রাসেল'স ভাইপার সাপের কামড়ে কেউ আক্রান্ত হলে করণীয় কী?

মারুফ হোসেন মিশন | প্রকাশিত: ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৩৫; আপডেট: ৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৮:৪৫

- ছবি - ইন্টারনেট

ইতোমধ্যে আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্টের মাধ্যমে জানিয়েছি প্রথমবারের মতো সাতক্ষীরায় জেলার কলারোয়া উপজেলার কয়েকটি গ্রামে তীব্র বিষধর রাসেল'স ভাইপার সাপ দেখা মিলেছে। পোস্টটি প্রায় ৪০০ জন শেয়ার হয়েছে। ফলে অনেকে সচেতন হয়েছেন বলে আশা করছি। কোথায় এন্টিভেনাম পাওয়া যায় সেটাও অনেকে জানতে পেরেছেন।

আজকে আমি বলব এই সাপে কাটলে কী কী করবেন আর কী কী করবেন না তা নিয়ে।

এই সাপের কামড়ে কৃষকেরা বেশি আক্রান্ত হয়। কারণ সাপটি সাধারণত বসতবাড়িতে প্রবেশ না করে মাঠে বিভিন্ন শস্যক্ষেতে থাকে।

স্বভাবে রাসেল ভাইপার খুবই অলস এবং ঘুমকাতুরে। নদীতে ভাসতে ভাসতেও এরা ঘুমায়, দেখা গেল একটি কচুরীপানার স্তুপের উপর ঘুমাতে ঘুমাতে পঞ্চাশ কিলোমিটার বা একশো কিলোমিটার দূরে কোথাও উঠল ! এভাবেই এরা পদ্মা নদী ও তার শাখা-প্রশাখা ধরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

পরে নদীর পাশের কোনো গ্রাম বা মাঠে এরা গেঁড়ে বসে। শুকনো ঘাসপাতার উপর এমনভাবে ছদ্মবেশ করে মিশে যায় যে, কারো সামনে শুয়ে থাকলেও বুঝতে পারে না। একদমই নড়াচড়া করে না, এদের গায়ের রং ও শুকনো ঘাসপাতার রং একই রকম হওয়ায় তাদের শনাক্ত করা যায় না। ফলে শিকারী তাদের একদম কাছে চলে আসলে তৎক্ষনাৎ কামড় বসিয়ে দেয়। এরা এক হাত দূরের কোনো লক্ষবস্তুকে আক্রমণ করতে সক্ষম।

এদের কামড়ের গতিও অন‍্য সব সাপের তুলনায় অনেক দ্রুত গতির ! বিষদাতও দেশের অন‍্য সকল সাপের চেয়ে বড় ! এতটাই বড় যে যদি কেউ এদের ধরে আর তার হাতের আঙুল যদি এর ঠোটের নিচের দিকে থাকে তবে রাসেল ভাইপার তার নিজের থুতনি ফুটো করে আপনার হাতের আঙুলে বিষ ঢুকিয়ে দেবে! অতএব সাবধান, কেউ এদের ধরতে যাবেন না।

এবার আসি এই সাপের কামড়ে কেউ আক্রান্ত হলে করণীয় কী?

যেকোনো সাপে কাটলে ওঝার কাছে যাওয়া যাবে না। কারণ ওঝারা বিষ নামাতে পারেন না। আবারো বলছি 'ওঝারা বিষ নামাতে পারেন না'। বাংলাদেশে সাপে কাটা বহু মানুষ ওঝার কাছে গিয়ে কালক্ষেপণ করায় জীবন হারিয়েছেন।

সাধারণত পদ্মা গোখরা/খৈয়া গোখরা সাপ সবসময় বিষ প্রয়োগ করে না। ২০% কামড়ে তারা বিষ প্রয়োগ করে। বাকি ৮০টা ড্রাই বাইট মারে। যেসব কামড়ে বিষ থাকে না সেই সব রোগীকে কবিরাজ-ওঝারা ঝাঁড়ফুক দিয়ে সারিয়ে তোলে। ড্রাই বাইটে আক্রান্ত রোগী এমনিতেও মরে না। ওই যে কথায় আছে না, 'ঝড়ে বক পড়ে, ফকিরের কেরামতি বাড়ে' সেই অবস্থা। কিন্তু রাসেল'স ভাইপার শতকরা ৯৯ ভাগ কামড়েই এরা বিষ প্রয়োগ করে। তাই কবিরাজের কাছে না গিয়ে ১০০ মিনিটের মধ্যে এন্টিভেনাম দিতে হবে।

সাপে কামড়ানোর পরবর্তী ১০০ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে এন্টিভেনাম পুশ করলে বেঁচে যায়ওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%। তাই রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে এন্টিভেনাম দিতে হবে। সাতক্ষীরার কোথাও কেউ সাপের কামড়ে আক্রান্ত হলে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাবেন। সেখানে এন্টিভেনাম আছে। কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে কালক্ষেপণ করবেন না। কারণ তাদের হাতে কোনো চিকিৎসা নেই।

রাসেল ভাইপারের বিষ আক্রান্ত ব‍্যক্তির কামড় খাওয়া হাত বা পা ফুলে ওঠে। তাই হাত-পায়ে আংটি, বালা বা ব্রেসলেট জাতীয় কিছু থাকলে সাথে সাথে খুলে দিতে হবে। নইলে ফোলা হাত থেকে আংটি-চুড়ি-ব্রেসলেট খোলা সম্ভব হবে না। রাসেল ভাইপারসহ ভাইপার জাতীয় সাপ হেমোটক্সিন বিষধারী যা রক্তের উপর প্রভাব ফেলে। রক্ত জমাট বাঁধতে না পেরে অনবরত ক্ষরিত হয়৷ তাই এ জাতীয় সাপের ছোবলে একদমই বাঁধন দেওয়া যাবে না। নইলে পচন ধরা আরও সহজ হয়ে যাবে ৷

বি.দ্র. কোনো বিষধর সাপে কামড় দিলে দড়ি, ফিতা দিয়ে শক্ত করে বাঁধা দিবেন না। এতে আরো মারাত্মক ক্ষতি হবে। কারণ শক্ত করে বাঁধন দিলে অঙ্গহানি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। বাঁধন না দেওয়ায় ভালো। তবে সদর হাসপাতাল যদি বেশি দূরে হয় তাহলে বাঁধন দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চওড়া গামছা বা ওড়না দিয়ে হালকা বাঁধন দিতে হবে। শক্ত বাঁধন নয়, হালকা বাঁধন। যাতে রক্ত সঞ্চালনে বিঘ্ন না ঘটে।

লেখক: ছাত্র সাংবাদিক মারুফ হোসেন মিশন শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top