সকলের প্রিয় ভাইয়া মাহফুজুর রহমান আখন্দ

সুমাইয়া আফরিন | প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:৪৫; আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০০:২৬

ছবি: সংগৃহীত

জ্বীন-ভূতের অনেক কাহিনী আমরা জানি। কিন্তু ভূত কি সত্যিই আছে? পেত্নি? বিজ্ঞান এবং ধর্ম কি বলে? সে বিষয়ে আমরা কতটুকুই বা জানি? এ সব বিষয়কে সামনে রেখেই মজার গল্পের বই ‘জ্বীনের বাড়ি ভূতের হাঁড়ি’।

এতে গল্পের মজা যেমন পাওয়া যায় তেমনি পাওয়া যায় জ্বীন-ভূতের অস্তিত্ব সম্পর্কে ধারণা।

এমন মজার বই যিনি লিখেছেন তিনিই আমাদের প্রিয়জন ডক্টর মাহফুজুর রহমান আখন্দ। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ২৮ তারিখে তাঁর শুভজন্মদিন। শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবাসহ সকলের পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং দুআ।

ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর। গবেষণা এবং সাহিত্য সমালোচনাতেও তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। ইতিহাসের নানা বিষয়ে তাঁর ৮টি গ্রন্থ বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে পড়ানো হয়। রোহিঙ্গা সমস্যার উপর বাংলাদেশে তিনিই সর্বপ্রথম স্বার্থক গবেষক। তিনি এম.ফিল এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন রোহিঙ্গা বিষয়কে কেন্দ্র করেই। তাঁর ‘আরাকানের মুসলমানদের ইতিহাস’ এবং ‘রোহিঙ্গা সমস্যা ও বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রকাশিত গ্রন্থদুটিকে এ বিষয়ের মাস্টার পিস গবেষণাগ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

মাহফুজুর রহমান আখন্দ বাংলা সাহিত্যের একজন খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক। ছড়া-কবিতা, গান, গল্প, প্রবন্ধ প্রভৃতি বিষয়ে তিনি লিখে চলেছেন নিয়মিত। শিশুদের শব্দভাষা এবং কোমল মনের অনুভ‚তিগুলো ভালোভাবেই বোঝেন তিনি। শিশুমনের কোমলতা এবং কৌতুহলকে ঘিরেই তিনি সাহিত্য রচনা করেন। ‘জলজ রাজার দেশে’ গল্পগ্রন্থটি শিশুসাহিত্যে একটি মজার সংযোজন। ‘স্বপ্ন দেখি মানুষ হবার’ ‘ধনচে ফুলের নাও, ‘মামদো ভ‚তের ছাও, ‘জ্বীন পরী আর ভ‚তোং, তাঁর মজাদার শিশুতোষ ছড়াগ্রন্থ।

শুধু শিশুসাহিত্যেই নয়, বড়োদের জন্যও তিনি লিখেছেন কবিতা, ছড়া, গান, প্রবন্ধ-নিবন্ধ। ‘চৌকো ফুলের ঘ্রাণ’ রুবাইয়াত স্টাইলের কবিতার বইটি তো এবার অন্যরকম হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। পাঠক প্রিয়তা পেয়েছে ‘মনটা অবুঝ পাখি, ‘জীবন নদীর কাব্য, ‘তোমার চোখে হরিণমায়া, ‘গুমর হলো ফাঁস, ‘স্বপ্নফুলে আগুন, ‘ছড়ামাইট, প্রভৃতি গ্রন্থগুলো কবিতা, ছড়ার বই।

পরিশীলিত আধুনিক গানের ধারায় তিনি একজন স্বার্থক গীতকার। ফুলের মতো ফুল হতে চাই, মানুষ বানালে প্রভু দিলে মান সম্মানসহ অসংখ্য হামদ-না’ত, জীবনমুখি, দেশগানের জনপ্রিয় গীতিকার তিনি। বগুড়ার আঞ্চলিক গানে তিনি গণমানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছেন। ইসলামী গানের রিয়ালিটি শো ‘লক্ষ প্রাণের সুর’ ‘সেরাদের সেরা’সহ অসংখ্য অনুষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান এবং সংগঠনের থিমসং রচনার তিনি সর্বমহলে প্রশংসিত। শিশুতোষ গানে তাঁর কলমের দক্ষতা স্মরণে রাখার মতো। ‘হৃদয় বাঁশির সুর’ জনপ্রিয় গানের বই।

প্রত্রিকা সম্পাদনা করছেন ১৯৮৮ সাল থেকে। বর্তমানেও এ ধারা অব্যাহত। সিঁড়ি, ‘মোহনা’ এবং ‘শব্দকলা’ নামে সাহিত্য পত্রিকাগুলো সফলভাবে সম্পাদনা করে যাচ্ছেন তিনি। ছড়া, কবিতা গল্প এবং সম্পাদনার ভেতর দিয়ে তিনি নতুন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেন। স্বপ্ন দেখেন পরিশুদ্ধ সাংস্কৃতিক জগৎ গড়ার। তাঁর বক্তৃতাও বেশ উপভোগ্য। ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসেবে তিনি তরুণ প্রজন্মের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।

গাইবান্ধা জেলায় জন্ম হলেও তিনি বগুড়াসহ সারা দেশের শহর-গ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। প্রাইমারি স্কুল, মাদরাসা, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার কারণে বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন তিনি। সাংস্কৃতিক মঞ্চ থেকে শুরু করে সাংবাদিকতার মাঠেও তিনি সরব।

কবিতা বাংলাদেশ এর সাধারণ সম্পাদক, পরিচয় সংস্কৃতি সংসদ এর সভাপতি, শব্দকলার সম্পাদক তিনি। এ ছাড়াও বাংলা একাডেমী, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইতিহাস পরিষদ, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ ইতিহাস একাডেমি, পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদ, ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি কংগ্রেসসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সংগঠনের সাথে জড়িত তিনি। ছাত্রজীবনে সমন্বয় সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংসদ বগুড়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক এবং কর্মজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় লেখক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তিনি।

সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরষ্কারও পেয়েছেন অনেক। ডক্টর আখন্দ বর্তমানে রাজশাহীতে বসবাস করছেন। শুভজন্মদিন মাহফুজুর রহমান আখন্দ ভাইয়া। আপনার জন্য প্রাণখোলা দুআ এবং শ্রদ্ধা জানাই।



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top