ভারতের ব্যবসায়ীরা ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্কের ধাক্কায় দিশেহারা
রাজটাইমস ডেস্ক: | প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২৫ ২২:২০; আপডেট: ২৭ আগস্ট ২০২৫ ০০:৩১

এক ভূতুড়ে নীরবতা তৈরি হয়েছে এন কৃষ্ণমূর্তির গার্মেন্ট কারখানায়। এটি ভারতের পোশাক রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্র তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুরে অবস্থিত। মেঝেতে প্রায় ২০০টি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেলাই মেশিনের মধ্যে কাজ করছে মাত্র কয়েকজন শ্রমিক।
ঘরের এক প্রান্তে নতুন ডিজাইনের জন্য কাপড়ের নমুনার স্তূপে ধুলা জমছে। এ পরিস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে ভারতের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ৫০ শতাংশ বাণিজ্য শুল্ক। এই শুল্ক বুধবার থেকে কার্যকর হওয়ার কথা। খবর বিবিসির
টার্গেট, ওয়ালমার্ট, গ্যাপ ও জারার মতো ব্র্যান্ডের জন্য এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার মূল্যের যে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে ভারত, তার তৃতীয়াংশ তৈরি হয় এই তিরুপ্পুরে। কিন্তু এই মুহূর্তে নিজেদের ভবিষ্যতে নিয়ে উদ্বিগ্ন এই শহর। কৃষ্ণমূর্তি জানান, তার গ্রাহকরা সব অর্ডার বন্ধ করে দিয়েছে। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য নতুন কর্মীও নিয়োগ করেছিলাম। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের পর সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। নতুনভাবে নিযুক্ত ২৫০ জন কর্মীকে বসিয়ে রাখতে হয়েছে।
পাশের আরেক কারখানার মালিক শিবা সুব্রামনিয়ম বলেন, আমরা আশা করেছিলাম ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করবে। এভাবে চলতে থাকলে কর্মীদের কীভাবে বেতন দেব?
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে ভারতের শীর্ষ রপ্তানি গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে গত বছর আট হাজার ৭৩০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল নয়াদিল্লি। বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার তেল ও অস্ত্র কেনার জন্য ২৫ শতাংশ জরিমানাসহ এই চড়া শুল্ক চাপানোটা ভারতীয় পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারই সমান। এতে ছোট সংস্থাগুলো ধ্বংস হয়ে যাবে। এলারা সিকিউরিটিজের গরিমা কাপুর বলেন, এত চড়া শুল্কের কারণে কোনো ভারতীয় পণ্য প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না।
অর্থনীতিবিদদের ধারণা, ট্রাম্পের এই শুল্ক চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে ১ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে, যা মহামারির পর থেকে সবচেয়ে দুর্বল গতি। টেক্সটাইল, সামুদ্রিক খাবার এবং গহনা রপ্তানিকারকরা ইতোমধ্যেই ক্রয়াদেশ হারানোর কথা জানাচ্ছেন। বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে ক্রয়াদেশ হারানোয় এসব খাতের বিপুল সংখ্যক কর্মী চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তবে ভারতে সংযোজন হওয়া আইফোনসহ ফার্মাসিউটিক্যালস ও ইলেকট্রনিক্স খাতের পণ্য আপাতত এই শুল্কের বাইরে রয়েছে। রোটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি অনুমান করছে, ভারতের জিডিপির ১ দশমিক ২ শতাংশের সমপরিমাণ রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে এটি একটি এককালীন ধাক্কা হবে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনাকে নিঃশেষ করে দেবে না।
এ অবস্থায় ভারত ব্রিকস অংশীদার এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার উদ্যোগ নিয়েছে। জয়শঙ্কর মিত্র মস্কো সফর করেছেন এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের বাধা দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘ হিমশীতল সম্পর্ক মেরামতের জন্য সাত বছরের মধ্যে প্রথম চীন সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, সরকার রপ্তানিকারকদের জন্য ২৮০ কোটি ডলারের সহায়তা প্যাকেজ নিয়ে কাজ করছে। এ অর্থ তারল্য সংকট নিয়ে উদ্বেগ দূর করার লক্ষ্যে ছয় বছরের একটি কর্মসূচি। মোদি ব্যয় বৃদ্ধি ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কর কমানোর প্রস্তাবও করেছেন।
এদিকে ভারতের ওপর চাপ আরও বাড়তে পারে; কিন্তু আমরা তা সহ্য করে নেব বলে মন্তব্য করেছেন মোদি। গুজরাটের আহমেদাবাদে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আজকের বিশ্বে সবাই অর্থনৈতিক স্বার্থকে কেন্দ্র করে রাজনীতি করছে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি– ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হোক, কৃষক হোক কিংবা পশুপালক, আপনাদের স্বার্থই মোদির কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমার সরকার কোনোদিন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কৃষক বা পশুপালকদের ক্ষতি হতে দেবে না। যত চাপই আসুক, তা মোকাবিলার শক্তি আমরা বাড়াতে থাকব।
চীনের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্কের হুমকি
ট্রাম্প আবারও চীনের ওপর চড়া শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, চীন যদি যুক্তরাষ্ট্রকে পর্যাপ্ত পরিমাণ চুম্বক (ম্যাগনেট) সরবরাহ না করে, তবে তাদের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর আগে চীন তাদের রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় রেয়ার আর্থ ও চুম্বক যুক্ত করে। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বৈশ্বিক চুম্বক বাজারের প্রায় ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে চীনের। সেমিকন্ডাক্টর চিপসহ বহু কৌশলগত পণ্যের জন্য এই চুম্বক অপরিহার্য।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: