সংকটে অর্থনীতি, সামনে আরও শঙ্কা!

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:১৩; আপডেট: ১৬ মে ২০২৪ ০৮:০৯

- ছবি - ইন্টারনেট

গত কয়েক মাস ধরেই দেশের অর্থনীতিতে সংকট চলছে। দিন দিন সেই সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সেই সংকটে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিএনপিসহ বেশ কিছু বিরোধী দল ভোট বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় অর্থনৈতিক সংকট আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিতে কতটা সংকট বিরাজ করছে, কী কারণে এই সংকট এবং সামনে আরও কী শঙ্কা আছে সে বিষয়ে একটি সংবাদ ভাষ্য প্রকাশ করেছে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে। সিনিয়র সাংবাদিক আবদুর রহিম হারমাছির সেই সংবাদভাষ্যটি পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

ভালোই চলছিল…৷ নানা বাধা বিপত্তির মধ্যেও এগিয়ে চলছিল বাংলাদেশ; মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছিল অর্থনীতি৷ করোনার বছর ছাড়া গত ১০ বছরে গড়ে প্রায় সাত শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) অর্জন করেছে বাংলাদেশ৷

অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারতকেও পেছনে ফেলেছিল৷ আন্তর্জাতিক মহলের সুনামও কুড়াচ্ছিল বেশ ভালোই৷ বিশ্ব আর্থিক খাতের মোড়ল দুই সংস্থা বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা ও দেশ বাংলাদেশের প্রশংসা করছিল৷ অনেকে বাংলাদেশকে ‘মডেল’ হিসেবে নেওয়ারও পরামর্শ দিয়েছিলেন৷

কিন্তু সেই দিন আর নেই৷ বেশ বড় ধাক্কা খেয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি; সব সূচকই এখন নেতিবাচক৷ মূল্যস্ফীতির পারদ ১০ শতাংশে উঠেছে৷ খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাড়ে ১২ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে৷ রফতানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সও কমছে৷ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বিদেশি ঋণ ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে; এখন যে বিদেশি ঋণ আসছে, তার ৭০ শতাংশই চলে যাচ্ছে আগে নেওয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে৷

কোনো দেশের ঋণ-রাজস্ব অনুপাত ২০০ থেকে ২৫০ শতাংশ পর্যন্ত মেনে নেয়া যায়৷ কিন্তু বাংলাদেশে ঋণ-রাজস্ব অনুপাত ৪০০ শতাংশের বেশি৷ সে হিসাবে সরকারের ঋণ বিপজ্জনক মাত্রা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে৷ বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে৷ বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ রিজার্ভের চেয়ে বেশি৷

এদিক থেকেও বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ঝুঁকিপূর্ণ৷ আগামী বছর থেকে বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধের চাপ বাড়তে থাকবে৷ ডলারের জোগান না বাড়লে পরিস্থিতি খুবই খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে৷

দিন যত যাচ্ছে, অর্থনীতিতে সংকট ততই বাড়ছে৷ সরকার চেষ্টা করছে; কিন্তু আশার আলো দেখা যাচ্ছে না৷ উল্টো ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সংকটের নতুন ডালপালা উঁকি দিচ্ছে৷ অন্যতম প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে এক মাস ধরে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে চলেছে৷ এ কর্মসূচিকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ফের জ্বালাও-পোড়াও শুরু হয়েছে৷ বাসসহ ট্রেনেও আগুণের ঘটনা ঘটছে৷

ভোট যত ঘনিয়ে আসবে; সংঘাত ততই বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে৷ রাজনীতির চাকায় আবারও পিষ্ঠ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি৷ সরকারকে অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়ার পাশাপাশি বিএনপির নির্বাচন বর্জনের আন্দোলনও সামলাতে হচ্ছে৷

এখন প্রশ্ন হচ্ছে-অর্থনীতির এই বেহাল দশা কেন হলো? মূলত দুই ভুলে তছনছ হয়ে গেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি; ওলোটপালট হয়ে গেছে সব হিসাবনিকাশ৷ এই দুই ভুলের একটি হচ্ছে-দীর্ঘদিন ডলারের দর একই দামে ‘স্থির’ রাখা৷ আর আরেকটি হচ্ছে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশে আটকে রাখা৷

দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল অর্থনীতি৷ প্রধান সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরছিল৷ স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল, বঙ্গবন্ধু টানেল ও বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোকে ঘিরে দেশের উদ্যোক্তারা নতুন করে বিনিয়োগের ছক কষছিলেন৷ কিন্তু পৌনে দুই বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সব আশা আকাঙ্ক্ষা মাটি করে দিয়েছে; অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে৷ পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলার৷

দেড় বছর আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় ‘স্থির’ ছিল ডলারের দর৷ গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর বাড়তে থাকে ডলারের দর; টানা বাড়তে বাড়তে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারেই এখন প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে৷ গত ১২ নভেম্বর ডলারের দাম নামমাত্র ৫০ পয়সা কমানো হয়েছে৷ কিন্তু সেই দরে ডলার মিলছে না৷

ব্যাংকগুলো ১১৫/১১৬ টাকায় নগদ ডলার বিক্রি করছে; এলসি (আমদানি ঋণপত্র) খুলতে ১১৬/১১৭ টাকায় ডলার কিনতে হচ্ছে৷ প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিটেন্স সংগ্রহ করছে ১২২/১২৩ টাকায়৷ কিছুদিন আগে খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ১২৮ টাকায় উঠেছিল৷ এখনো ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে৷

২০২১ সালের অক্টোবরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা৷ অর্থাৎ দুই বছর আগে এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে প্রতি ডলারের জন্য ৮৪ টাকা ৮০ খরচ করতে হতো৷

বুধবার (২৯ নভেম্বর) লেগেছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা৷ এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এই দুই বছরে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের মুদ্রা টাকার মান কমেছে ৩০ দশমিক ৪১ শতাংশ।

বর্তমান বিশ্ব পেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে উদ্বেগজনক ও স্পর্শকাতর সূচক মূল্যস্ফীতি যে প্রায় ১০ শতাংশে উঠেছে, তার অন্যতম প্রধান একটি কারণ ডলারের এই উল্লম্ফন৷ সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবেই গত অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ৷ খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ৷ যা এক যুগ বা ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷

শুধু মূল্যস্ফীতি নয়, ডলারের উল্লম্ফনের প্রভাব অর্থনীতির সব খাতেই পড়েছে৷ রিজার্ভ কমতে কমতে উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে৷ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে৷ কিন্তু এরপর থেকে কমছেই অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক৷ আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যয় সংকোচনের পদক্ষেপ নিয়েও রিজার্ভের পতন ঠেকানো যায়নি৷ উল্টো দিন যতো যাচ্ছে, রিজার্ভ কমছেই৷

সবশেষ গত সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ ওইদিন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম৬ হিসাবে বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার৷ আর বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘গ্রস' হিসাবে ছিল ২৫ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার৷

সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি (৪.৭ বিলিয়ন) ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পাওয়া যাবে৷ তার আগে রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স বাড়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই৷ বিদেশি ঋণ-সহায়তা ও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগও (এফডিআই) নিম্মমুখী৷

এ পরিস্থিতিতে আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ না পাওয়া পর্যন্ত রিজার্ভ বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই৷ তবে, আইএমএফের ঋণ পাওয়া নিয়েও আছে সংশ্রয়৷ সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রর সম্পর্ক খুব বেশি ভালো যাচ্ছে না৷ আর যুক্তরাষ্ট্রের কথামতো অনেক সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ৷ সেটা যদি হয়, তাহলে কিন্তু আইএমএফের দ্বিতীয় কিস্তির ঋণ আটকে যেতে পারে৷ তখন কিন্তু সংকট আরও ঘনীভূত হবে৷

এখন প্রতি মাসে পাঁচ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসাবে বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে চার মাসের কম সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে৷ আমদানি বেড়ে যদি ছয় বিলিয়ন হয়, তাহলে কিন্তু তিন মাসের খরচ মিটবে৷ তার মানে রিজার্ভ কিন্তু উদ্বেগজনক পর্যায়ে নেমে এসেছে; আরও যদি কমে যায়, তাহলে কিন্তু বড় বিপদ ডেকে আনবে৷

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) ঢাকার প্রথমসারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলো ‘ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ কমে ১৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে' শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ তবে রিজার্ভের এই হিসাব নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবাদ জানিয়েছে৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের তাৎক্ষণিক ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ এখন ১৯ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার৷

এই সূচকগুলো বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্থনীতি মোটেও ভালো নেই৷ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সব দেশেই পড়েছে৷ সব দেশেই ডলারের দর বেড়েছে; মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল৷ সামাল দিয়ে তারা কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছে৷ সব দেশেই মূল্যস্ফীতি কমে সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে৷

কিন্তু বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি কমছে না৷ ডলার সংকট কাটছে না; ডলারের বাজারে অস্থিরতা যাচ্ছে না৷ তাহলে প্রশ্ন জাগে কী করছে সরকার? কী করছে বাংলাদেশ ব্যাংক৷ সব দেশ পারলে বাংলাদেশ পারছে না কেন? গলদ কোথায়? বাংলাদেশ কী ঠিকঠাক মতো ব্যবস্থাপনা করছে না৷?

এখানে দুটি বিষয় পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন৷ দীর্ঘদিন ডলারের দর ধরে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক ঠিক কাজটি করেনি৷ ওইটা ছিল সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত৷ আরেকটি ভুল ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের৷ মূল্যস্ফীতি পারদ চড়ছিল; ৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উঠে গেল—তারপরও ৯ শতাংশ সুদহার দীর্ঘদিন ধরে রেখেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক৷

করেনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব সত্ত্বেও থাইল্যান্ড, ভারত, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে৷ সুদের হার বাড়িয়ে চাহিদা কমানোর নীতি অবলম্বন করে এসব দেশ সফলভাবে মূল্যস্ফীতি কমাতে পেরেছে৷

বেশি দিন আগের কথা নয়; এক বছর আগে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশে উঠেছিল৷ অবিশ্বাস্য তথ্য হচ্ছে-অক্টোবরে সেই মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে দ্বীপদেশটি৷

অথচ বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি চড়ছে৷ গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ; এই অক্টোবরে তা বেড়ে প্রায় ১০ শতাংশ-৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে উঠেছে৷ এখন অবশ্য সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে৷ কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে৷ এই দুই ভুলের মাশুলই বাংলাদেশকে এখন দিতে হচ্ছে৷ আরও কতদিন দিতে হবে কে জানে?

দুর্দশাগ্রস্ত শ্রীলংকার ঘুরে দাঁড়ানো রূপকথার গল্পের মতো শোনালেও অর্থনীতির প্রচলিত নীতির কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমেই এই অর্থনৈতিক সংকট সামাল দিয়েছে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা৷ শ্রীলঙ্কার এই ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখে চলেছেন দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ৬৩ বছর বয়সী পি নন্দলাল বীরাসিংহে৷

অর্থনৈতিক বিপর্যয় নিয়ে তিনি কয়েক বছর আগেই শ্রীলঙ্কাকে সতর্ক করেছিলেন৷ তখন তিনি শ্রীলঙ্কার উপগভর্নর ছিলেন৷ কিন্তু তখন তার সতর্কবার্তাগুলো দেশটির সরকার আমলে নেননি৷

এমন অবস্থায় আগাম অবসর নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান নন্দলাল৷ তবে গত বছর শ্রীলঙ্কা চরম অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে পড়ার পর দেশটিকে বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের জন্য আবারও তাকে ফিরিয়ে আনা হয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়৷

বলা যায়, নন্দলাল বীরাসিংহের নেতুত্বেই শ্রীলঙ্কা অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে কাটিয়ে উঠছে; ৭০ শতাংশে উঠে যাওয়া মূল্যস্ফীতি ১ দশমিক ২ শতাংশে নেমে এসেছে৷ নন্দলাল বীরাসিংহের প্রশংসা করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এখন সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে৷

এখানে একটি বিষয় ছোট করে হলেও বলা প্রয়োজন৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন৷ তিনি চেষ্টা করছেন…৷ কিন্তু এই যে এত সংকট-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তারপরও বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কোনো উদ্যোগ কিন্তু চোখে পড়ে না৷ এই কঠিন সময়ে যার নেতৃত্ব খুবই প্রয়োজন, তিনি কেনো অনুপস্থিত-এই বিষয়টি সংবাদিক, অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও অবাক করছে৷

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালও অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন৷

গত ২৭ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের অর্থনীতি, আমাদের ভবিষ্যৎ, আমাদের অনেক কিছুই রক্ষা করতে হলে এই নির্বাচনটাকে ফ্রি, ফেয়ার ও ক্রেডিবল করতে হবে৷’একই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ভোটের পর অর্থনৈতিক চাপ আসতে পারে৷’

তাহলে কি বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে? নাকি অতীতের মতো চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ইতিবাচক ধারায় ফিরবে-সেটাই এখন দেখার বিষয়৷ তবে সামনে দিনগুলো যে মসৃণ হবে না সেটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়৷

-ডয়চে ভেলে



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top