গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও ফিলিস্তিন দখলে ভারতের টাটা গ্রুপ জড়িত

রাজ টাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ২০:২৬; আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ২৩:৫০

- ছবি - ইন্টারনেট

ভারত-ইসরায়েল সামরিক জোটের কেন্দ্রবিন্দুে থাকা বৃহত্তম বহুজাতিক গ্রুপ 'টাটা' ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি দখল, নজরদারি এবং উচ্ছেদ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক দক্ষিণ এশীয় রাজনৈতিক সংগঠন 'সালাম'-এর প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

'স্থপতিদের পেশা: টাটা গ্রুপ, ইন্ডিয়ান ক্যাপিটাল এবং ভারত-ইসরায়েল জোট' শীর্ষক প্রতিবেদনে ভারতীয় ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যকে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার 'একটি মূল সহায়ক' বলে অভিহিত করা হয়েছে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, টাটার ইসরায়েলি সম্পৃক্ততা অস্ত্র, প্রতিরক্ষা এবং ডিজিটাল প্রযুক্তি খাত পর্যন্ত বিস্তৃত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গ্রুপের সহযোগিতা ব্যাপক। গণহত্যার হার্ডওয়্যার, দৈনন্দিন নিপীড়নের যন্ত্রপাতি এবং বর্ণবাদের ডিজিটাল মেরুদণ্ড সরবরাহ করেছে তারা। সহযোগী সংস্থা টাটা অ্যাডভান্সড সিস্টেমস লিমিটেড (টিএএসএল)-এর মাধ্যমে গ্রুপটি নতুন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের জন্য ডানা এবং এএইচ-৬৪ অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের জন্য বিশ্বব্যাপী মূল সরবরাহকারী। গাজায় বোমা হামলার জন্য ইসরায়েলি বিমান বাহিনী যেসব বিমান ব্যবহার করে, এগুলো অন্যতম।

টিএএসএল ইসরায়েল অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বারাক-৮ ক্ষেপণাস্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড সিস্টেমও তৈরি করে। এটি ইসরায়েলি নৌবাহিনীর সক্রিয়ভাবে মোতায়েন করা একটি অস্ত্র।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মোটরগাড়ি খাতে টাটা মোটরস ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাগুয়ার ল্যান্ড রোভারের মাধ্যমে 'এমডিটি ডেভিড' হালকা সাঁজোয়া যানের জন্য ভিত্তিগত চ্যাসি সরবরাহ করে। 'এমডিটি ডেভিড' যানগুলো ইসরায়েলি বাহিনী দখলকৃত পশ্চিম তীরজুড়ে টহল, অভিযান এবং ফিলিস্তিনিদের দমনে ব্যবহার করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, টাটার এসব ভূমিকা নিরপেক্ষ ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড নয়, বরং ইসরায়েলের গণহত্যার হার্ডওয়্যার ও দৈনন্দিন নিপীড়নের যন্ত্রপাতির মূল উপাদান।

গবেষণায় উঠে এসেছে, টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসেস (টিসিএস) ইসরায়েলের আর্থিক ও সরকারি ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সরবরাহ করে। এর মধ্যে রয়েছে প্রজেক্ট নিম্বাস - যা একটি বিতর্কিত ক্লাউড কম্পিউটিং প্রোগ্রাম। এগুলো ইসরায়েলি নজরদারি এবং ফিলিস্তিনিদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।

তবে টাটা গ্রুপ এখন পর্যন্ত সালাম-এর গবেষণা প্রতিবেদনের কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে তৈরি উপাদানগুলো মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান যুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা-শিল্প নেটওয়ার্কে টাটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার মাধ্যমে ইসরায়েলের রাষ্ট্রযন্ত্রের সঙ্গে গভীর একীকরণের পথ আরও প্রশস্ত হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, বিতর্কিত কাশ্মীরের ওপর ড্রোন থেকে শুরু করে অবরুদ্ধ গাজার ওপর যুদ্ধবিমান পর্যন্ত - টাটার ধাতু এবং কোডের ছাপ স্পষ্ট উপস্থিত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ভারতের অস্ত্র উৎপাদন থেকে ইসরায়েল লাভবান হয়। অন্যদিকে ভারত ইসরায়েলি প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বনির্ভরতা চায় এবং টাটা এই ব্যবস্থা থেকে লাভবান হয়।

নিউ ইয়র্ক-ভিত্তিক সংগঠনটি টাটার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে, ভারতীয় গ্রুপটি তাদের দানশীল ভাবমূর্তি গড়ে তুলে এবং জনহিতকর ট্রাস্ট ও মার্কিন উপস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তাদের কার্যক্রমকে রক্ষা করছে।

সংগঠনটি ২০২৪ সালের গ্রীষ্ম থেকে তারা এই যুদ্ধ অর্থনীতিকে উন্মোচিত এবং ভেঙে ফেলার জন্য '#TataByeBye' প্রচারণারও আয়োজন করেছে।

প্রতিবেদনে ভারত-ইসরায়েলের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের মধ্যে - বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, প্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা ক্ষেত্রে টাটার কার্যক্রমের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

ভারত এখন ইসরায়েলি অস্ত্রের বৃহত্তম ক্রেতা এবং টাটার একাধিক সহায়ক সংস্থা এই প্রবাহ বজায় রাখার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক ফ্রান্সেসকা আলবানিজের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার ব্যাপক অভিযোগ সত্ত্বেও ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবরের মধ্যে ভারত ২৬টি দেশের মধ্যে ছিল - যারা ইসরায়েলে অস্ত্র ও গোলাবারুদ রপ্তানি করেছে।

সমালোচকরা বলছেন, ভারতীয় অন্যান্য সংস্থাগুলোও ড্রোন, যুদ্ধাস্ত্র এবং শ্রমিক সরবরাহ করে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যাকে সহায়তা করেছে।

প্রতিবেদনে ১৯৬০-এর দশকে গোপন অস্ত্র চুক্তি থেকে শুরু করে আজকের আনুষ্ঠানিক 'কৌশলগত অংশীদারিত্ব' পর্যন্ত ভারত-ইসরায়েল জোটের কার্যক্রম তুলে ধরা হয়েছে। অতি-ডানপন্থী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং চরমপন্থী ইসরায়েলি নেতা বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর অধীনে কার্যক্রমের বিস্তারিতিও উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'নতুন বাজার সন্ধানকারী পুঁজিপতি শ্রেণীর পারস্পরিক স্বার্থ, আঞ্চলিক আধিপত্য বিস্তারকারী ভারতীয় রাষ্ট্র এবং ইহুদিবাদ ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের মধ্যে অভিন্ন আদর্শিক ঝোঁকের ভিত্তির ওপর ভারত-ইসরায়েল অংশীদারিত্ব তৈরি হয়েছে।'

সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড



বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top