ভেঙে ফেলা হলো মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত যশোরের স্বাধীনতা মঞ্চ

রাজ টাইমস | প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২২ ০৭:০২; আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৭:৪২

ছবি: সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত যশোর টাউন হল ময়দানের স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চ ভেঙে ফেলা হয়েছে। মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ রেখে এ মঞ্চের উন্নয়ন ও সংস্কার করার কথা ছিল। সেটি না করে ভেঙে ফেলায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যশোরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নেতাকর্মীরা।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ায় এটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখেই নতুন মঞ্চ করা হবে।

১৯৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর দেশের প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা যশোরের ঐতিহাসিক টাউন হল ময়দানের ‘উন্মুক্ত মঞ্চে’ প্রবাসী সরকারের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ সরকারের ওই প্রথম জনসভা থেকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ ‘ওয়্যার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও জামায়াতে ইসলাম, মুসলিম লীগসহ সব ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সেদিনের সেই উন্মুক্ত মঞ্চ বর্তমানে ‘স্বাধীনতা মঞ্চ’ নামে পরিচিত হলেও সংস্কারের অভাবে দৈন্যদশায় পরিণত হয়। মাঝে মাঝে ‘চুনকাম’ করা হলেও এ মঞ্চের সংস্কার করা হয়নি কখনো। অবশেষে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে যশোরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নে এ মঞ্চের সংস্কার কার্যক্রম শুরু হয়।

চলতি বছরের স্বাধীনতা দিবসের দিন মঞ্চটির উন্নয়ন ও সংস্কারকাজের উদ্বোধন করেন সরকারের স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (৩ জুন) এ মঞ্চের সংস্কার কাজ শুরু হয়। সংস্কার কাজের শুরুতেই ভেঙে ফেলা হয় এ মঞ্চের ছাদ।

এ বিষয়ে জেলার সংস্কৃতি অঙ্গনের নেতারা শনিবার (৪ জুন) সন্ধ্যায় যশোর ইনস্টিটিউট পরিচালনা কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। যশোর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ বুলবুল জানান, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এ মঞ্চ ভেঙে ফেলার বিষয়ে হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ লিটু জানান, প্রায় ৭০ বছরের পুরোনো এ মঞ্চটি বর্তমানে জরাজীর্ণ হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাই এটা ভেঙে পরবর্তীতে মূল কাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে নতুন করে নির্মিত হবে।

তিনি বলেন, এ মঞ্চ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক। এটা আমাদের যশোরের অহংকারের প্রতীক। এটা বিনষ্ট করা কারও কাম্য হতে পারে না।

যশোর ইনস্টিটিউটের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু জানান, টাউন হল ময়দানের শতাব্দি বটতলায় রওশন আলী মঞ্চটি নির্মাণের পর থেকে স্বাধীনতা উন্মুক্ত মঞ্চে এখন আর কোনো অনুষ্ঠান হয় না। বিশেষ দিবস ছাড়া বছরভর মঞ্চটি অবহেলায় পড়ে থাকে। চারপাশে নোংরা আবর্জনা ভরে থাকে। এছাড়া ইনস্টিটিউট আঙিনার পুকুরটি বিনা ইজারায় মাছ চাষ চলে। মাঠের আরেক পাশে চলে পুরাতন পোশাকের ব্যবসা। মাঠের বিভিন্ন কোনায় গড়ে উঠেছে অস্থায়ী সব দোকানপাট। পোস্ট অফিসের প্রাচীরের পাশের ড্রেন পরিণত হয়েছে প্রস্রাবখানায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন দোদুল জানান, এই দিনে যশোরের এই মঞ্চে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী সরকারের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। শুধু যশোরের মানুষদের জন্য এ গৌরব নয়, এ গৌরব গোটা জাতির।

এ মঞ্চ সংস্কার করা একটি ভালো উদ্যোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত অবকাঠামো অক্ষুণ্ন রেখে সবকিছু রেখে সংরক্ষণ করা অতি জরুরি।



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top