রেলক্রসিং না মরণফাঁদ: রাজশাহীতে পাঁচ মাসে ৫ জনের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২২ ০২:০০; আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২২ ২২:৫০

ফাইল ছবি

রাজশাহীতে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সহস্রাধিক রেলক্রসিং অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এসব ক্রসিংয়ে পারাপারে নিতে হয় জীবনের ঝুঁকি। ঝুঁকিপূর্ণ এই রেলক্রসিংগুলো এখন যেন একেকটা মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

সর্বশেষ গত শুক্রবার রাজশাহী নগরীর ডিঙ্গাডোবা রেলক্রসিং ট্রনে কাটা পড়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক কিশোরের (১৫) মৃত্যু হয়েছে। এর আগে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে এই রেলক্রসিং এলাকায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত ১০ এপ্রিল সন্ধ্যায় ইফতারের আগে ডিঙ্গাডোবা ঈদগাহ এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তা ফারুক হোসেন (৪৫)। এর আগে গত বছরের ২৯ নভেম্বর একই রেলক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যান গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মী ডলি পারভিন (৩৭) ও অজ্ঞাত আরেকজন মারা যান। অপর দিকে চারঘাটে রেল ক্রসিং-এ একজন মারা যান।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সূত্র মতে, ১ হাজার ২৪৯টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ১ হাজার ২৮টি রেলক্রসিং এখনো অরক্ষিত। সুরক্ষিত রেলক্রসিংয়ের সংখ্যা মাত্র ২২১টি। এর অধীনে কেবল রাজশাহী নগরীতে রয়েছে ২৮টি রেলক্রসিং। তার মধ্যে আবার অরক্ষিতের সংখ্যা ১১টি। অরক্ষিত এসব রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ৭৫৭টির অনুমোদন দিলেও রেল কর্তৃপক্ষ সবগুলোতে এখনও পাহারাদার নিযুক্ত করতে পারেনি আর্থিক কারণে। তাই অরক্ষিত ক্রসিংয়ে নেই কোনো গেটম্যান ও গেট ব্যারিয়ার। নেই ডিভাইস পদ্ধতির সিগন্যাল সিস্টেমও। একরকম বাধ্য হয়েই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে এসব রেলক্রসিং পার হচ্ছে শত শত মানুষ ও যানবাহন।

ফলে ঝুঁকিপূর্ণ এই রেলক্রসিংগুলো যেন এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত দুই বছরে নগরীর রেলক্রসিংয়েই প্রাণ গেছে ১৩ জনের। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে নাটোরের আবদুলপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত লেভেল ক্রসিং (গেইট) রয়েছে ৮৭টি। এর মধ্যে রেলওয়ের অরক্ষিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা ২৫টি, অনুমোদিত ও সুরক্ষিত রেলক্রসিং ৬২টি। আর কেবল নগরীর মধ্যেই ২৮টি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে ১১টি অরক্ষিত ও অনুমোদিত ক্রসিংয়ের সংখ্যা ১৭টি। রাজশাহী মহানগরী এলাকার মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলক্রসিং, ভদ্রা, গৌরহাঙ্গা, দড়িখড়বোনা, বর্ণালী, বহরমপুর রেলক্রসিং, কোর্ট রেলগেট, চারখুঁটার মোড়, কাশিয়াডাঙ্গা রেলক্রসিংসহ ১৭টি ক্রসিং রেলের অনুমোদিত। এসব গেটে রেলওয়ের নিয়োগ দেয়া গেটম্যানরা কর্মরত থাকেন। তবে নগরীর রাজপাড়া থানার চারখুঁটার মোড়ে গেটটি বৈধ হলেও সেখানে নিয়োগ দেয়া হয়নি কোনো গেটম্যানকে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, নগরীর ১১টি ক্রসিং অরক্ষিত রয়েছে। এসব অনুমোদিত রেলক্রসিং ছাড়াও স্থানীয়রা তাদের চলাচলের সুবিধার্থে নিজেদেরমতো করে রেলক্রসিং তৈরি করেছেন। এসব ক্রসিংয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব রেলওয়ের নয়। তিনি বলেন, যেসব ক্রসিং অবৈধ সেগুলোতে নিজ দায়িত্বে পার হওয়ার মতো সতর্কীকরণ সাইনবোর্ডে দেয়া থাকে। ওইসব রেলক্রসিং দিয়ে সাধারণ পথচারী তাদের নিজের দায়িত্বে দুইপাশ ভালোভাবে দেখে পার হতে হবে। এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে রেলওয়ের কোনো ধরনের দায়ভার থাকে না। এদিকে, নগরীর একটি অনুমোদিত ক্রসিংয়ের গেটম্যান অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন পর রেললাইনে সংস্কার হওয়ার কারণে নগরীর মধ্য দিয়ে ট্রেন চলাচলের গতি বেড়েছে। এতে প্রায় সময় ঘটছে প্রাণহানি। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ রেলক্রসিংগুলোর দিকে তেমন কোনো নজর দেন না।

নগরীর কোনো কোনো রেলক্রসিং আছে যেগুলোতে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল কম। প্রতি ৮ ঘণ্টায় একজন করে গেটম্যান থাকার কথা থাকলেও অনেক রেলক্রসিংয়ে ২৪ ঘণ্টায় দু’জন থাকছে। রাজশাহী জিআরপি থানায় দায়েরকৃত ইউডি মামলা সূত্রে জানা যায়, গত প্রায় দুই বছরে নগরী এলাকার রেলক্রসিংয়ে ১৩ জনের প্রাণহানি হয়েছে। ২০১৩ সালের মে মাস থেকে ২০১৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকার রেলক্রসিংয়ে এসব প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। পশ্চিম রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কেবলমাত্র আর্থিক কারণে সবগুলোতে পাহারাদার নিযুক্ত করতে পারেনি বলে সূত্র নিশ্চিত করে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top