয়ে থানায় গিয়ে উল্টো হামলার অভিযোগ করেন। এ নিয়ে এলাকায় তুলকালাম অবস্থার সৃষ্টি হয়। সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শামীমকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

সন্ধ্যায় সদর থানায় ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, শামীম তিন বছর আগে থেকেই এলাকায় আছে। ওই অপহরণ মামলার ব্যাপারে তাদের কিছু জানা নেই। কোন অভিযোগ না থাকায় শামীমকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

ছয় বছর আগে নিহত শামীম এলাকায় ফিরে এসেছেন এমন খবর পেয়ে সোমবার দুপুরে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীরা বগুড়া সদরের মানিকচক গ্রামে মৃত ধুল প্রামাণিকের ছেলে আজিজার রহমানের বাড়িতে যান।

আজিজার অভিযোগ করেন, শামীম তার বাল্য বন্ধু। সে তার কাছে এক লাখ টাকা, একটি বাইসাইকেল ও ২৬ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন পান। গত ২০১৫ সালের ২ জানুয়ারি শামীম এসব ফেরত দিতে তাকে ডাকলে তিনি কর্ণপুর এলাকার বাড়িতে যান। এ সময় মা ঝর্ণা বেগম শামীমকে লুকিয়ে অন্য স্থানে পাঠিয়ে দেন। কিছুদিন পর স্বর্ণা বেগম সদর থানায় তার ছেলেকে অপহরণের পর গুম করার ব্যাপারে আজিজারের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল পরে আজিজারকে গ্রেফতার করে।

দু’দফায় ছয়দিন রিমান্ডে নিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন। পরে এসআই মিলাদুন্নবী ২০১৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদালতে আজিজারের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন। আজিজার তার মা, ভাই ও স্ত্রী জানান, প্রায় আড়াই লাখ টাকা খরচ করে হাইকোর্ট থেকে জামিন লাভ করেন। পুলিশের নির্যাতনের চিহ্ন এখনও তার শরীরে আছে।

আজিজার অভিযোগ করেন, সোমবার সকালে হঠাৎ করে গুম হওয়া ওই শামীম তাদের মানিকচক এলাকায় সাইকেল নিয়ে ঘোরাফেরা করতে থাকে। তখন তার ভাই হাফিজার টের পেয়ে শামীমকে আটক করার চেষ্টা করলে সে এন্টিকাটার দিয়ে হামলার চেষ্টা চালিয়ে পালিয়ে যায়।

এরপর শামীম থানায় গিয়ে অভিযোগ করে, আজিজাররা তাকে হত্যা চেষ্টা করছেন। সদর থানা পুলিশ শামীমকে সঙ্গে নিয়ে মানিকচক এলাকায় যায়। তখন এলাকাবাসীদের কাছে অভিযোগ শোনার পর শামীমকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

থানায় শামীম জানান, তাকে আজিজার হত্যা চেষ্টা করলে তিনি ভারতে পালিয়ে গিয়ে ২৬ মাস জেল খেটেছেন। এরপর তিনি বাড়িতে ফিরে স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।

ছেলেকে লুকিয়ে রেখে দিয়ে অপহরণ ও গুমের মামলা করেছেন কেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে শামীমের মা ঝর্ণা বেগম সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান, আজিজাররা তার ছেলে শামীমসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে ১০৭ ও ১১৭ (সমাজে শান্তি রক্ষা) ধারায় মামলা করেছিলেন। পরে আদালত সে মামলা খারিজ করে দেন।

সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, শামীম তিন বছর আগে থেকেই বাড়িতে আছেন। সোমবার সে আজিজারদের এলাকায় ত্রাণ নিতে গেলে তাকে আটক করা হয়েছিল। সে থানায় এসে অভিযোগ করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে শামীমকে থানায় আনা হয়েছিল। কিন্তু কাগজপত্র যাচাই করে শামীমের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এছাড়া আজিজারের বিরুদ্ধে ঝর্ণা বেগমের মামলার কি অবস্থা সে সম্পর্কে তাদের কিছু জানা নেই। বর্তমানে কোনো অভিযোগ না পাওয়ায় শামীমকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

সূত্র: যুগান্তর/এএস



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top