দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দা

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ১২:০৩; আপডেট: ৩ মে ২০২৪ ২২:৫৩

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার সবাই বিপর্যয়কর ক্ষুধার মোকাবিলা করছে এবং দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে বলে জাতিসংঘ সমর্থিত এক সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশনের (আইপিসি) বৃহস্পতিবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় খাদ্য সংকট বা উচ্চ পর্যায়ের তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছে গাজার বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ।

এদিকে নিরাপত্তা পরিষদে আনা গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ-সংক্রান্ত প্রস্তাবটিতে যুক্তরাষ্ট্র সম্মতি জানাতে পারে বলে জানা গেছে। যুদ্ধবিরতির এ প্রস্তাবটিতে কিছু পরিবর্তন আনার পর যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ইতিবাচক বলে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। অন্যদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গত দুদিনে আরও চার শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। খবর আলজাজিরার।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে গাজার শাসক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধাদের নজিরবিহীন হামলার প্রতিশোধ নিতে ফিলিস্তিনি ছিটমহলটিতে নির্মম সামরিক অভিযান শুরু করে তেল আবিব। তাদের অবিরাম বিমান হামলা ও স্থল আক্রমণে গাজার বিস্তৃত এলাকা ধুলায় মিশে যায়। আড়াই মাস ধরে চলা ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত ও ৮০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে। গাজা অবরুদ্ধ করে রেখে সেখানে খাবার, পানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল।

পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে পড়ার মুখে রাফাহ ক্রসিং দিয়ে মিশর থেকে গাজায় ট্রাকযোগে কিছু ত্রাণ পাঠানো শুরু হয়েছে। এসব ট্রাকে করে খাবার, পানি ও ওষুধ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, যে পরিমাণ খাবার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা গাজার বাসিন্দাদের প্রয়োজনের মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করতে পারবে যাদের অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত হয়ে রয়েছে। আইপিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি আছে আর তা দিনদিন বাড়ছে। তীব্র শত্রুতা ও মানবিক ত্রাণ প্রবেশে বিধিনিষেধ বজায় থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলা, তাদের দাবিমতো ত্রাণ যাচাই করার সুযোগ দেওয়া, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রাখা ও জ্বালানি সংকটের কারণে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। অপ্রতুল সরবরাহের মধ্যে গাজার কিছু বেপরোয়া বাসিন্দা ত্রাণ ট্রাকগুলোতে ঝাঁপিয়ে পড়ে খাবার ও অন্যান্য পণ্য ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা করেছে। গাজার বাসিন্দারা গাধা জবাই করে সেগুলোর মাংস খাচ্ছে ও ক্ষীণ হয়ে পড়া রোগীরা চিকিৎসা সহায়তা চাইছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।

জাতিসংঘ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রধান অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা পরিচালক আরিফ হুসেইন গাজার সংকটকে ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই প্রতিবেদনটি আমাদের সবচেয়ে খারাপ শঙ্কাকেই নিশ্চিত করেছে। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি এ কাজ করছি। আমি আফগানিস্তানে গিয়েছি, ইয়েমেনে গিয়েছি, সিরিয়ায়, দক্ষিণ সুদানে, ইথিওপিয়ায়, নাইজেরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে। কিন্তু কোথাও এত দ্রুত পরিস্থিতি এমন খারাপ হতে দেখিনি। যুদ্ধ এখন যে রকমভাবে চলছে তা যদি চলতে থাকে, যদি ত্রাণ সহায়তা যে পরিমাণ আসা উচিত তা না আসে, তাহলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষ হবে। দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেও হতে পারে।

গাজার প্রতি চারটি পরিবারের মধ্যে অন্তত একটি অর্থাৎ ৫ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ এরই মধ্যে বিপর্যয়কর ক্ষুধার মোকাবিলা করছে, তারা তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে আর অনাহারে থাকছে বলে আইপিসি দেখতে পেয়েছে।




বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top