রামেকের ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সামনেই মশার প্রজননক্ষেত্র

রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ১৮ জুলাই ২০২৩ ১৫:৪০; আপডেট: ১৪ মে ২০২৪ ২৩:০৩

ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) পক্ষ থেকে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে বিশেষ অভিযানসহ জরিমানাও করা হচ্ছে। এরপরও মশার উৎপাত থেকে মুক্তি পাচ্ছে না নগরবাসী। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বিশেষায়িত ডেঙ্গু ওয়ার্ডের সামনেই দেখা গেছে মশার প্রজনন ক্ষেত্র। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন রোগীর স্বজনরা। খবর যুগান্তরের। 

তবে রামেক কর্তৃপক্ষ বলছে, হাসপাতালের আশপাশ নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ওষুধও ছিটানো হচ্ছে। সোমবার চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এক শিশুসহ আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। ময়মনসিংহেও আরও এক ডেঙ্গু রোগী মারা গেছেন। ব্যুরোর পাঠানো খবর-

রাজশাহী : সোমবার সকালে রামেক হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভেতরে ঝোপঝাড় পরিষ্কারের কাজ চলছে। কিন্তু জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশা দেদার প্রজনন করছে। হাসপাতালের জরুরি ও বহির্বিভাগের বেশকিছু জায়গায় এমন চিত্র দেখা গেছে। এছাড়া ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষায়িত ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের সামনেও জমে থাকা ময়লা-শ্যাওলাযুক্ত পানিতে মশার অবাধ বিচরণ দেখা গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত এক আত্মীয়কে দেখে এই ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে এরশাদ আলী নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার চাচাতো ভাই ঢাকা থেকে আসার কয়েক দিন পরই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এরপর হাসপাতালে ভর্তি। এখানকার চিকিৎসা ভালো। কিন্তু বাইরের পরিবেশটা ভালো না। দুঃখজনক হলো-ওয়ার্ডের সামনেই ময়লা পানিতে মশা জন্ম নিচ্ছে। এ বিষয়ে নজর দেওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহম্মদ বলেন, হাসপাতালে মশার প্রজনন ক্ষেত্র থাকার কথা নয়। আমি নিজে ঘুরে ঘুরে সবকিছু তদারকি করছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ মেডিসিন দেওয়া হচ্ছে। তারপরও যদি কোথাও দুর্বলতা থাকে, বিষয়টি আমি দেখব।

এদিকে মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। রাসিকের ড্রেনগুলোই মশার উর্বর প্রজনন ক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত। ময়লা-দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানিতেই এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে। রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কীটতত্ত্ব বিভাগের তথ্যমতে, নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডে ৭৫টি স্থানের লার্ভা সংগ্রহ করে ২৮টিতেই মিলেছে এডিস মশার লার্ভা।

এ বিষয়ে রাসিকের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা স্থায়ী কমিটির সভাপতি সরিফুল ইসলাম বাবু বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সজাগ। সোমবার থেকে ১৫ দিনব্যাপী অভিযানের উদ্বোধন করা হয়েছে। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধ শুধু রাসিকের পক্ষে সম্ভব নয়। নগরবাসীকেও এগিয়ে আসতে হবে।

এদিকে রামেক হাসপাতালের ৩০ নম্বর ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে মোট ২৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন। এ ছাড়া এ পর্যন্ত মোট ৮৫ জন হাসপাতাল থেকে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬০ জন।

ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেঙ্গু ইউনিটের ফোকাল পারসন ডা. ফরহাদ হোসেন হীরা জানান, ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরিফ (২৭) নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ি ময়মনসিংহ নগরীর আকুয়া এলাকায়। তিনি ঢাকা থেকে জ্বর নিয়ে ১২ জুলাই ময়মনসিংহ মেডিকেলে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি আরও জানান, ২৪ ঘণ্টায় নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন ১৭ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৪ জন।

এদিকে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে ডেঙ্গু প্রতিরোধে ক্রাশ প্রোগ্রাম চলছে। এডিস মশার লার্ভা ধ্বংস করতে প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় অভিযান চালানো হচ্ছে। সিটি মেয়র ইকরামুল হক টিটু জানান, ফগার মেশিন দিয়ে এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড প্রয়োগের পাশাপাশি নিয়মিত মাইকিং, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

সোমবার দুপুরে নগরীর গুলকিবাড়ি এলাকার দুটি বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ায় ভবন মালিকদের ২ মামলায় ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন ভ্রামমাণ আদালত।

চট্টগ্রাম : জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার ডেঙ্গু এক শিশুসহ আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের একজন ১৫ বছরের মো. আলভী। সে নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার বাসিন্দা। আলভী রোববার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নগরীর বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে ভর্তি হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। অপরজন ৩৮ বছর বয়সী শারমিন হেনা রিতা। তিনি শনিবার একই হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হন। সোমবার ভোরে মারা যান। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়া ১৮ জনের মধ্যে ৯ জন শিশু, ৬ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী। এর মধ্যে চলতি মাসেই মারা গেছেন ৯ জন।

ফরিদপুর : রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৩ জনসহ জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৪০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বর্তমানে জেলায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১১২ জন। ঈদের পর থেকে জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ৩১৭ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।

এর মধ্যে ২০৫ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দিকুর রহমান জানান, রোগের প্রকোপ যাতে না বাড়তে পারে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়ে জেলার বিভিন্ন স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

বগুড়া : বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ সাহারুল ইসলাম জানান, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সোমবার সাতজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চারজন ও বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তিনজন।

বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ১৪ জন। বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, তার পৌরসভার ২১ ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা জনসচেতনতা বাড়াতে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছেন। মশা নিধনে আপাতত ২০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এ বরাদ্দ আরও বাড়ানো হবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top