পেঁয়াজের কেজিতে ৪ টাকা লোকসান কৃষকের

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ০৩:৩৮; আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ২০:২৬

 লোকসানের মুখে পড়েছেন পেঁয়াজ চাষিরা।

খুলনা অঞ্চলে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসানের মুখে পড়েছেন পেঁয়াজ চাষিরা। প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে চাষিদের খরচ হয়েছে ২৭ টাকা। অথচ পচনশীল পণ্য হওয়ায় কেজিতে চার টাকা লোকসান দিয়ে ২৩ টাকা বিক্রি করছেন তারা। বেপারি, পাইকার ও ব্যবসায়ীর হাত ঘুরে খুচরা বাজারে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবার খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহে পেঁয়াজের প্রচুর আবাদ হয়েছে। বেপারি ও পাইকাররা এসে এসব এলাকার পেঁয়াজ কিনে খুলনা ও বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে চাষির খরচ হয়েছে ৩০-৩২ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে ২৬ থেকে ৩০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হয়।

ঝিনাইদহের কৃষক সৌমিত্র কুমার রায় বলেন, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদন করতে ৩০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। জমি তৈরিতে ৬০০ টাকা বিঘা হিসেবে পাঁচটি চাষে ব্যয় হয় তিন হাজার টাকা। ডিএবি সার ৪০ কেজিতে এক হাজার ৪০০, পটাশ সার ২৫ কেজিতে ৪৫০, ইউরিয়া সার ৮০০, সালফার ৬০০, দানাদার ওষুধ চার কেজিতে ৬০০, জমি তৈরিতে ৩০ জন শ্রমিকের খরচ ১৫ হাজার, সেচ খরচ এক হাজার, আগাছা বাছাইয়ের জন্য শ্রমিক খরচ চার হাজার, ওষুধ স্প্রে শ্রমিকের খরচ দুই হাজার ৫০০ ও পেঁয়াজ তোলার জন্য শ্রমিকের খরচ চার হাজার টাকা।

তিনি বলেন, এতকিছুর পর উৎপাদিত পেঁয়াজ কেজিতে ৪-৫ টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হয়। কারণ পেঁয়াজ পচনশীল। ঘরে রেখে দিতে গেলে আরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এজন্য কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছি।
খুলনার পেঁয়াজের বেপারি ব্যবসায়ী মঞ্জুর হোসেন বলেন, ক্ষেত থেকে তোলার পর অনেক কাটা পেঁয়াজ থাকে। যা আমাদের বাছাই করতে হয়। সে হিসাব করে কৃষকের কাছ থেকে ২২ থেকে ২৩ টাকা কেজিতে কিনি। এসব পেঁয়াজ পাইকারদের কাছে ৫০ পয়সা লাভে বিক্রি করি আমরা। পাইকাররা তা ৫০ পয়সা লাভে ২৪ টাকা কেজিতে বিক্রেতাদের দেন। খুচরা বিক্রেতারা সাধারণ ক্রেতার কাছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।

খুলনার সোনালী ভাণ্ডার আড়তের ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল বলেন, জমি থেকে পেঁয়াজ তোলার পর তিন দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। যা বাছাই না করলে টেকানো দায়। তাই আমাদের কাছে পেঁয়াজ আসার পর বাছাই করা হয়। এ কারণে কৃষকরা উৎপাদন খরচের চেয়েও কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। না হয় এসব পেঁয়াজ ধরে রাখলে পচে যাবে। এতে কৃষকের পাশাপাশি আমরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।

তিনি বলেন, খুলনা অঞ্চলে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হয়। বিদেশ থেকে আমদানি পেঁয়াজ খুলনায় তেমন চলে চলে না। তাই আমদানি পেঁয়াজ চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় চলে যায়। খুলনার সব উপজেলায় আমদানি পেঁয়াজ পাওয়া যায় না। এখানে দেশি পেঁয়াজেরই চাহিদা বেশি।

ভ্যানে করে পেঁয়াজ বিক্রি করা আজমল হোসেন বলেন, পেঁয়াজ বস্তা হিসেবে কেনার পর বাছাই করে বিভিন্ন গ্রামে বিক্রি করি। কখনও চার কেজি ১০০ টাকা, আবার কখনও পাঁচ কেজি ১০০ টাকা বিক্রি করি। এগুলো মুড়ি কাটা পেঁয়াজ। বেশিদিন রাখা যায় না। এজন্য কম দাম পেলেও বিক্রি করে দিই। দেশি রাখি পেঁয়াজ ভ্যানে ২৫ টাকায় বিক্রি করলে আমরা লোকসান দিতে হয়। কারণ ওসব পেঁয়াজের কেজি ২৩-২৪ টাকা কেনা পড়ে আমাদের।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top