সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে অনুমতি লাগবে না : হাইকোর্ট

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২২ ০৬:৪১; আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ০৪:০৮

ছবি : প্রতিকী

ফৌজদারি মামলায় সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে তা বাতিল করেছেন হাইকোর্ট।

বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। প্রায় তিন বছর আগে কার্য কর হওয়া সরকারি চাকরি আইনের ৪১ (১) ধারা অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। রায়ে আদালত বলেছেন, সরকারি চাকরি আইনের এই ধারা ‘সংবিধান পরিপন্থি এবং মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি’।

ফলে ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগে কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তারের আগে এখন আর কারো অনুমতি লাগবে না মনে করেন রিটকারী পক্ষের আইনজীবী। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

রায়ের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘সংবিধানের ২৬ বলা আছে মৌলিক অধিকারের সঙ্গে অসামঞ্জস্য আইনের বিধান বাতিল হবে। ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং সব নাগরিক সমানভাবে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকারী।

সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদে এ বিষয়টি আরও বিস্তৃত করা হয়েচে। কিন্তু সরকারি চাকরি আইনের ৪১(১) ধারায় বিশেষ একটি শ্রেণি বা গোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ফলে তা সংবিধানের ২৬, ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বাতিলযোগ্য। রায়ে আদলত বলেছেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০১৩ এর ৩২(ক) ধারায় দুদক কর্মচারীদের এমন সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। পরে হাইকোর্ট এ ধারাটি বাতিল করেছেন। কিন্তু সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করেনি। সুতরাং একই বিধানে আবার আইন করার সুযোগ নেই। ’

এ আইনজীবী ভাষ্য, ‘ফৌজদারি অপরাধে ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। আইন অনুযায়ী যে কোনো ব্যবস্থা তারা নিতে পারবে। অভিযোগপত্র হওয়ার আগে পরে সরকারি কর্মচারিদের গ্রেপ্তার করা যাবে। ’

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিতেই আইনে এমন বিধার রাখা হয়েছে। আইনে সরকারি কর্মচারিদের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য করা হয়নি। তাছাড়া রিট আবেদনকারী এ আইনে সংক্ষুব্ধ কোনো পক্ষ না। আদালত রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো আমলে নেননি। ফলে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে। ’

২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর সরকারি চাকরি আইনের গেজেট জারি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের গেজেটে বলা হয় ১ অক্টোবর থেকে এ আইন কার্যকর হবে। সে হিসাবে প্রায় তিন বছর ধরে আইনের এ বিধান কার্যমকর আছে।

আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পালনের সহিত সম্পর্কিত অভিযোগে দায়েরকৃত ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগপত্র গৃহীত হইবার পূর্বে, তাহাকে গ্রেফতার করিতে হইলে, সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি গ্রহণ করিতে হইবে। ’

পরে আইনের এ ধরা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৯ সালের ১৪ অক্টোবর জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট আবেদনে করা হয়। পরিবেশবাদি ও মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)’র পক্ষে এ রিট আবেদনটি করা হয়। রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর রুল জারি করেন হাইকোর্ট। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪১(১) ধারা কেন বেআইনি ও বাতিল করা হবে না এবং এ ধারা সংবিধানের ২৬(১) (২), ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয় রুলে। এ রুলটিই যথাযথ ঘোষণা করা হয়েছে রায়ে।

 



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top