ডেঙ্গুতে দুই দশকের তিনগুণ মৃত্যু এক বছরে
রাজ টাইমস ডেস্ক : | প্রকাশিত: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩ ২১:৩২; আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪ ০৯:৫৭
![- ছবি - ইন্টারনেট](https://rajtimes24.com/uploads/shares/স্বাস্থ্যসেবা/মশা-20231210215250-2023-12-10-22-12-51.jpg)
ঘরে-বাহিরে, রাস্তা-ঘাটে বা দোকানে বা অফিসে হোক দিনে বা রাতে মশা আপনাকে কামড়াবেই। সব জায়গাতেই এডিস মশার মরণ কামড়ে অতিষ্ঠ ছিল রাজধানীসহ পুরো দেশ।
বিগত দুই দশকের মধ্যে চলতি বছরে (২০২৩) দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে। আক্রান্তের হারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রেকর্ড গড়েছে মৃত্যুর সংখ্যাও।
বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয় ১৯৬০ সালের দিকে। এরপর ৪০ বছর পর ২০০০ সালের জুন মাসে ডেঙ্গু সর্বপ্রথম মহামারি আকারে দেখা দেয় বাংলাদেশে। সে বছর মোট ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, যার মাঝে মারা যায় ৯৩ জন।
এরপর কম-বেশি প্রতিবছরই মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ আক্রান্ত হয় ২০১৯ সালে। ওই বছর এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত হন, মারা যান ১৬৪ জন। ২০২২ সালে আক্রান্ত হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন এবং মারা যান ২৮১ জন।
চলতি বছর (২০২৩ সাল) ডেঙ্গু শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। এই হিসেবে বিগত ২৩ বছরে দেশে ডেঙ্গুতে মোট মারা গেছেন ৮৬৮ জন। কিন্তু চলতি বছর (২৭ ডিসেম্বর) এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৬৯৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) নানা উদ্যোগ নিলেও তা কাজে আসেনি। অপ্রতিরোধ্য মশার কাছে অনেকটা আত্মসমর্পণ করেছে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের এই পরিণতির পেছনে কয়েক বছর ধরে চলমান অপরিকল্পিত নগরায়ন, মশক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা, স্বাস্থ্যখাতের দুরবস্থাসহ বেশ কিছু কারণ রয়েছে।
মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে শুধু রাত নয়, দিনেও কয়েল জ্বালিয়ে এবং মশারি টাঙিয়ে থাকতে হয়েছে। এ ছাড়া, ওষুধ বা স্প্রে; কিছুতেই ঠেকানো যায়নি মশার উপদ্রব। যদিও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা নিধনে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মশা নিধন কার্যক্রম পরিচালনা, যন্ত্রপাতি কেনা, ডেঙ্গু মোকাবিলা, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ও প্রচারকাজে এ টাকা ব্যয় করার কথা।
ঘোষিত ১৬৮ কোটি টাকার মধ্যে ডিএনসিসির মশা নিধনে ১২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা ছিল। উত্তরের তুলনায় দক্ষিণে মশা নিধনে বরাদ্দ কম রাখা হয়। ডিএসসিসি চলতি অর্থবছরে মশা মারতে ৪৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখে। এর মধ্যে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশক কেনার কথা। বাকি আট কোটি ২৫ লাখ টাকা যন্ত্রপাতি কেনা ও পরিবহন খাতে ব্যয় করার কথা।
এভাবে প্রতি বছরে শত কোটি টাকা খরচ করেও রাজধানীবাসীকে মশার কবল থেকে মুক্তি দিতে পারছে না দুই সিটি কর্পোরেশন। নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হলেও সবকিছু ব্যর্থ করে দিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বিস্তার হচ্ছে এডিস মশার।
নগরবাসীর অভিযোগ, ঢাকা দুই মেয়র মশা নিধনে ব্যর্থ। মশা নিধনে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীও ঠিকমতো ওষুধ ছিটান না। মশার ওষুধের গুণগত মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। তারপরও এডিস মশা বাসা-বাড়ির আঙিনায় জন্মায়-এমন কথা বলে দায় এড়িয়ে গেছে ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি। অথচ ডেঙ্গুজ্বরে আড়াইশোর বেশি মানুষ মারা গেছে। কিউলেক্স মশাও তারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছে না।
ডেঙ্গু-রোগের-লক্ষণ
কিছু দিন আগেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রাজধানীর অনকে হাসপাতালেই শয্যা ফাঁকা ছিল না। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মধ্যে অনেকেরই চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হচ্ছে রক্ত। ডেঙ্গু আক্রান্তদের রক্তে প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যায়। ফলে এখন দেশজুড়ে প্লাটিলেটের জন্য হাহাকার দেখা দেয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে আক্রান্ত হওয়ার তৃতীয় বা চতুর্থ দিন হতে কমতে থাকে রোগীর প্লাটিলেট।
হঠাৎ করেই নেমে আসছে ২০-৩০ হাজারের নিচে। ২০ হাজারের নিচে প্লাটিলেটের সংখ্যা নেমে এলে কোনো প্রকার আঘাত ছাড়াই রক্তক্ষরণ হতে পারে রোগীর। এতে অনেক সময় রোগী মারা যায় ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়ে।
ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, আগে মে-অক্টোবর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর মৌসুম ছিল। এখন সারা বছর ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আগে ডেঙ্গু ছিল শহরকেন্দ্রিক, কিন্তু এখন সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী। নিজেরা সচেতন না হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। দিনের বেলায় মশারি টাঙানো, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ফুল হাতা জামা ও হাত-পায়ে মোজা পরতে হবে। জ্বর হলে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোন ওষুধ খাওয়া যাবে না। সেই সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বিষয়:
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: