ডেমোক্র্যাটদের দৃষ্টি কামালা হ্যারিসে, কিন্তু তিনি কি পারবেন ট্রাম্পকে হারাতে?

রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ১১ জুলাই ২০২৪ ০০:৪৩; আপডেট: ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৭:৩৬

ছবি: সংগৃহীত

কোর্টনি সুব্রামানিয়ান

শনিবার বিকেলে, মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস নিউ অরলিন্সে কৃষ্ণাঙ্গদের সাংস্কৃতিক উৎসবের মঞ্চে তার জীবনের গল্প এবং হোয়াইট হাউসে তিনি কী অর্জন করেছেন সে সম্পর্কে কথা বলছিলেন। এটি ছিল এমন একটি ইভেন্ট, যেখানে গত সাড়ে তিন বছর ধরে প্রথম নারী, কৃষ্ণাঙ্গ ও দক্ষিণ এশীয় অ্যামেরিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং বাইডেনের ডেপুটি হিসেবে নিয়মিত উপস্থিত থাকছেন।

সাধারণত প্রেসিডেন্টের মতো তাকেও গুটিকয় সাংবাদিক অনুসরণ করে থাকেন। কিন্তু ওয়াশিংটন থেকে এক হাজার মাইল দূরের অনুষ্ঠানটিতে সেদিন মিসেস হ্যারিসের পেছনে থাকা সাংবাদিকের সংখ্যা কয়েক ডজন বেড়ে গিয়েছিলো। কারণ, আতঙ্কিত ডেমোক্র্যাটরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিতর্কে ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের দুঃখজনক এবং কখনও কখনও বোধগম্যহীন পারফরম্যান্সের পরে তার জায়গায় নভেম্বরের নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসাবে কামালা হ্যারিসকে বাছাইয়ের জোরালো দাবি তুলেছেন।

তবে, এই মঞ্চে কিংবা সপ্তাহান্তে তার ভ্রমণের সময় ভাইস-প্রেসিডেন্টের সামনে বারবার করে আসা মি. বাইডেনের ফিটনেস এবং তাকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাহার করা কিংবা তার হাতে প্রার্থিতার লাঠি তুলে দেয়া উচিত কিনা এমন প্রশ্নের কোন জবাব দেননি। কিন্তু নিউ অরলিন্সে তার শ্রোতাদের সাথে জীবনে বড় হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং কীভাবে নিজের পথ নিজেকেই তৈরি করতে হয় সে বিষয়ে আলোচনার সময় তিনি দর্শক শ্রোতাদেরকে সমালোচনা কিংবা গুঞ্জনে কান না দিতে উৎসাহিত করেন।

তিনি বলেন, লোকেরা আপনাকে বলবে, যদিও কথাটা বলার উপযুক্ত সময় এটা নয়, এটা আপনার পালা নয় এবং আপনার মতো কেউ এটি আগে করেও নি। সেক্ষেত্রে আপনি তাতে কখনও কান দেবেন না।

গত ২৭ জুন সিএনএনে বাইডেনের বিপর্যয়কর বিতর্কের পর থেকে তিনি বারবারই তার বস বাইডেনের পক্ষাবলম্বন করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেছেন যে, প্রেসিডেন্টের বিতর্কের সময় ৯০ মিনিটের বেশি হওয়া উচিত নয়।

এদিকে, মিস্টার বাইডেনও তার প্রার্থিতার ব্যাপারে ক্ষুব্ধ এবং জোড়ালো প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন যে, তিনিই প্রার্থী থাকবেন। তবে তা সত্ত্বেও নির্বাচন থেকে প্রেসিডেন্টের প্রতি সরে দাঁড়ানোর আহ্বান যখন আরও জোরালো হচ্ছে, তখন প্রভাবশালী কিছু ডেমোক্র্যাট ৫৯ বছর বয়সী মিসেস হ্যারিসকে প্রার্থী করার জন্য তার পিছনে একত্রিত হচ্ছেন।

রবিবার, ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান অ্যাডাম শিফ এনবিসি'র মিট দ্য প্রেসকে বলেন, হয় মি. বাইডেনকে "অপ্রতিরোধ্যভাবে জয়লাভ করতে হবে, নয়তো তাকে সেরকম একজনের কাছে মশালটি দিতে হবে"।

তিনি আরও বলেন, কামালা হ্যারিসই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে “খুব ভালোভাবে জিততে পারেন”। তবে, এমন প্রস্তাবে বাইডেনের মিত্রসহ ডেমোক্র্যাটদের অনেকেরই ভ্রু কুঁচকেছেন। বিশেষ করে মিসেস হ্যারিসের ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন দৌড়ে ব্যর্থতা, এমনকি ব্যালটে প্রথম ভোটটি পড়ার আগেই। এছাড়া, ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হোয়াইট হাউসে তার গ্রহণযোগ্যতার রেটিংও অনেক কম।

এর বিপরীতে, মি. শিফ এবং সাউথ ক্যারোলিনার কংগ্রেসম্যান জিম ক্লাইবার্নের মতো সিনিয়র ডেমোক্র্যাটিক আইনপ্রণেতারা মিস হ্যারিসকে স্পষ্ট উত্তরসূরি হিসাবে প্রশংসায় ভাসিয়ে চলেছেন। তবে, শেষ পর্যন্ত দলীয় চাপের মুখে মি: বাইডেনকে নত হওয়া উচিত।

সমর্থকদের অনেকেই হাতেগোনা কিছু জরিপের ফলাফল ইঙ্গিত করে ধারণা করছেন যে, কামালা হ্যারিস ডোনাল্ড ট্রাম্পের মোকাবেলায় প্রেসিডেন্টের চেয়ে ভালো করবেন। তাদের যুক্তি হলো- জাতীয়ভাবে তার একটি অবস্থান রয়েছে, প্রচারণার অবকাঠামো এবং তরুণ ভোটারদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে, এসব বিষয় ভোটের আগের এই চার মাস নিরবিচ্ছিন্নভাবে একটা রূপান্তর ঘটিয়ে দিতে পারে। যদিও একজন নারীর মনোনয়ন টিকিট লাভের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে উঠে আসার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন, যেটিকে এতদিন বাইডেনের হোয়াইট হাউসের সিনিয়র ব্যক্তিরা রাজনৈতিক দুর্বলতা হিসাবে দেখেননি। এমনকি মি. বাইডেন নিজেও প্রথমদিকে কয়েকমাসে হ্যারিসের “কাজে উন্নতি হচ্ছে” বলে বর্ণনা করেন।

তবে দীর্ঘদিনের ডেমোক্রেটিক স্ট্র্যাটেজিস্ট এবং হ্যারিসের সাবেক কমিউনিকেশন ডিরেক্টর জামাল সিমন্স বলছেন, তাকে (হ্যারিসকে) দীর্ঘকাল ধরে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

সাবেক এই শীর্ষ প্রসিকিউটর বিতর্কের পর থেকেই জনসাধারণের সামনে ট্রাম্পের সমালোচনার দিকে মনোনিবেশ করেছেন। ট্রাম্প যে গণতন্ত্র এবং নারী অধিকারের জন্য হুমকিস্বরূপ সেটি মেনে নিতে তাদের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছেন। একইসময় তিনি বাইডেনের প্রতি অবিচল সমর্থন ছাড়া আর কিছুই বলছেন না। ভাইস-প্রেসিডেন্টের সর্বদা উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং আনুগত্যের মধ্যে একটি সূক্ষ্ম ভারসাম্য থাকতে হয়। কিন্তু মিস হ্যারিস জানেন যে, এটি সেই মুহূর্ত নয় যখন তিনি তার এবং প্রেসিডেন্টের মধ্যকার কোন বিষয় প্রকাশ করতে পারেন।

কামালা হ্যারিস অবশ্য মি. বাইডেনের একমাত্র বিকল্প হওয়ার আলোচনা থেকে অনেক দূরে। বাইডেনের সম্ভাব্য বিকল্পের তালিকায় রয়েছেন, জনপ্রিয় গভর্নরদের অন্যতম - মিশিগানের গ্রেচেন হুইটমার, ক্যালিফোর্নিয়ার গ্যাভিন নিউসম, পেনসিলভানিয়ার জোশ শাপিরো এবং ইলিনয়ের জেবি প্রিটজকার থেকে শুরু করে ট্রান্সপোর্ট সেক্রেটারি পিট বুটিজাজ এবং ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান রো খান্না পর্যন্ত।

যদিও মিস হ্যারিস এবং তার স্টাফরা মানুষের জল্পনা-কল্পনায় যোগ দিচ্ছেন না। কিন্তু দলের কিছু সদস্য তার পিছনে একত্রিত হওয়ায় তার টিম পর্দার আড়ালের আলোচনার ব্যাপারে গভীরভাবে সচেতন।

মি. বাইডেন যদি মনোনয়ন থেকে সরে দাঁড়ান, তাহলে মিস হ্যারিসকে বাদ দিয়ে ডেমোক্র্যাটদের অন্য প্রার্থীর পক্ষে যাওয়ার ধারণাটি দলের বাম এবং এর শক্তিশালী কালো শিবিরের অনেককে আতঙ্কিত করবে। এ ব্যাপারে কংগ্রেসের অন্যতম বিশিষ্ট কৃষ্ণাঙ্গ আইনপ্রণেতা মি: ক্লাইবার্ন গত সপ্তাহে এমএসএনবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তেমন পরিস্থিতিতে " দলটির কোনোভাবেই মিস হ্যারিসের চারপাশে কোন কাজ করা উচিত নয়"। রিপাবলিকানরাও স্বীকার করেছে যে, বাইডেনের জায়গায় হ্যারিস স্থলাভিষিক্ত হলে তারা এগিয়ে থাকবেন।

সাউথ ক্যারোলাইনার সেনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম রবিবার তার দলকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, রিপাবলিকানদের অবশ্যই "নাটকীয়ভাবে ভিন্ন প্রতিযোগিতার" ব্যাপারে প্রস্তুত থাকতে হবে।

তবে শেষ পর্যন্ত ডেমোক্র্যাটদের জন্য একমাত্র যে প্রশ্নটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তা হলো- দাতারা দেখবেন যে, জো বাইডেনের তুলনায় হ্যারিসের ট্রাম্পকে পরাজিত করার আরও ভাল সুযোগ আছে কিনা এবং এটি গভীরভাবে অনিশ্চিত। হ্যারিস সমর্থকরা সিএনএনের সাম্প্রতিক একটি জরিপের উদাহরণ টেনে বলছেন যে, নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্টের তুলনায় তিনি বেশি ভালো করবেন।

প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে হ্যারিসের শক্তি ও সামর্থ্য নিয়ে কিছু ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ রয়েছে। এর মূল কারণ, ২০২০ সালে দলীয় মনোনয়নের জন্য তার ব্যর্থ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেসময় তিনি প্রাথমিক বিতর্কে বাইডেনকে পরাস্ত করলেও আইওয়া স্টেইটের প্রথম ককাসের আগেই হেরে যান। প্রথম দিকে সেই হোঁচট খাওয়ার কারণে মিসেস হ্যারিস জনসাধারণের সামনে উপস্থিত হওয়ার ব্যাপারে আরও সতর্ক হন। কিন্তু অনেক ভোটার তাকে অকার্যকর বলে মনে করে। ৬৭ বছর বয়সী গ্রেগ হোভেল- যিনি গত সপ্তাহে উইসকনসিনের ম্যাডিসনে বাইডেনের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। তিনি ২০২০ সালের প্রাইমারিতে হ্যারিসকে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং তিনি সব সময়ের জন্য তার একজন ভক্ত ছিলেন। তবে, সেসময় এই ভেবে সতর্ক ছিলেন যে, দেশের মধ্যে অনেক নারী বিরোধী মনোভাব রয়েছে।

মি. হোভেল বলেন, আমি মনে করি তিনি একজন চমৎকার প্রেসিডেন্ট হতে পারতেন। তবে আমি এখনো মনে করি বাইডেন জিততে পারেন।

সূত্র : কালবেলা



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top