নৌপথে বাংলাদেশের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে ভারতের

রাজটাইমস ডেস্ক | প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০২২ ১৮:২০; আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩৬

ছবি: সংগৃহিত

বাংলাদেশের সাথে সম্প্রসারিত হচ্ছে ভারতের বাণিজ্য চুক্তি। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থল পথ ও জলপথ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে ভারত। ধীরে ধীরে বাংলাদেশের উপর ভারতের নির্ভরতাও বাড়ছে। খবর বণিক বার্তার।

ভারতের জাতীয় নৌপথের (এনডব্লিউ) মধ্যে সবচেয়ে বড় পথটি হলো গঙ্গা-ভাগীরথী ও হুগলি নদী হয়ে এলাহাবাদ থেকে হলদিয়া পর্যন্ত। প্রায় ১ হাজার ৬২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ পথকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় নৌপথ-১ হিসেবে ঘোষণা করে ভারত সরকার, যেটি উত্তর প্রদেশকে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করেছে। এরপর একে একে আরো পাঁচটি জাতীয় নৌপথ ঘোষণা করা হয়। এর চারটিই বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। তিনটি দিয়ে এরই মধ্যে দুই দেশের পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করছে। বাকি পথটি ব্যবহারেও আগামী মাসে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সঙ্গে জলকূটনীতিতে বিশেষ সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাম্পকার্ডের ভূমিকা পালন করতে পারে এ নৌপথগুলো।

ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরিটি অব ইন্ডিয়ার ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ছয়টি জাতীয় নৌপথ হলো—গঙ্গা নদী দিয়ে এলাহাবাদ থেকে হলদিয়া পর্যন্ত (১ হাজার ৬২০ কিলোমিটার), যেটিকে বলা হচ্ছে এনডব্লিউ-১। ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে সাদিয়া থেকে ধুবরি পর্যন্ত ৮৯১ কিলোমিটার পথটি এনডব্লিউ-২। কেরালা ব্যাকওয়াটারে ২০৫ কিলোমিটার এনডব্লিউ-৩ কোট্টাপুরম থেকে গিয়েছে কোল্লাম পর্যন্ত। এনডব্লিউ-৪ বা গোদাবারি নদী ও কৃষ্ণা খাল দিয়ে ওয়াজিরাবাদ পর্যন্ত যাওয়া পথটির দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার। পূর্ব উপকূলসহ ব্রাহ্মণী নদী ও মহানদী ব-দ্বীপ প্রণালি হয়ে ব্রাহ্মণী নদী থেকে মহানদী পর্যন্ত ৬২৩ কিলোমিটার পথটিকে বলা হয় এনডব্লিউ-৫। বরাক নদী-লখিপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এনডব্লিউ-৬ পথটি ১২১ কিলোমিটার।

এনডব্লিউ-১, এনডব্লিউ-২, এনডব্লিউ-৫ ও এনডব্লিউ-৬ নৌপথে পড়েছে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি নদী ও সমুদ্র জলসীমা। এর মধ্যে এনডব্লিউ-১ কলকাতা-হলদিয়া-মোংলা হয়ে আশুগঞ্জ-শেরপুর দিয়ে করিমগঞ্জ, এনডব্লিউ-২ কলকাতা থেকে খুলনা-মোংলা হয়ে চিলমারী নদী দিয়ে ধুবরি-পান্ডু-শিলঘাট, এনডব্লিউ-৫ কলকাতা থেকে মেঘনা ও কুশিয়ারা নদী দিয়ে আসাম এবং এনডব্লিউ-৬ কলকাতা থেকে মেঘনা হয়ে আসাম গিয়েছে। এ চারটির তিনটি নৌপথেই ট্রানজিট ও ফ্রেন্ডশিপ চুক্তিতে দুই দেশের পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল করছে। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ভারত কুশিয়ারা নদীও ব্যবহার করতে চাচ্ছে। আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে হওয়া বৈঠকে সেই নৌপথ ব্যবহার-সংক্রান্ত একটি চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে। দুই পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে চুক্তিটি স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশের চারটি রুটেই ভারতের যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করতে পারবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে যাওয়া চারটি নৌপথ পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারলে উত্তর প্রদেশ, বিহার, কলকাতা, উড়িষ্যা, আসাম, ত্রিপুরা, মণিপুর ও মিজোরামে সরাসরি পণ্য ও যাত্রীবাহী নৌযান চালাতে পারবে ভারত। এতে নতুন মোড় নেবে ভারতীয় বাণিজ্যে। পাশাপাশি বাংলাদেশও লাভবান হবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশের নৌপথে ভারতের নির্ভরশীলতা বাড়ার বিষয়টি অবশ্যই ইতিবাচক। এতে শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশও লাভবান হবে। দুই দেশেই বাণিজ্যের নতুন দুয়ার খুলে যাবে। তবে নৌ ট্রানজিট ব্যবহারে নৌপথ মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারতকেও অংশ নিতে হবে। তাহলেই ভারতের নির্ভরশীলতা থেকে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারবে।

নদী-অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, সড়ক ও রেলপথের তুলনায় নৌপথ সবসময়ই সাশ্রয়ী। সে হিসেবে ভারত-বাংলাদেশ নৌ ট্রানজিট দুই দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ এজাজ বণিক বার্তাকে বলেন, এ চারটি নৌ রুট বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি জলকূটনীতিতেও আপার হ্যান্ড দেবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের দেশপ্রেম থাকাটা জরুরি বলে মনে করি। তিনি আরো বলেন, নৌ রুটগুলো সম্পূর্ণভাবে চালু হতে পারলে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশই নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও বাণিজ্যিক জাহাজ চালানোর সুবিধা পাবে। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কৌশলী ভূমিকা পালন না করতে পারলে পিছিয়ে পড়তে হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক বণিক বার্তাকে বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য সহজ করার লক্ষ্যে আন্তঃদেশীয় নৌপথগুলো আমরা চালু করছি। সড়কপথ থেকে এটা অনেক সুবিধাজনক। এতে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানেও বাণিজ্য করতে পারবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ভারত-বাংলাদেশ নৌ-যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে পণ্য নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উভয় দেশই ১৯৭৪ সালে একমত হয়। ২০০০ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সচিব পর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনায় ভারতের পক্ষ থেকে ট্রানজিটের প্রস্তাব দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালে ভারতের তত্কালীন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী জয়রাম রমেশ বাংলাদেশ সফরকালে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রানজিটের ব্যাপারে জোর আবেদন জানান। তার এক বছর পর ২০০৮ সালে ঢাকায় নিযুক্ত ওই সময়ের ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ড. ইফতেখার আহমেদের সঙ্গে দেখা করে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার দাবি জানান। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। সফর শেষে দুই দেশের যৌথ ইশতেহারে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে দুই দেশের মধ্যে বহুমাত্রিক (নৌ, সড়ক ও রেল) ট্রানজিট চালুর ঘোষণা দেয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রাম ও মোংলা পোর্ট ব্যবহারের বিষয়ে ২০১৫ সালে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয় (এমওইউ)। এক বছর পর ২০১৬ সালের জুনে নদীপথে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রানজিট চালু হয় নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায়।

মূল খবরের লিঙ্ক



বিষয়:


বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস
এই বিভাগের জনপ্রিয় খবর
Top