ইসরাইলি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে পদ হারালেন লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক এক সাক্ষাতের কারণে লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজলা মাঙ্গুশকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।

ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের খবর প্রকাশ্যে আসার পর রোববার মাঙ্গুশকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় সদ্য বরখাস্তকৃত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুরও ঘোষণা দিয়েছেন লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ দ্বইবা।

ফিলিস্তিনি অধিকারের কট্টর সমর্থক লিবিয়া কখনই ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি। ফলে লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাজলা মাঙ্গুশ ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলি কোয়েনের সঙ্গে দেখা করেছেন – এই খবর জানাজানি হওয়ার পর লিবিয়ায় সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।

আরব ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য অনেকদিন ধরেই সচেষ্ট ইসরাইল। সে কারণেই লিবিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর উৎফুল্ল প্রতিক্রিয়া দেন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইসরাইলি মন্ত্রী কোহেন বলেছেন, গত সপ্তাহে রোমে শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে ম্যাঙ্গুশের সঙ্গে দেখা করেছিলেন তিনি। দুই দেশের সম্পর্কের একটা বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, কৃষি, মানবিক সমস্যা, পানির ব্যবস্থাপনা এবং কবরস্থান সংস্কারসহ লিবিয়ায় ইহুদি ঐতিহ্য সংরক্ষণের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন দুই জন।

ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন লিবীয় মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ ‘সম্পর্ক স্থাপনের পথে প্রথম এবং ঐতিহাসিক একটি পদেক্ষপ।’

কিন্তু, লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট পরিষদ – যেটি দেশের তিনটি প্রদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করে – বলেছে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করা বেআইনি।

প্রেসিডেন্ট পরিষদ রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব পালন করে এবং সামরিক বাহিনী এই পরিষদের নিয়ন্ত্রণে। পরিষদ ইসরাইলি মন্ত্রীর সঙ্গে লিবীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই বৈঠক সম্পর্কে সরকারের কাছে থেকে বিশদভাবে জানতে চেয়েছে।

লিবিয়ার পার্লামেন্টের স্পিকারের অফিস থেকে বলা হয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাঙ্গুশ দেশদ্রোহিতা করেছেন। একইসাথে প্রধানমন্ত্রী আব্দুল হামিদ তার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

ইসরাইলি সরকারের পক্ষ থেকে লিবিয়ার মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের খবর ঘোষণা অনেককেই বিস্মিত করেছে, কারণ কেউই কখনো ধারণাই করেনি যে লিবিয়ার মত চরম বৈরি দেশের সঙ্গে যোগাযোগেরও চেষ্টা করছে ইসরাইল।

সোমবার বেনামি একজন ইসরাইলি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে রয়টার্স জানায় লিবিয়া সরকারর ‘একেবারে উঁচু মহল’ থেকে এই বৈঠকের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, এবং প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ওই বৈঠক হয়।

অন্যদিকে, লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে ইসরাইলি প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকের এক প্রস্তাব মন্ত্রী মাঙ্গুশ প্রত্যাখ্যান করেন, এবং যেটা হয়েছে তা হলো “ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের সময় একেবারেই হঠাৎ করে দুজনের দেখা এবং অনানুষ্ঠানিক কিছু আলাপ।“

লিবীয় ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ওই সাক্ষাতের সময় “কোনো ধরণের আলোচনা বা বোঝাপড়া” হয়নি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘ইসরাইলের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপনের যে কোনো প্রস্তাব পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করার কথা পুর্নব্যক্ত করছে।’

এদিকে, রোমে এই বৈঠকের কথা প্রকাশ হওয়ার পর রাজধানী ত্রিপলিসহ লিবিয়ার বেশ কটি শহরে সহিংস বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে বিক্ষুব্ধ লোকজন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে এবং টায়ারে আগুন দেয়।