হানাদার মুক্ত নাটোর দিবস আজ

মহিব্বুল আরেফিন | প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:৪৮; আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:২৬

মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর কাছে ৭১ এর ২১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করছেন পাকবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহম্মেদ শরীফ

শোক কে শক্তিতে রুপান্তর করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় চলছে বিজয় উল্লাস। কিন্তু বিজয়ের চার দিন অতিবাহিত হলেও নাটোর ছিল অবরুদ্ধ। অবশেষে আজ ২১ ডিসেম্বররে এই দিনে নাটোরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় স্বাদ উপলব্ধি করে। হানাদার মুক্ত হয় নাটোর।
এদিন দিঘাপতিয়া গভর্ণর হাউসে পাকিস্থান বাহিনীর অফিসার ও জওয়ান মিলিয়ে মোট ৭ হাজার ৬ শ’ ৯৫ সেনা সদস্যসহ তাদের হেফাজতে থাকা রসদ ও যানবাহন নিয়ে মেজর জেনারেল নজর হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে মিত্র বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ডার লেফট্যানান্ট জেনারেল লসমন সিং এর কাছে আত্মসমর্পণ করেন।


আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক এ দলিলে পাক বাহিনীর পক্ষে স্বাক্ষর করেন নাটোর গ্যারিসনের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার নওয়াব আহমেদ আশরাফ ও মিত্রবাহিনীর পক্ষে ভারতের ১৬৫ মাউন্টেন ব্রিগেডের ব্রিগেডিয়ার রঘুবীর সিং পান্নু। সেই থেকে ওই দিনটিকেই নাটোর মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
উল্লেখ্য, একাত্তরে নাটোর ছিল পাকিস্তানি সেনাদের ২নং সামরিক হেডকোয়ার্টার। তৎকালীন সিও অফিসে (বর্তমানের ইউএনও অফিস) পাকিস্তানি সেনাদের সামরিক হেডকোয়াটার স্থাপন করা হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস নাটোরে বড় ধরনের কোনো লড়াই না হলেও একাধিক স্থানে গণহত্যা চালানো হয়। পাক বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদররা নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী, দত্তপাড়া, মোহনপুর, লালবাজার, কাপুড়িয়াপট্টি, শুকলপট্রি, মল্লিকহাটি, বড়াইগ্রামের বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন, ধানাইদহ বাজার, গুরুদাসপুরের নাড়িবাড়ি, সিংড়ার হাতিয়ানদহ, কলম এবং লালপুর উপজেলার গোপালপুরের নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল চত্বরে গণহত্যা চালায়। ৩ জুন নাটোর সদর উপজেলার ছাতনী গ্রামের গণহত্যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংস ও হৃদয়বিদারক ঘটনা।
ঐতিহাসিক তথ্য সূত্র বলে, ১৬ ডিসেম্বর দেশের অন্যান্য অঞ্চল মুক্ত হলেও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে পাকিস্তানি সেনারা নাটোরে এসে জড়ো হতে থাকে। শহরের পিটিআই স্কুল, আনসার হল, রিক্রিয়েশন ক্লাব, এনএস কলেজ, নাটোর রাজবাড়ি, দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরের (উত্তরা গণভবন) ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া পাকিস্তানি সেনারা মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করলেও নাটোরের দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি চত্বরে আত্মসমর্পণের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় ২০ ডিসেম্বর গভীর রাত পর্যন্ত। ফলে ২১ ডিসেম্বর নাটোর পুরোপুরি শত্রমুক্ত হয়।
এদিন পাকিস্তানি বাহিনীর ১৫১ অফিসার, ১৯৮ জন জেসিও, ৫৫০০ সেনা, ১৮৫৬ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য এবং ৯টি ট্যাংক, ২৫টি কামান ও ১০ হাজার ৭৭৩টি ছোট অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। নাটোরে পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সারাদিন ধরে শহরে চলে বিজয় মিছিল আর মুক্ত আকাশে গান ফায়ার। ‘জয়বাংলা’ শ্লোগানে মুখরিত হয় সারা শহর।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নাটোরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে শহীদ সাগর, নবাব সিরাজ-উদ্-দৌলা সরকারী কলেজে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, ছাতনী ও ফতেঙ্গাপাড়ায় গণকবরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তৈরী করা হয় বেশ কিছু স্মৃতি ফলক। সরকারী ভাবে মাদ্রসা মোড় সড়কদ্বীপে স্বাধীনতার ৩৪ বছর পর তৈরী করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ এবং ফুলবাগানে গণকবর স্মৃতিস্তম্ভ। কানাইখালীতে শহীদ রেজা-রন্জু-সেলিমের কবর স্থায়ী ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা ছাড়াও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতে পৌর এলাকার কয়েকটি সড়কও শহীদদের নামে নাম করণ করা হয়েছে। 

 




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top