জমিদার বাড়ির মন্দিরটি কি বিলুপ্তির পথে?

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২২ ০০:৩১; আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:০৬

ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ির গোপাল মন্দির। ছবি: সংগৃহীত

নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার কোলা ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামের হিন্দু পাড়ায় অবস্থিত বহু পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ির গোপাল মন্দির। এক সময় কালের সাক্ষী হয়ে ঐতিহ্য ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শতাধিক বছরের পুরনো মন্দিরটি আজ বিলুপ্তির পথে। এমন অবস্থায় এই বহু বছরের মন্দিরটি দ্রুত সংস্কার ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের।

সনাতন ধর্মের স্থানীয় প্রবীররা জানিয়েছেন, ১০০ বছর আগে তৎকালীন জমিদার যতীন মজুমদার তার বাড়ির সন্নিকটেই ইট ও সুরকি দ্বারা পারিবারিক পূজা অর্চনার জন্য এই মন্দির নির্মাণ করেন। জমিদার বাড়ির বিগ্রহ মন্দিরটির গোপাল মন্দির নামে পরিচিত। এক সময় জমিদার যতীন মজুমদারের পারিবারিক এই বিগ্রহ মন্দিরে প্রতিদিন পূজা অর্চনা হতো। এক সময় বছর জুড়ে দুর্গোৎসবসহ ছোট বড়, নানা ধরনের পূজা-অর্চনা এবং ধর্মীয় উৎসবে মুখরিত থাকত মন্দিরটি। সকাল-সন্ধ্যা বাজত শঙ্খধ্বনি। মন্দিরে জমিদার বাড়ির নারীরা দলবেঁধে পূজা করত। দূর-দূরান্তের পূজারিরাও আসতেন মাঝে মধ্যে এখানে। জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পরও অনেক দিন চলছিল স্থানীয় হিন্দুদের ধর্মীয় পূজা-অর্চনা।

কিন্তু স্বাধীনতার বহু বছর আগে জমিদার যতীন মজুমদারসহ তার উত্তরসূরিরা সপরিবারে ভারতে পাড়ি জমান। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের সব ধর্মীয় কর্মযজ্ঞ।

২৫বছর ধরে আর মন্দিরে জ্বলে না প্রদীপের আলো, সকাল-সন্ধ্যা শোনা যায় না ঢাকের শব্দ আর শঙ্খধ্বনি। জরাজীর্ণ এই মন্দিরের দেওয়ালও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ে যাওয়ায় জমিদার বাড়ির মন্দিরটি আজ কালের বিবর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে মন্দিরের সেই সোনালি দিনগুলো এখন শুধুই অতীত।

বহু বছর আগে জমিদার যতীন মজুমদার পরিবারসহ ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরটিতে ধর্মীয় পূজা অর্চনা শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর পূজা করার পরে মন্দিরের ছাদে ফাটল ধরে। এসময় মন্দিরটি পরিত্যক্ত হয়। প্রায় ২৫ বছর যাবত এই মন্দিরটি সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পূজা বন্ধ হয়।

বেশ কিছু জায়গায় জুড়ে উঁচু ও নিখুঁত গাঁথুনি দ্বারা তৈরি মন্দিরটির নির্মাণ শৈলীতে রয়েছে জমিদার ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন, যা দর্শনার্থীদের ব্যাপক মন কাড়ে। দৃষ্টিনন্দন এই মন্দিরটিতে পনের দরজা বিশিষ্ট মন্দিরের ভেতর ও বাইরে অপরূপ কারুকার্যে গড়া পুরো অবকাঠামোটিই এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এমন অবস্থায় মন্দিরটি দ্রুত সংস্কার ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের দাবি সনাতন ধর্মাবলম্বী ও স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা বিভাস চন্দ্র (৫৫) জানান, বহু দিন থেকে এ মন্দিরটি দেখে আসছি। সময় আর প্রকৃতির দৈন্যতায় জমিদার বাড়ির মন্দিরটির আজ বেহাল দশা। সরকার যদি মন্দিরটি সংস্কার করত তাহলে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যারা আছি সবাই পূজা-অর্চনা করতে পারতাম।

স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জু বলেন, ১০০ বছরের অধিক আগে নির্মিত এই মন্দির। এক সময় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা এখানে পূজা করত। মন্দিরটি নানা সমস্যার কারণে পরিত্যক্ত হয়ে আছে। কিছু দিন আগে মন্দিরের পুরোনো জরাজীর্ণ ছাদ ভেঙে নতুন করে ছাদ নির্মাণ করেছে।

মন্দিরের সভাপতি জগদীশ চন্দ্র আরটিভি নিউজকে বলেন, পুরোনো এই গোপাল মন্দিরটি ২৫ বছর ধরে পরিত্যক্ত হওয়ায় এখানে পূজা বন্ধ হয়ে পড়ে। অন্য জায়গায় ডেকোরেটর কাপড় দিয়ে মন্দির বানিয়ে সেখানে পূজা করা হয়। তবে পুরোনো এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম (এমপি) ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। বরাদ্দের টাকা দিয়ে নতুন ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের দরজা ও গ্রীল নেই। মন্দিরটি পুরোপুরি ভাবে সংস্কার করে আবার পূজা অর্চনা শুরু করা হবে।

কোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর ইসলাম স্বপন জানান, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অযত্নে-অবহেলায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে মন্দিরটি। ইতিমধ্যেই ছাদ সংস্কার করা হয়েছে। মন্দিরটির সংস্কার কাজে পর্যায়ক্রমে সহযোগীতা করা হবে।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top